তিন লাখ ছাড়িয়েছে যক্ষ্মা রোগী

স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২৪ মার্চ ছিলো বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। যক্ষ্মা রোগের ক্ষতিকর দিক বিশেষ করে স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই মহামারীর নির্মূলে দিবসটি পালিত হয়। যক্ষ্মা দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সময় বয়ে যাচ্ছে’ বা ‘দ্য ক্লক ইজ টিকিং’। এক সময় বহুল প্রচলিত প্রবাদ ছিল ‘যার হয় যক্ষ্মা, তার নেই রক্ষা’। সময়ের পরিক্রমায় আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে যক্ষ্মা চিকিৎসায় কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে চিকিৎসা নিয়ে অনেক মুমূর্ষু রোগীও দেদারছে সুস্থ হচ্ছে।
বায়ুবাহিত রোগ যক্ষ্মা (টিবি) হাঁচি-কাশির মতো ড্রপলেট পেলেই ছড়িয়ে পড়ে। অনেকটা করোনার মতো। অতিমারি করোনার মধ্যে দেশে ২০২০ সালে নতুন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৪০ জন।
বর্তমানে এটি কমে প্রতি লাখে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা নিরাময়ের হার গত ১০ বছরে ৯৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত এক বছরে উপসর্গ আছে এমন ২৭ লাখ লোকের পরীক্ষা করা হয়েছে।
এছাড়া সরকারি ব্যবস্থাপনায় গত দশকে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে একদিনের জন্যও যক্ষ্মা শনাক্তকরণ ও রোগীর চিকিৎসা দেওয়া বন্ধ হয়নি। যক্ষ্মাবিষয়ক যৌথ পর্যবেক্ষণ মিশনের একাধিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শিশুদের যক্ষ্মা ঠিকমতো শনাক্ত হচ্ছে না। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে যাওয়া রোগী জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। যক্ষ্মা পরীক্ষাগার বা ল্যাবরেটরিগুলো থেকে মানুষ কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না।
এসব সমস্যার কথা ২০১৯ সালের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা আছে। এর আগে ২০১০ ও ২০১৬ সালের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনেও এই সমস্যাগুলোর কথা বলা হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের জন্য বিশ্বনেতারা কিছু বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০৩৫ সালের মধ্যে সেসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করার কথা। কিন্তু সময় আছে অল্প।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও জাতীয়ভাবে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালন করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবারের যক্ষ্মা দিবসের প্রতিপাদ্যে কিছু পরিবর্তন এনেছে। তারা দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার’।
ফুসফুসের যক্ষ্মার লক্ষণ : তিন সপ্তাহের অধিক সময় ধরে কাশি (শুকনো/কফ যুক্ত) অন্যতম লক্ষণ। কাশির সঙ্গে রক্ত যেতেও পারে না-ও যেতে পারে, বুকে ব্যথা হওয়া, অস্বাভাবিকভাবে ওজন হ্রাস পাওয়া, অবসাদ অনুভব করা, সন্ধ্যায় হালকা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর (৯৯-১০১ ডিগ্রি) থাকতেও পারে/না-ও থাকতে পারে, অতিরিক্ত ঘাম, ক্ষুধা মন্দা।
কারা বেশি ঝুঁকিতে: যক্ষ্মা রোগীর কাছাকাছি থাকেন এমন লোকজন যেমন, পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক, নার্স বা সেবাকারীর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মাদকাসক্তি, বার্ধক্য, অপুষ্টি ইত্যাদি ক্ষেত্রে যক্ষ্মার ঝুঁকি থাকে। আবার যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম-যেমন, এইডস রোগী, দীর্ঘমেয়াদে স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধসেবী মানুষের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রোগী যেমন বাতাসে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায়, তেমনি এমডিআর বা এক্সডিআর যক্ষ্মার রোগী সরাসরি এমডিআর বা এক্সডিআর যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায়।
যক্ষ্মা প্রতিরোধে জন্মের পরপর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া। ফুসফুসের যক্ষ্মা ছোঁয়াচে। কেবল স্পর্শে এই রোগ ছড়াই না। এই রোগ ছড়াই হাঁচি, কাশি আর কফের মাধ্যমে। তাই রাস্তাঘাটে হাঁচি-কাশির বেগ এলে মুখে রুমাল চাপা দেওয়া উচিত। যত্রতত্র কফ ফেলা উচিত নয়।
শিশুর যক্ষ্মা পরিস্থিতি: প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে শিশুদের যক্ষ্মা ঠিকভাবে শনাক্ত হচ্ছে না। দেশের জনসংখ্যা ও যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব ধরে শিশুদের আক্রান্তের একটি প্রাক্কলন করা হয়। এই প্রাক্কলনের তুলনায় মাত্র ৬ শতাংশ শিশুর যক্ষ্মা শনাক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ পাঁচ বছরের কম বয়সী ৯৪ শতাংশ (প্রাক্কলনের) শিশুর যক্ষ্মা শনাক্ত হচ্ছে না। শিশুদের যক্ষ্মা অনুসন্ধানের ব্যাপারে জোর দিতে বলেছে মিশন।
যক্ষ্মা ও বাংলাদেশ : যক্ষ্মার ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৮৮২ সালে ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইক্রোব্যাটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস আবিষ্কার করেন। যক্ষ্মা বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের উচ্চ যক্ষ্মা-প্রবণ ৩০টি দেশে ৮৭ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী রয়েছে। তন্মধ্যে শীর্ষ যক্ষ্মা আক্রান্ত আটটি দেশে মোট যক্ষ্মা রোগীর দুই তৃতীয়াংশ রোগী রয়েছে। এ আটটি দেশ হলো-ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা।


বিজ্ঞাপন