নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ মদদে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ১১ জন দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী চাকরি না করেই ব্যাকডেট দেখিয়ে অবৈধভাবে সোয়া তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আদালতের স্থগিতাদেশের মধ্যেই এই অর্থ উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে, যা নজিরবিহীন অনিয়ম হিসেবে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় তুলেছে।বিষয় টা রীতিমতো টক অব দ্যা সিটিতে পরিনত হয়েছে।

বিধি ভঙ্গ করে পদোন্নতি : সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী নবম গ্রেডে যোগদানকারীর পদোন্নতির বিধান থাকলেও, ষষ্ঠ গ্রেডে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য এমন সুযোগ নেই। কিন্তু গণপূর্তের এই ১১ জন ষষ্ঠ গ্রেডে নিয়োগ পেয়েও নিয়ম ভেঙে নির্বাহী প্রকৌশলী (৫ম গ্রেড) পদে উন্নীত হয়েছেন। বাস্তবে তাদের এখনো উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী থাকার কথা ছিল।
সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শেখ পরিবারের ছত্রছায়ায় অবৈধ ক্ষমতার দাপট : এই অবৈধ নিয়োগ ও পদোন্নতির পেছনে সক্রিয় ছিলেন সাবেক পূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূঁইয়া, রফিকুল ইসলাম এবং শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য শেখ সেলিম ও শেখ হেলাল। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনা নিজেও সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন।

এরা শুধু আওয়ামী ক্যাডারই নন, বরং জুলাই আন্দোলনের বিপরীতে যুবলীগ-ছাত্রলীগকে অর্থ সহায়তা করেছেন। সমীরণ মিস্ত্রি ও জাহাঙ্গীর আলমের মতো প্রকৌশলীরা হত্যাকাণ্ডের অর্থদাতা হিসেবেও মামলার আসামি। তবুও তারা আজও পুরোদমে ক্ষমতা দেখিয়ে প্রাইজ পোস্টিং দখল করছেন—প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতারের সক্রিয় সহযোগিতায়।

আদালতের আদেশ অমান্য : রিটকারী ১৭ জন কর্মকর্তার পদ সংরক্ষণ করতে আদালতের নির্দেশ থাকলেও, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় তা উপেক্ষা করে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের বিসিএস কর্মকর্তাদের ঊর্ধ্বে জ্যেষ্ঠতা দিয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর বিসিএস কর্মকর্তারা প্রধান প্রকৌশলীর কাছে গ্রেডেশন সংশোধনের দাবি জানালেও শামীম আখতার স্বৈরাচারের দোসরদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।
বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন—এটি শুধু আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি নয়, বরং অনৈতিক সুবিধা দেয়ার সুস্পষ্ট কৌশল।
বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া : একজন জনপ্রশাসন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন—“এ পদোন্নতি কোনোভাবেই বিধিসম্মত হয়নি। নিশ্চয়ই এর পেছনে বড় কোনো শক্তির ইন্ধন ছিল। অন্যথায় এমন ভয়াবহ বিধিভঙ্গ সম্ভব নয়।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আদালতের স্থগিতাদেশের মধ্যে চাকরি না করেও অর্থ তোলা ফ্যাসিবাদী সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রমাণ। দুদককে দ্রুত তদন্ত করে আত্মসাৎকৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
মোটা অংকের অবৈধ অর্থের বিনিময়ে ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য হয়ে শরাব শাবাব ও কাবাব নিয়ে ব্যাস্ত : গণপূর্তের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর মোটা অংকের অবৈধ অর্থ চাঁদা দিয়ে ঢাকা বোট ক্লাবের মেম্বার হয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। সেখানে উঠতি মডেল ও চলচ্চিত্র নায়িকা ছাড়াও অনেক আবেদনময়ী নারীদের নরম দেহের গরম ভাজে ঢুব- সাঁতার কেটে শরাব, শাবাব ও কাবাব নিয়ে আয়েসি সময় কাটান বলে একাধিক সূত্র দাবী করেছে। এছাড়াও ওই সময় তিনি নিজেকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলার মতো জমজমাট ও কল্পনাতীত রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ও অর্জন করেন বলে তার একান্ত আস্থাভাজন লোকজনের মুখের ভাষা। রাজশাহীতে পোস্টিং হলেও তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন দীর্ঘ সময়। কারণ ঢাকার অবাধ বিচরণ আর অবৈধ উপার্জন কোনটির সুযোগ মিলেনা রাজশাহীতে।
উপদেষ্টার আস্থাভাজন লোকজনের বাসায় ধর্ণা দিয়ে ঢাকায় পোস্টিং : এছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান এর মামা পরিচয় দানকারী এক দালালের মাধ্যমে ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ঢাকায় ওয়ার্কিং ডিভিশনে পোস্টিং বাগিয়ে নেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে সফল হন প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর। এজন্য তিনি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার আস্থাভাজন লোকজনের বাসায় ধর্ণা দিয়ে এখনও চেষ্টা অব্যাহত রেখে বদলি হয়ে ঢাকায় ফিরেন। তিনি বর্তমানে কর্মরত (রিজার্ভ) সংযুক্ত হিসেবে গণপূর্ত ই/এম কাঠের কারখানা বিভাগ, ঢাকা।
দ্বৈত বেতনের কেলেঙ্কারি : এদিকে, মো. জাহাঙ্গীর আলম একই সময়ে গণপূর্ত থেকে বেতন নেয়ার পাশাপাশি বিআইডাব্লিউটিএ থেকেও বেতন তোলেন—এর প্রমাণ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে একসাথে দুটি প্রতিষ্ঠানের বেতন গ্রহণ করতে পারেন?