মোঃ হাবিবুর রহমান, (আখাউড়া) : আদা ভেষজ ঔষধিগুণে ভরপুর ও মসলাজাতীয় একটি ফসল। রন্ধনশালায় নানা খাবারে স্বাদ বাড়াতে এর যেন জুড়ি নেই।

এরইমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বস্তায় আদা চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করে বেশ সফলতার মুখ দেখছেন মো: বিল্লাল ভূঁইয়া নামে এক উদ্যোক্তা। তিনি মোগড়া এলাকায় বাসিন্দা। শখের বশে বাড়ি সংলগ্ন জায়গাতে বস্তায় আদা চারা রোপণ করে ভালো ফলন হওয়ায় তিনি এ সফলতা দেখছেন।
বিল্লাল ভূঁইয়ার মা তাসলিমা বেগম বলেন, গত বছর শখের বশে বাড়ির আঙ্গিনায় ৭টি বস্তায় আদা আবাদ করি। এতে ভালো ফলন পেয়েছি। এতে আমার উৎসাহ কয়েকগুন বেড়ে যায়। এরপর আমার ছেলে উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে। কৃষি অফিসের সার্বিক সহায়তায় এ মৌসুমে সাড়ে ১৫ শতাংশ জমিতে ১০০০ বস্তায় আদা চাষ করি। এরমধ্যে আমার রয়েছে ৫০০ বস্তা। বাকী ৫০০ বস্তা কৃষি অফিস দিয়েছে। সেইসাথে সার ঔষধ সহ অন্যান্য উপকরণ সহায়তা হিসাবে দিয়েছে। এ চাষ করতে মোট ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে বাগানের অবস্থা খুবই ভালো।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। গত বছরের চাইতে এবার ৪ হেক্টর জমিতে বেশী চাষ হয়েছে। বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বিশেষ করে ছায়াযুক্ত পরিত্যক্ত জায়গাতে এই পদ্ধতিতে চাষ করা যায়।

এদিকে সরেজমিনে বাগানে গিয়ে দেখা যায় রাস্তা সংলগ্ন জায়গায় ও বাড়ির আঙ্গিনায় সারি সারি বস্তায় লাগানো আছে আদা। আদা গাছগুলোও বেশ সুন্দর পাতার রং আর সতেজতা দেখেই যে কেউ বুঝতে পারবে যে এ বাগানে ভালো ফলন হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: সুজন ভূঁইয়া বলেন, বিল্লাল যখন বস্তার মধ্যে আদা চাষ শুরু করে তখন ভেবেছিলাম এভাবে আদা হয় কি না। খালি জায়গাতে পরিশ্রম করছে। কিন্তু এখন দেখছি আমার ধারনা ভূল ছিল। আদা অনেক ভালো হয়েছে। এখন আমিও জমিতে আদা চাষ করার চিন্তা করছি।
কৃষক মো: আলাউদ্দিন বলেন, আমি আগে মাটির নিচে আদা চাষ করতাম। কিন্তু ফলন ভালো না হওয়ায় চাষ করা বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু বস্তায় আদার ফলন দেখে এ চাষ করতে আমার উৎসাহ বেড়েছে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মাসুদ রানা বলেন , এ উপজেলায় প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। বস্তায় আদা চাষে কম খরচে লাভ বেশী হওয়ায় অনেকেই এ চাষে ঝুঁকছেন। ‘বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। আবার অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই।
একটি ফসল তোলার পর আলাদা করে সার ছাড়াই আরেকটি ফসল ফলানো যায়। বস্তায় চারা রোপনের পর ৮ মাসের মাথায় ফলন পাওয়া যায়।
এ চাষ করতে কৃষককে বস্তা সার, ঔষধসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে। ফলন ভালো রাখতে মাঠ কর্মীরা প্রতিনিয়ত বাগান পরিদর্শন করছে।