চাটখিলের সাবেক বিএনপি আহ্বায়ক হানিফ এর বিরুদ্ধে  আওয়ামী নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক  : গত বছরের ৫ই অগাস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা–কর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় অথবা আত্মগোপনে চলে যায়। একই সময়ে সারাদেশে অবৈধ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান–মেম্বাররা একে একে গা ঢাকা দেয়। কিন্তু নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলায় ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখানকার নয়টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দোসর অবৈধ চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা এখনো বহাল তবিয়তে থেকে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

 

শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনে সমালোচনা : 
সম্প্রতি ১৫ অগাস্ট নোয়াখলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মানিক এবং মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহালুলের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ পতনের পরও এ ধরনের প্রকাশ্যে কোন কর্মসূচি আয়োজনের পেছনে চাটখিল উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. হানিফের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র সমালোচনা এবং ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় চেয়ারম্যানদের বহাল তবিয়তে কার্যক্রম :  স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রামনারায়নপুর ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বাহার তাঁর বোর্ড অফিস চালু রেখেছেন। পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছেন। শুধু হারুন নয়, অন্যান্য চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাও প্রকাশ্যে কার্যক্রমে সক্রিয় রেখেছেন। অভিযোগ রয়েছে , এদের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন বিএনপিরই সাবেক আহ্বায়ক হানিফ।


বিজ্ঞাপন

দীর্ঘদিনের আঁতাতের অভিযোগ :  বিএনপির অনেক কর্মীর দাবি, গত ১৭ বছর ধরে হানিফ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন। আন্দোলন–সংগ্রামের কঠিন সময়ে তিনি মাঠে ছিলেন না; বরং বেশিরভাগ সময় জেলা শহর মাইজদীতে অবস্থান করেছেন। মাঝে মাঝে চাটখিলে এলে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক উপজেলা সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জাহাঙ্গীরের বাসায় অবস্থান করতেন। তাদের ছত্রছায়ায় নিজেকে নিরাপদ রাখতেন।


বিজ্ঞাপন

২০১৬ সালের নির্বাচন বিতর্ক :  ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে চাটখিল বদলকোট ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হন হানিফ। কিন্তু অভিযোগ আছে, পানি জাহাঙ্গীরের মধ্যস্থতায় কুমিল্লার মিয়ামী হোটেলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোলাইমান শেখের পক্ষে সরে দাঁড়ান। এতে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা গভীর হতাশায় মধ্যে পড়ে যায়। তারা মনে করেন, টাকার লোভে হানিফ দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

৫ আগস্টের পর নতুন চিত্র :  হাসিনা সরকারের পতনের পর চাটখিলে আবারও হানিফ আলোচনায় আসেন। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, জাকির হোসেন জাহাঙ্গীরের অনুরোধে এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি স্থানীয় আওয়ামী চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিতে থাকেন। ছাত্র–জনতার প্রতিরোধে চেয়ারম্যান–মেম্বাররা পালিয়ে গেলে হানিফ নাকি ফোনে বিএনপি কর্মীদের হুমকি দেন, যাতে তারা বোর্ড অফিসের তালা খুলে দেয় এবং কোনো বাধা সৃষ্টি না করে।

অবৈধ অর্থ উপার্জনের :  অভিযোগ আছে, হানিফ এখন উপজেলা আহ্বায়ক পদ ভেঙে বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জনের ফন্দি আঁটছেন। স্থানীয় কর্মীরা বলছেন, তিনি চাঁদাবাজির ভাগ, থাইল্যান্ডী জুয়ার ভাগসহ নানা অবৈধ পথে টাকা কামাচ্ছেন। বিষয়গুলো নিয়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের কাছেও একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

কর্মীদের ক্ষোভ ও হতাশা : দলের এক নির্যাতিত কর্মী বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে মামলা–মোকদ্দমা সংক্রান্ত কাজে দলীয় উকিল হিসেবে হানিফের কাছে গেলে সহযোগিতার বদলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হতো। আমরা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।” তার মতে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে তিনি দলের অগণিত কর্মীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছেন।

যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ :  এসব অভিযোগ সম্পর্কে অ্যাডভোকেট হানিফের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *