নমুনা পরীক্ষা বাড়ছে

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন স্বাস্থ্য

সাত মাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত, মৃত্যুও বেড়েছে

 

বিশেষ প্রতিবেদক : করোনা সংক্রমণ ফের লাগাম মানছে না। ঊর্ধ্বমুখী মৃত্যুর হার। নমুনা পরীক্ষারও হারও বাড়ছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হার, মৃত্যুর হার এবং নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ার কারণ একটাই- স্বাস্থ্যবিধি না মানা। আবার কিছুটা হলেও দেশে ইউকে ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব রয়েছে। এমনটাই মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
মহামারি করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩০ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ হাজার ৭২০ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৮০৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা গত বছরের ২০ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮৭ জনে। ৭ জানুয়ারির পর গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হলো।
করোনাভাইরাস নিয়ে সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ১ হাজার ৭৫৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ২৪ হাজার ১৫৯ জন।
এর আগে রোববার দেশে আরও ২ হাজার ১৭২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান ২২ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঝে সংক্রমণের হার ও নমুনা পরীক্ষা হার কমেছিল। কমে এসেছিল হাসপাতালসহ বুথের সামনের লাইনও। কিন্তু রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে আবারও নমুনা পরীক্ষার লাইন দীর্ঘ হচ্ছে।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিন দেখা যায়, নমুনা দিতে এসেছেন অসংখ্য মানুষ। লাইনে দাঁড়ানো একজন মন্তব্য করেন, এ তো দেখি টিসিবির লাইন।
নমুনা দিতে আসা মানুষদের মধ্যে আগের মতোই পুরুষের সংখ্যা বেশি। তবে আগে যেমন বৃদ্ধদের দেখা যেত বেশি, সেখানে এখন তরুণদের আধিক্য। অধিকাংশের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
নমুনা সংগ্রহ বেড়েছে জানিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা জানালেন, তিন থেকে চার মাসের মধ্যেও এত নমুনা দিতে আসেনি মানুষ।
ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘নতুন এই স্ট্রেইন খুবই ভয়ংকর, খুবই সংক্রামক। এক কথায় খুবই বিপজ্জনক।’
দেশে এখন ২১৯টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। এরমধ্যে আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ১১৮টি পরীক্ষাগারে। জিন-এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ২৯টি পরীক্ষাগারে এবং র‌্যাপিড অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ৭২টি পরীক্ষাগারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৮০৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা গত বছরের ২০ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮৭ জনে। ৭ জানুয়ারির পর গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হলো। এর আগে রোববার দেশে আরও ২ হাজার ১৭২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান ২২ জন।
গত সপ্তাহে মারা গিয়েছিলেন ৭৬ জন। চলতি সপ্তাহে ১৪১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, মৃত্যুর পাশাপাশি গত সপ্তাহের তুলনায় নমুনা পরীক্ষা, শনাক্তের হার এবং সুস্থতার হারও বেড়েছে।
গত সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৩২টি। চলতি সপ্তাহে এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৬টি। নমুনা পরীক্ষার হার বেড়েছে ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৫১২ জন। চলতি সপ্তাহে ১২ হাজার ৪৭০ জন। শনাক্তের হার বেড়েছে ৯১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, সোমবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১২ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার ৯০৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭ লাখ ২৭ হাজার ৪২৮ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৭৮ হাজার ৪৬৩ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৭৬৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৪ জনের।
আক্রান্তে ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ১ কোটি ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ২৩৩ জন এবং মারা গেছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ১১৫ জন।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় ১ কোটি ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৭১৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৩ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ লাখ ৬ হাজার ৮৬৯ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯৫ হাজার ৩০ জন।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসাবে যুক্তরাজ্য রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪২ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ২৬ হাজার ১৫৫ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় ফ্রান্স ষষ্ঠ, ইতালি সপ্তম, স্পেন অষ্টম, তুরস্ক নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।


বিজ্ঞাপন