তাপস চন্দ্র সরকার (কুমিল্লা) : “দ্বন্দ্বে কোনো আনন্দ নাই, আপস করো ভাই, লিগ্যাল এইড আছে পাশে, কোনো চিন্তা নাই’’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আইনগত সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কুমিল্লা জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির আয়োজনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৫ উদযাপিত হয়েছে।

আজ সোমবার ২৮ এপ্রিল, সকালে বর্ণাঢ্য র্যালী শেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মাহাবুবুর রহমান ।

তদুপলক্ষে সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মাহাবুবুর রহমান অন্যান্য অতিথিদের সাথে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে ও শান্তির প্রতীক কবুতর অবমুক্ত করে দিবসের কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে বর্ণাঢ্য র্যালিটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় আদালতে এসে শেষ হয়। র্যালি শেষে জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটি, কুমিল্লার আয়োজনে আদালত প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মাহাবুবুর রহমান এর সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র সহকারী জজ মনিকা খান ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ছিদ্দিক আজাদ এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- কুমিল্লার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-০১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) নাজমুল হক শ্যামল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা মতিন, অতিরিক্ত পুলিশসুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সহিদ উল্লাহ, কুমিল্লা বিজ্ঞ জেলা পিপি এডভোকেট মোঃ কাইমুল হক রিংকু, জেলা জিপি এডভোকেট মোঃ তারেক আব্দুল্লাহ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খন্দকার মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জজকোর্ট মসজিদের ইমাম হাফেজ মোঃ গোলাম মোস্তফা এবং গীতা পাঠ করেন এডভোকেট স্বপন কুমার দেব।
ওই অনুষ্ঠানে কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ ও এডভোকেট ফাহমিদা সুলতানা শিউলিকে লিগ্যাল এইড এর শ্রেষ্ঠ প্যানেল আইনজীবী হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কুমিল্লার বিশেষ জজ আদালতের স্পেশাল জজ (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) মোঃ মহসিনুল হক, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান (জেলা ও দায়রা জজ) হাবিবুর রহমান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সরওয়ার আলম, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাবরিনা নার্গিস, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাব্বির মাহমুদ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোছাঃ ফরিদা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন, সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিজ্ঞ পিপি এডভোকেট বদিউল আলম সুজন প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, বিজ্ঞ আইনজীবীগণ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কুমিল্লায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং বিচারপ্রার্থী সাধারণ জনগণ।
সভার সভাপতি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মাহাবুবুর রহমান উপস্থিত সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন- আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং মানবিক গরিব অসহায় ও অসমর্থ্য বিচার প্রার্থীদের নানা-বিধ নির্যাতন বিষয়ে রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সকলকে মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে দুঃস্থ্যদের আইনি সেবা প্রধানের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
আমাদের সকলের জন্যই আজকের এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজের একটি অংশ ন্যায় বিচারে প্রবেশাধিকার থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। তাই দেশে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগনকে সরকারী খরচে আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন-২০০০’ প্রনয়ন করা হয়।
২০১৩ সাল থেকে জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ২৮ এপ্রিল আইনগত সহায়তা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। প্রত্যেক জেলায় জেলায় লিগ্যাল এইড অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
লিগ্যাল এইড অফিসকে আরও কার্যকর, গতিশীল ও সেবা বান্ধব করার জন্য নিমিত্তে জেলায় জেলায় একটি করে লিগ্যাল এইড অফিসারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং একজন সহকারী জজ পদমর্যাদার বিচারককে উক্ত পদে পদায়ন করা হয়েছে।
আমি আশাকরছি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দরিদ্র বান্ধব, সমতা ভিত্তিক ও সহযোগিতামূলক একটি দক্ষ কার্যকর ও আধুনিক লিগ্যাল এইড সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার এফ এম শেফায়েত ছালাম বলেন- কুমিল্লা জেলা লিগ্যাল এইড অফিস এর মাধ্যমে গেলো বছর মে হতে চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত বিচারপ্রার্থী ৫৯৯ জন নারী ও ৬৯ জন পুরুষ পরামর্শ গ্রহণ করেছেন এবং ৩১৭টি বিরোধ বিকল্প বিরোধ পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৪১,৭৮,৩৫০ টাকা আদায় করা হয়েছে এবং ৭১৯টি মামলা সরকারী খরচে পরিচালনার জন্য আবেদন গ্রহণ করে বিজ্ঞ প্যানেল আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে।