বিশেষ প্রতিবেদক : করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দেশে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এবং দুর্গম এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই কার্যক্রমের আওতায় দেওয়া হচ্ছে গণটিকা।
শনিবার ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের প্রথম দিনে ঢাকা সিটির ওয়ার্ডভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে দেখা গিয়েছে ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ। অনেককে দীর্ঘ সময় লাইনে থেকে টিকা নিতে দেখা গেছে। তবে টিকাকেন্দ্রে এসে কেউই শারীরিক দূরত্ব মানছে না। মাস্কহীন টিকাগ্রহীতাসহ গাদাগাদি, হুরোহুরি আর অব্যবস্থাপনার এক ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আব্দুল গনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণটিকা কেন্দ্রে।
আইডি কার্ড নিয়ে এলেই টিকা দেওয়া যাবে এমন কথা থাকলেও সকাল দশটা থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও অনেকেই টিকা পাননি। আবার অনেকেই রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে এসেও টিকা পাননি এবং বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও সেটাও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ টিকা নিতে আসা অনেকেরই।
হার্টের রোগী ষাটোর্ধ্ব আব্দুল হাকিম। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। প্রায় ঘণ্টা দুই অপেক্ষা করেও তিনি টিকা নিতে পারেননি বলে ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আমি একজন হার্টের রোগী। সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছি আমাকে যেন অসুস্থ বিবেচনায় একটু দ্রুত টিকাটা দেওয়া হয় কিন্তু আমার কথা কেউ শুনলো না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার শরীর খারাপ হয়ে গেলো অথচ টিকা পেলাম না। আর কিছুক্ষণ দেখব তারপর চলে যাব।
নারীদের জন্য আলাদা লাইনের ব্যবস্থা থাকলেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সেসব লাইনও মেনে চলা যাচ্ছে না এই কেন্দ্রে। ডেইজি আক্তার নামে এক নারী জানান, নারীদের জন্য আলাদা লাইন থাকলেও সেটা আসলে কোন কাজে আসছে না। জায়গা কম হওয়ায় নারী ও পুরুষের লাইন মিলে যাচ্ছে। আর এতে গাদাগাদি, হুরোহুরির মধ্যে টিকা নিতে এসে তো স্বাস্থ্যবিধি মানা যাচ্ছে না। অবস্থা এমন টিকা নিতে এসেই মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরবে মনে হচ্ছে!
টিকা নিয়ে সাথে সাথেই উঠে চলে যাচ্ছে টিকাগ্রহীতারা। নিয়ম অনুযায়ী ৩০মিনিট পরে কেন্দ্র ছাড়ার কথা কিন্তু এই কেন্দ্রে কাউকেই টিকা নেওয়ার পর বসতে দেখা যায়নি, এমন কী স্বেচ্ছাসেবকদের এসব বিষয়ে কিছু বলতে দেখা যায়নি। টিকা নিয়েই চলে যাচ্ছিলেন আকাশ (৩০) নামের একজন। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, টিকা নেওয়া শেষেই উঠে এসেছি। ওখানে এতো ভিড় বসব কোথায়? এর থেকে ভালো বাসায় গিয়ে রেস্ট নেই। আর যারা টিকা দিল তারা তো বসার কথা কিছু বললো না।
শাহীন নামের এক যুবক বলেন, গেলাম বসলাম টিকা দিলো চলে আসলাম। এত তাড়াতাড়ি কিভাবে হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে কাউন্সিলরের কার্ড আছে তাই তাড়াতাড়ি হইছে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও এই টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, আমরা সব কিছু মেইনটেইন করে টিকাপ্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করছি। জায়গা ও লোকবল সংকটের কারণে কিছুটা অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ছে। এটা আগামী দিনে ঠিক হয়ে যাবে। আজ প্রথম দিন বলে বুঝতে সমস্যা হয়েছে অনেক কিছুই। আমরা বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষদের অগ্রাধিকার দিচ্ছি টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে। তবে টিকাগ্রহীতাদের চাপ বেশি থাকায় অনেক কিছুই নিয়ম মেনে হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, এই ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনে সারাদেশে ৪৬টি ইউনিয়নে, ১০৫৪টি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ৩২৭০৬ জন টিকাদানকারী এবং ৪৮৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে একযোগে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করা হচ্ছে। চলবে আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত।