শনাক্ত-মৃত্যু আরও বাড়ার আশঙ্কা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

শনাক্তের রেকর্ড, মৃত্যু ১০৪

 

বিশেষ প্রতিবেদক : পুরো দেশজুড়ে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ ও লকডাউনে সংক্রমণে গতি কমবে জানিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ও মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, শনাক্তের হারে আমরা কখনও শূন্যে নামতে পারিনি।
লকডাউন যথেষ্ট নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংক্রমণের উৎস কমাতে হবে। রোগী ম্যানেজমেন্টও জরুরি। রোগীদের শনাক্ত করে তাদের আইসোলেশন, ও সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিনে নেওয়া খুব দরকার। টিকা আসলে টিকা নিতেই হবে সবাইকে। এরপরও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। টিকায় মৃত্যু কমলেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়।
জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস বলেন, সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কমতে আরও সময় লাগবে। ঈদের সময়ও বাড়ি যাবে মানুষ। আবার লকডাউনের সংবাদে বিভিন্ন স্থানে যেভাবে ভিড় দেখা গেছে তাতে আগামী কয়েকদিন সংক্রমণ আরও বাড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি দ্রুত মোকাবিলা করাটা বেশ কঠিন হবে। মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বড় উপায়। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগী ও তার সংস্পর্শে এসেছে যারা তাদের ট্রেসিং করে কোয়ারেন্টিন করা।
এ দিকে করোনা সংক্রমণ ইস্যু নিয়ে সরকারের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। লকডাউন-শাটডাউনসহ বার বার প্রজ্ঞাপন পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সরকারের ভেতরে আমি অস্থিরতা লক্ষ্য করছি। গত কয়েকদিনে লকডাউন- শাটডাউন নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি এবং তা ঘনঘন সংশোধন। কয়েকঘণ্টার মধ্যে অদলবদল করা। এসব বক্তব্য বিবৃতির মধ্য দিয়ে অস্থিরতাই প্রকাশ পাচ্ছে।
সোমবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ সময় করোনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতারও অভিযোগ তোলেন সাবেক এ মন্ত্রী। টিকার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে জাসদ সভাপতি বলেন, সর্বোচ্চ টিকা কূটনীতি প্রয়োগ করে টিকা সংগ্রহ করতে হবে। দেশের ভেতরে টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। ২০২২ সালের মধ্যে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমি মনে করি টিকাই মানুষকে বাঁচাবে।
ইনু আরও বলেন, প্রজ্ঞাপনে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে এটা বাঞ্ছনীয় নয়। একই সঙ্গে আমি যতটুকু জানি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যসহ ৯টি মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত। এই মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতাও লক্ষণীয়।
অন্যদিকে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১০০ জনের ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন আরও ১০৪ জন। রোববার ১১৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর।
আজ মৃত্যু কমলেও শনাক্ত বেড়েছে রোববারের তুলনায় প্রায় তিন হাজারের বেশি।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছেন আট হাজার ৩৬৪ জন। রোববার এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ২৬৮ জন। এর আগে গত ৭ এপ্রিল ছিল শনাক্তে সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৬২৬ জন। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ থেকে বাংলাদেশ এখনও বহুদূরে। চলমান লকডাউনে সংক্রমণের গতি নি¤œমুখী হতে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। এদিকে, লকডাউনের খবরে আবারও ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার হিড়িক লেগেছে। কাঁচাবাজারে বেড়েছে ভিড়। এমনকি কোরবানির ঈদের অগ্রিম কেনাকাটা করতেও শপিংমলগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। এতে শনাক্ত ও মৃত্যু আরও বাড়বে বলে জানান তারা।
সরকার ২৮ জুন ভোর থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সীমিত পরিসরে লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে- পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সকল গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সকল শপিং মল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৩৬ হাজার ৭৮৩টি, আর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৯টি। দেশে এখনও পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৪০টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ৪৭ লাখ ৭৪ হাজার ৮৮৬টি, আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৪টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১০৪ জনকে নিয়ে দেশে সরকারি হিসেবে করোনাতে মোট মারা গেছেন ১৪ হাজার ২৭৬ জন, আর ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া আট হাজার ৩৬৪ জনকে নিয়ে মোট শনাক্ত হয়েছেন আট লাখ ৯৬ হাজার ৭৭০ জন।
এর আগে গত ৭ এপ্রিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে সাত হাজার ৬২৬ জন রোগী একদিনে শনাক্ত হন। সে হিসাবে গত আড়াই মাসের মধ্যে আজ সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হলো।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ, আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ০৬ শতাংশ, আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৫৯ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১০৪ জনের মধ্যে পুরুষ মারা গেছেন ৬৮ জন ও নারী মারা গেছেন ৩৬ জন। দেশে এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুরুষ মারা গেছেন ১০ হাজার ১৮৬ জন, আর নারী মারা গেছেন চার হাজার ৯০ জন।
২৪ ঘণ্টায় মৃত ১০৪ জনের মধ্যে বয়স বিবেচনায় ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ৫৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আছেন ২৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে আছেন ১৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে চার জন, আর ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে আছেন ৫ জন। তাদের মধ্যে বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে ঢাকা বিভাগের আছেন ২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৯ জন, রাজশাহী বিভাগের ৭ জন, খুলনা বিভাগের ৩৫ জন, বরিশাল বিভাগের ২ জন, রংপুর বিভাগের ৯ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৫ জন।
মারা যাওয়া ১০৪ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ৮২ জন, বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ১৫ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন ৭ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়া তিন হাজার ৫৭০ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন এক হাজার ৯৬৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫২৫ জন, রংপুর বিভাগে ৯৯ জন, খুলনা বিভাগে ৩৬৩ জন, বরিশাল বিভাগে ৫৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৭০ জন, সিলেট বিভাগে ১০৯ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের আছেন ৮৬ জন।


বিজ্ঞাপন