!! মন্তব্য প্রতিবেদন   !! ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বয়স !! 

Uncategorized জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক  : ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বয়স নিয়ে অনেকেরই চিন্তার শেষ নেই, আছে বেধড়ক ব্যঙ্গবিদ্রুপ, আছে ঠাট্টা-তামাশা। বর্তমান সভাপতি রাকিবুল ইসলামের বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষাবর্ষ ২০০৬-০৭, যদিও তার উচ্চমাধ্যমিক ২০০৫-এ। সাধারণ সম্পাদক নাছিরউদ্দিনের শিক্ষাবর্ষ ২০০৭-০৮, যদিও তার উচ্চমাধ্যমিক ২০০৬-এ। সে-হিশেবে রাকিবের বয়স হওয়ার কথা আটত্রিশ বা ঊনচল্লিশ, নাছিরের আটত্রিশ বা সাঁইত্রিশ।


বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকিব-নাছিরদের ভর্তি হওয়ার সময়ে যাদের জন্ম হয়েছিল, তারাও এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এবং রাজনীতি করে। ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন ইউনিটের ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বয়সও একই ধাঁচের— সামান্য উনিশ-বিশ— দু’এক বছরের ছোট-বড়।


বিজ্ঞাপন

২০২০-এ ‘একাত্তর’ নামে একটা ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেয়েছিল, দেখা শুরু করেছি। নুসরাত ইমরোজ তিশা তাতে অভিনয় করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী চরিত্রে। তিশা (ভিকারুননিসা স্কুল থেকে) মাধ্যমিক পাশ করেছেন ২০০৪-এ, আমিও চারে। আমার বয়স সাঁইত্রিশ।


বিজ্ঞাপন

কিন্তু ভিকারুননিসার ছাত্রীদের বয়স অন্যান্য স্কুলের সমসাময়িক ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে দুই-তিন বছর বেশি হয়ে থাকে; কারণ, ভিকারুননিসায় পড়ানোর জন্য অনেক অভিভাবক কন্যাকে একই ক্লাসে একাধিকবার ভর্তিপরীক্ষা দিইয়ে থাকেন, ঢাকার অনেক স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা আবার ওয়ানে ওঠার আগেই কিন্ডারগার্টেনে দুই-তিন বছরের স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে থাকে।


বিজ্ঞাপন

আমার চেয়ে তিন বছরের বড় হলে তিশার বর্তমান বয়স এখন চল্লিশ। কিন্তু উইকিপিডিয়ায় তিশার জন্মসাল লেখা ১৯৮২, আবার আইএমডিবিতে ১৯৮৩। জন্মসাল ১৯৮৩ হলে তিশার বয়স এখন বিয়াল্লিশ।

২০২০-এ তিশার বয়স ছিল সাঁইত্রিশ বা আটত্রিশ। সাঁইত্রিশ-আটত্রিশের তিশা যদি ওয়েব সিরিজে ছাত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করতে পারেন, তা হলে একই বয়সে রাকিব-নাছির কেন ছাত্রের ভূমিকায় অভিনয় করতে পারবে না, এ নিয়ে চিন্তাভাবনার যথেষ্ট অবকাশ আছে। ছাত্রীর ভূমিকায় তিশা ‘অভিনয়’ করেছেন, ছাত্রের ভূমিকায় রাকিব-নাছিরও ‘অভিনয়’ই করে যাচ্ছে।

তিশা অভিনয় করেছেন ক্যামেরার ‘সামনে’; রাকিব-নাছিরদেরকে অভিনয় করতে হয় ক্যামেরার সামনেও, পেছনেও, ঘুমের ঘোরেও। অবশ্য, রাজনীতির প্রায় পুরোটাই অভিনয়। রাজপথের অভিনয়ে যিনি যত পাকা, রাজনীতিতে তিনি তত সফল। তিশার জীবনসঙ্গীও একজন সুদক্ষ অভিনেতা।

আওয়ামি লিগের আমলে তিনি মুজিবপ্রেমী সেজে তৎকালীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের সবার সাথে স্বালোকচিত্র-সমেত বেমালুম মিশে ছিলেন, আওয়ামি লিগের গণপলায়নের পর প্রিন্স মাহমুদের ‘মিশ্রিত লগ্ন মাধুরী’র মতো ‘মিশ্রিত নগ্ন ফারুকী’ হয়ে তিনি মিশে গেছেন ইউনুসের ‘জলে ভেজা কবিতা’য়, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিএনপির সাথেও মিশে যাবেন অন্য কোনো তরিকায় অন্য কোনো ফর্মুলায় অন্য কোনো সিলসিলায়, কোনো এক শনিবার সকালে, বিকেলে বা সন্ধ্যায়।

ছাত্রদলের আরেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৮৮-৮৯ সেশনে। আমার জন্ম ১৯৮৮ সালে, মাস্টার্স ২০১২ সালে। আর টুকু ছাত্রদলের সভাপতি পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন ২০১২ সালে। তিনি ২০০৮-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিশেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। টুকু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন যে-বছর, সেই বছরে জন্ম-নেওয়া প্রজন্ম মাস্টার্স পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার বছর টুকু ছাত্রদলের পদ ছেড়েছেন।

অন্যরা ছাত্ররাজনীতি ছেড়ে জাতীয় রাজনীতিতে যায়, টুকু জাতীয় রাজনীতি ছেড়ে, ছাত্রদলের সভাপতি হয়ে, আবার জাতীয় রাজনীতিতে গেছেন। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে টুকু এক বিপন্ন বিস্ময়। চুয়াল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন এই বর্ষীয়ান ছাত্রনেতা।

এ মোতাবেক রাকিব-নাছির জুটি লেশমাত্র দ্বিধা ছাড়া আরও অর্ধযুগ ছাত্রদলের শীর্ষপদে থাকতে পারবে। জ্ঞানীগুণীরা বলেই গেছেন, দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষার শেষ নেই। ফলে, ছাত্রজীবনেরও সীমা-পরিসীমা নেই।

পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে এলে শামসুজ্জামান দুদু বা রুহুল কবীর রিজভিও হয়তো ছাত্রদলে ফিরে আসবেন। ওদিকে রাকিব-নাছির-টুকু-তিশা পরিষদের কথা ভেবেই বিক্রমপুরের কবি সুনির্মল বসু আটানব্বই বছর আগে, ১৯২৭ সালে, লিখেছিলেন,

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র;
নানানভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবা-রাত্র।
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায় পাঠ্য যেসব পাতায়-পাতায়;
শিখছি সেসব কৌতূহলে, নেই দ্বিধা লেশমাত্র।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *