বাড়ছে বায়ুদূষণ, ডিসেম্বরে ঢাকায় ‘স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা’র শঙ্কা

বিশেষ প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক : আবারও বাড়তে শুরু করেছে ঢাকার বাতাসে দূষণ। চলতি মাসের শুরুর দিকের তুলনায় শেষ দিকে তা অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী বায়ু দূষণের মানমাত্রায় ঢাকার পয়েন্ট সকাল ৯টায় ছিল ১৫৬, অবস্থান ছিল ৩ নম্বরে।
ওই সময়ে প্রথম অবস্থানে ছিল ভারতের কলকাতা, মানমাত্রা ১৮১। একই দিন বেলা ৩টায় ঢাকায় মাত্রা হয় ১৬১, অবস্থান একই থাকে। এ সময় প্রথম অবস্থানে ছিল পাকিস্তানের করাচি, মাত্রা ১৭৫। এরপর বিকাল ৫টায় কিছুটা নেমে তা হয় ১৫৫, যা চতুর্থ অবস্থানে ছিল। এ সময় শীর্ষে ছিল চীনের বেইজিং শহর, মাত্রা ১৮৮।
বায়ু দূষণের মানমাত্রা অনুযায়ী, গত রবিবার প্রায় সারাদিনেই রাজধানী ঢাকার বাতাসের অবস্থা ছিল অস্বাস্থ্যকর।
এখনই উদ্যোগ না নিলে আগামী ডিসেম্বরের শুষ্ক মৌসুমে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা তৈরির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিডের লকডাউন ওঠে যাবার পর থেকে বাতাসে দূষণ বাড়তে শুরু করেছে। মাঝে কদিন বৃষ্টির কারণে ধুলোবালি কম হওয়ায় দূষণ কম ছিল। এখন তা আবার অনেক বেড়ে গেছে।
সামনে শীতকাল। ফলে ওই সময় এমনিতেই ধুলোবালি বেড়ে যায়। এখনই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে শীতকালে তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে সেটাই এখন শঙ্কার কারণ – বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ড. কামরুজ্জামান বলেন, যেসব কারণে বাতাসের দূষণ বাড়ে তার সবকিছুই এখন পুরোদমে চলছে। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় মানুষ এখন বাইরে বের হচ্ছে, গণপরিবহণ, ইটভাটা, রাস্তা মেরামতসহ বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে সরকার উদ্যোগ না নিলে আবারও আমরা দূষণের মাত্রার দিক থেকে প্রথম অবস্থানে ওঠে আসবো।
তিনি বলেন, আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, বায়ুমান সূচক যদি তিনদিন ৩০০ পয়েন্টের ওপরে যায়, এবং তা যদি তিন ঘণ্টার মতো থাকে, তাহলে বাতাসের দূষণগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে শীতকালে সেটা সেখানে গিয়েই দাঁড়াবে। এখনই উদ্যোগ না নিলে আগামী ডিসেম্বরে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি জানান, বায়ুদূষণের কারণের মধ্যে ক্ষুদ্র ধূলিকণা, গ্যাসীয় এবং অণুজীবকে আমরা চিহ্নিত করি। এখন ধুলোবালির পাশাপাশি বাড়ছে অণুজীবগত স্বাস্থ্য সমস্যা। ঢাকার বর্জ্য পচে অণুজীবগুলো বাতাসে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এতে মাইক্রোবিয়েল এয়ারপলুশন বা অণুজীবগত দূষণ বাড়ছে। ডিসেম্বরে আমরা তিনগুণ বেশি দূষণের মধ্যে বসবাস করি।
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, লকডাউনে যখন বাতাসের দূষণ কমে এসেছিল, তখনই বলেছিলাম এ অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। কারণগুলো আমরা সবাই জানি। সেগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতেই হবে। আমরা বার বার ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট চূড়ান্ত করার কথা বলছি। কিন্তু পরিবেশ মন্ত্রণালয় সেটি ফেলে রেখেছে। সব কিছু দেখে আমাদের মনে হয়, সরকার আন্তরিক না।
ঢাকার দূষণ কমাতে সরকার একটা রুলস করছে বলে আমরা শুনেছি। আমরা বলছি, সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আর সরকার আবারও একাই কাজ করে যেতে চাইছে। এতে করে দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবার সুবিধা দেওয়া হবে। এইভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ শরীফ জামিল।


বিজ্ঞাপন