ঢাকা ওয়াসায় আউটসোর্সড্ বিলিং সহকারিদের দৌরাত্ম

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা ওয়াসার ১১টি রাজস্ব জোনে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পরিদর্শক নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউট সোর্সিং প্রক্রিয়ায় লোকবল নিয়োগ দিয়ে রাজস্ব আদায়ের মত একটি গুরুত্বপূর্ন কাজ করানো হচ্ছে। তাদের পদমর্যাদা দেয়া হয়েছে বিলিং সহকারী। ১১টি জোনে এখন রাজস্ব পরিদর্শকদের তুলনায় বিলিং সহকারীদের সংখ্যা কয়েকগুণ। অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত অযোগ্য,অদক্ষ বিলিং সহকারিরের দাপটে স্থায়ী রাজস্ব পরিদর্শকরাও অসহায় বলে জানাগেছে। গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব সাইটগুলো বিলিং সহকারীদের দখলে। রাজস্ব কর্মকর্তাদের নেক নজরে থাকায় কোন কোন বিলিং সহকারী একাধিক সাইট পরিচালনা করেন। অথচ রাজস্ব পরিদর্শকরা বেকার বসে আছেন। রাজস্ব জোন-৩ এর ডিসিআরও জাকির হোসেন প্রধানিয়া, রাজস্ব জোন-৪ এর ডিসিআরও ফারুক হোসেন ও রাজস্ব জোন- ৭ এর আরও সামসুল ইসলাম খানের আনুকুল্য থাকায় এই তিনটি জোনে বিলিং সহকারীরা অধিক বেপরোয়া বলে জানাগেছে। উক্ত জোনসমুহের একাধিক রাজস্ব পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তাদের নানা ভাবে ম্যানেজ করেই বিলিং সহকারীরা সুবিধা নিয়ে থাকে। এদের বিরুদ্ধে রাজস্ব পরিদর্শকরা কিছু বলতে গেলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করে।
সূত্রমতে, ঢাকা ওয়াসার সদ্য বিলুপ্ত পিপিআই প্রকল্পে আউট সোর্সিং এ নিয়োগপ্রাপ্ত বিলিং সহকারীদের ওয়াসা কর্তৃপক্ষ যাচাই বাচাই ছাড়া রাজস্ব পরিচালনায় রেখে দেয়।পিপিআই’র ঠিকাদার ছিল ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লি:। সমিতি ও পিপিআই পরিচালনায় নিযুক্ত সিবিএ নেতৃবৃন্দ কোন রকম নিয়োগ নীতিমালা ছাড়া তাদের অযোগ্য অদক্ষ আত্মীয় স্বজন, এলাকার লোকজনকে চাকরী দেয়। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে জাল শিক্ষা সনদে চাকরী নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পিপিআই থেকে আগত বিলিং সহকারীরাই দুর্নীতিতে অধিক বেপরোয়া বলে জানাগেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রাজস্ব জোন-৮ এর বিলিং সহকারী নাজমুল হক, রাজস্ব জোন-৭ এর বিলিং সহকারী সোহেল মিয়া এবং জিয়া, রাজস্ব জোন-১০ এর ইব্রাহিম মাহমুদ, রাজস্ব জোন-৩ এর বিলিং সহকারী মিরাজ, রাজস্ব জোন-২ এর বিলিং সহকারী জসিম উদ্দীন,রাসেল উদ্দিন ভুইয়া,সাজেদুল ইসলাম এবং ইয়াসির আরাফাতুল হক, রাজস্ব জোন-৬ এর বিলিং সহকারী করিমুল হক, মোস্তফা কামাল,সোহেল রানা,মাহমুদুল হাসান,ফায়জুল আহসান আবির,কাজী দেলোয়ার হোসেন,মুফরাত ইসলাম,সোহেল রানা,আব্দুস সাত্তার,সোহাগ আলম এবং ইমরান সরকার সহ বিভিন্ন জোনে আউট সোসির্ং এ নিয়োগপ্রাপ্ত বিলিং সহকারীদের বিরুদ্ধে আন্ডার বিলিং,মিটার টেম্পারিং,গ্রাহকদের কাছ থেকে চাপ প্রয়োগ করে উৎকোচ আদায় সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রাহকের থেকে চাপ প্রয়োগ করে টাকা আদায় সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারনে সম্প্রতি রাজস্ব জোন-১০ এর বিলিং সহকারী ইব্রাহিম মাহমুদ ও রাজস্ব জোন-৭ এর বিলিং সহকারী সোহেল মিয়া কে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্যে আউট সোসির্ং নিয়োগের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কে চিঠি দিয়েছে স্ব স্ব জোনের রাজস্ব কর্মকর্তা। অভিযুক্ত অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করায় হতাশ ওয়াসার সাধারন কর্মচারীগণ। এছাড়া, পিপিআই প্রকল্প থেকে আগত আউট সোসির্ং কর্মচারীদের শিক্ষা সনদ ও যোগত্য পূন:যাচাই পূর্বক কর্মে বহাল রাখার জন্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টগণ।
বহিরাগত দিয়ে কাজ করানো সম্পূর্ণ বেআইনী ।৫ জুলাই ২০১৮ ইং তারিখে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এক আদেশের মাধ্যমে বহিরাগত নিয়োগ নিষিদ্ধ করে। যার স্মারক নং রা/৮২০২ প্র:রা:ক:-৫/৭/২০১৮ইং। অথচ স্থায়ী রাজস্ব পরিদর্শকদের মত অস্থায়ী বিলিং সহকারীরাও ডুবলি বলে পরিচিত সহকারী দিয়ে সাইট পরিচালনা করেন। বিলিং সহকারীদের বেতন ১৮ হাজার টাকা ও যাতায়াত ভাতা তিন হাজার টাকা। অথচ তারা ডুবলির বেতন দিয়ে থাকেন ১৫/২০ হাজার টাকা! ডুবলি নিয়োগ বিলাসিতাই শেষ কথা না। অনেক বিলিং সহকারী প্রাইভেট কার ব্যবহার করেন। ঢাকা শহরে কিনেছেন ফ্লাট, কেউ করেছেন বহুতল বাড়ী, কেউ কিনেছেন প্লট। আছে ব্যাংক ব্যালেন্স। সর্বসাকুল্যে ২১ হাজার টাকা বেতনের অস্থায়ী কর্মচারীর সম্পদের উৎস কি। জানার জন্যে অনুসন্ধান চলছে। বিলিং সহকারীদের অনিয়ম, দুর্নীতি, জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদের বিস্তারিত পৃথক পৃথক সংবাদ ক্রমশ: প্রকাশ।


বিজ্ঞাপন