সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নড়াইলের ডিসি-এসপি

অপরাধ

মো. রফিকুল ইসলাম, নড়াইল : সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার প্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় নড়াইলে অব্যাহত শান্তি সুরক্ষায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কিত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।


বিজ্ঞাপন

নড়াইল জেলা প্রশাসন ও নড়াইল জেলা পুলিশের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার ২০অক্টোবর, সকাল ১১ টায় নড়াগাতি থানার কলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ ও কালিয়া উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।


বিজ্ঞাপন

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ জহুরুল ইসলামের পরিচালনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান নড়াইল; পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, পিপিএম (বার), নড়াইল, এন,এস,আই এর ডিডি মোঃ মিজানুর রহমান, জেলা আনসার কমান্ডার বিকাশ চন্দ্র দাশ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দেবাশীষ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ রিয়াজুল ইসলাম, ইউএনও কালিয়া মোঃ আরিফুল ইসলাম, জেলা ঈমাম পরিষদের সভাপতি রশিদ আহম্মেদ, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক কুন্ডু, নড়াগাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোছাঃ রোকসানা খাতুন সহ আইনশঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যগণ।

এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন উপজেলা মুলশ্রী গ্রামের পূর্বপাড়া জামে মসজিদের ঈমাম ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের শিক্ষক মোঃ আবু সাইদ শিকদার, শিক্ষক নিশিকান্ত দাশ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বড়দিয়া মঠের মহারাজ সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের জন প্রতিনিধি, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ সহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ।

বক্তারা দেশের সাম্প্রদায়িক কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নিজ নিজ ধর্মের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই, অহিংস পরম ধর্ম।

দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে নড়াইল ব্যতিক্রম বলে বক্তারা অভিমত প্রকাশ করে বলেন, নড়াইলবাসী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের উৎসবে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়।

কিন্তু কিছু কুচক্রিমহল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার লক্ষ্যে ধর্মকে ব্যবহার করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রাস্ট্রের উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টাকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান বক্তারা।

এছাড়া বক্তারা সদ্য সমাপ্ত হওয়া দুর্গোৎসব নির্বিঘে পালনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর ভুয়সী প্রশংসা করেন ।

জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কারো ধর্ম কারোর ওপর চাপিয়ে দিওনা, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। মহানবী (সাঃ) এর বানী পুলিশ সুপারের মুখে শুনে সাধুবাদ জানিয়েছে সভায় আগতরা।

যে কোন সাম্প্রদায়িক উষ্কানি সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতি বজায় রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং ফেসবুকে বিতর্কিত কোন পোস্টে কমেন্ট না করার পরামর্শ দেন তিনি। অসাধু চক্র এভাবে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য আপনাদের ব্যবহার করবে।
তাই সচেতনতার সাথে দুস্কিৃতিকারীকে ধরতে পুলিশকে সহযোগীতা করুন। তিনি অহেতুক কাউকে কোন দাঙ্গায় না জড়ানোর আহ্বান জানান ।

জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান সবার প্রতি শন্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আহবান জানিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, আমার আপনার কোন সাধ্য নেই হিন্দু, মুসলিম বা খৃষ্টানের ঘরে জন্ম নেওয়ার। মহান আল্লাহপাক যাকে যেখানে দিবেন, সেখানেই তার জন্ম হবে, ধর্ম নিয়ে কেউ জন্মায়না। ধর্ম হলো পরোপারে মুক্তির পথ। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে সমাজে কোন অসংগতি তৈরী হয়না। যে ধর্মালম্বীই হোকনা কেন যদি অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকে তাকে পরকালে সাজা ভোগ করতে হবে। কর্ম ভাল না হলে ধর্মের দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবেনা।

পরিশেষে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার ঘোষনা দেন।