আমাদের দিক থেকে কার্বন নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। ইটভাটা আধুনিকায়নের কাজ চলছে। যানবাহনের দূষণ নিয়ন্ত্রণেও উদ্যোগ নিয়েছি।
-মো. শাহাব উদ্দিন আহমেদ, পরিবেশমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে বিশ্বকে বাসযোগ্য করতে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন দূষণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিশ্বনেতারা এখন একমত। বাংলাদেশও এই উদ্যোগে সামিল। কার্বন নিঃসরণ কমাতে নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
১ নভেম্বর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন, চলবে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত। সম্মেলনে অংশ নিতে ৩১ অক্টোবর ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিবেশমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল এতে যোগ দেবেন। দেশের পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদেরও অনেকে থাকতে পারেন এই সম্মেলনে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের তেমন ভূমিকা নেই। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশের ক্ষতি উল্লেখ করার মতো। প্রতি বছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। দেশের নিম্মাঞ্চল লবণাক্ত জলে তলিয়ে যাচ্ছে।
সরকারি সূত্রগুলোর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অন্য অনেকের মতো বাংলাদেশও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসতে চাইছে। এজন্য সম্প্রতি দেশের চলমান বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো রেখে বাকি কয়লাচালিত কেন্দ্রগুলো বন্ধ করেছে সরকার।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, এখন পায়রা, রামপাল এবং মাতারবাড়িতে যে কেন্দ্রগুলো চলছে এর বাইরে আর কোনও কয়লাচালিত কেন্দ্র বানানো হবে না। এতে পায়রাতে দুটি, রামপালে একটি এবং মাতারবাড়িতে অন্তত তিনটি মেগা প্রকল্প বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া খুলনা, মুন্সীগঞ্জ এবং চট্টগ্রামেও একটি করে কেন্দ্র বাতিল হয়েছে।
অবশ্য প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াটের মোট ৬টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কাজ চলছে। এর মধ্যে উৎপাদনে এসেছে ১৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এতে লাভ-ক্ষতি কী হয়েছে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, কয়লা কম পুড়বে। বিদ্যুতের চাহিদা সৃষ্টি হবেই। সেই চাহিদা পূরণে সরকার ক্লিন ফুয়েল ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। ফলে কার্বন নিঃসরণ কমবে। সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে জোর দিচ্ছে।
দেশের ইটভাটাগুলো পরিবেশ দূষণের বড় কারণ। এগুলোয় কাঠ পুড়িয়ে ইট বানানো হয়। এতে যেমন কার্বন নিঃসরণ হয়, তেমনি ভূপৃষ্ঠের ওপরের মাটি কেটে নেওয়াতেও দূষণ বাড়ছে।
সরকার বলছে অটো ইটভাটার পাশাপাশি ব্লক তৈরি করে চাহিদা পূরণ করা হবে। ইতোমধ্যে দেশে হলো-ব্লক তৈরির কিছু কারখানা গড়ে উঠেছে। ব্লক ব্যবহারে বাড়ি নির্মাণের খরচ ৩০ ভাগ কমবে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে ব্লকের বাড়ি গরমের দিনে ঠান্ডা থাকে, শীতকালে গরম থাকে। এতে কুলিং ও হিটিং লোডও কমবে।
দেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোতে আছে এক হাজার ৭৮৯টি। ঢাকাতেই আছে ৪৮৭টি। ঢাকার দূষণে যেগুলোর ভূমিকা প্রায় ৫৮ ভাগ।
এদিকে সরকার চাইছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রাংশও তৈরি করতে। ইতোমধ্যে সরকারের টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে স্টার লেবেলিং নিয়ে। যেসব যন্ত্র জ্বালানি সাশ্রয়ী সেগুলো ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
এ বিষয়ে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে কার্বন নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। ইটভাটা আধুনিকায়নের কাজ চলছে। যানবাহনের দূষণ নিয়ন্ত্রণেও উদ্যোগ নিয়েছি।’