৩ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত ও ৬ জনকে কৈফিয়ত তলব
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি : জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানী লিমিটেড এর ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে সাময়িক বরখাস্ত ও ৬ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে কৈফিয়ত তলব করেছে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যমুনা সারকারখানার ব্যবস্থাপক ( বাণিজ্যিক) ওয়ায়েছুর রহমান ,উপ-প্রধান রসায়নবিদ নজরুল ইসলাম এবং ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) খোকন চন্দ্র দাস এর বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা,অসদাচরণ, অদক্ষতা,চুরি,আত্মসাৎ, তহবিল তছরুপ ও প্রতারণা সহ যমুনা সারকারখানার ৩০ কোটি ২৬ লক্ষ ২৯ হাজার ৬৩৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৮ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিসিআইসি কর্তপক্ষ।
একই ঘটনার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মঈনুল হক, বিভাগীয় প্রধান এফপিএইচ ও অতিরিক্ত প্রধান রসায়নবিদ বিনান্ত কুমার বৈরাগী,বিভাগীয় প্রধান( হিসাব ও অর্থ) সুরুজ্জামান,অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) গোলাম কিবরিয়া ফকির,সহকারী প্রকৌশলী (পুুর) নির্মাণ শাখা সিদ্দিকুর রহমান ও অতিরিক্ত প্রকৌশলী মাহবুব উল আলম কে গত ২৪ নভেম্বর বিসিআইসির কর্মচারী প্রধান কৈফিয়ত তলব করে পত্র দিয়েছেন বলে সরেজমিনে গিয়ে সার কারখানা সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সার কারখানা সূত্রে জানা গেছে, যমুনা সারকারখানার ২০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আত্মসাতের পরিকল্পনার অভিযোগে গত ০৯-০৯-২০২১ইং তারিখের স্মারক নং ৩৬.০০.০০০০.০৬২.৯৯.০৫৬.২০.৩০১ মোতাবেক তদন্তে নিমিত্ত নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এ প্রেক্ষিতে গত ২৬-০৯-২০২১ তারিখের স্মারক নং ৩৬.০১.০২৭.০১ ০২.৪৫৪২.২০২১/১৮২ মোতাবেক বিসিআইসি প্রধান কার্যালয় কর্তৃক ৬ সদস্য বিশিষ্ট প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিসিআইসি প্রধান কার্যালয হতে গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে আনীত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জে এফসিএল এর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) ওয়ায়েছুর রহমান গত ০৬-০৯-২০২১ তারিখ হতে অদ্যবধি যুমনা সারকারখানায় কর্মরত আছেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের এপিএ, শুদ্ধাচার ও অভিযোগ নিষ্পত্তি অধিশাখা হতে গত ০৫-০৯-২০২১ খ্রিস্টাব্দ তারিখের স্মারক নং-৩৬.০০.০০০০.০৯৩.২৭.০০৩.২০(অংশ১).৫১ এবং মন্ত্রণালয়ের বিসিআইসি শাখার গত ০৯-০৯-২০২১ খ্রিস্টাব্দ তারিখের স্মারক নং-৩৬.০০.০০০০.০৬২.৯৯.০৫৬.২০.৩০১ মোকাবেক জেএফসিএল এর ২০ (বিশ) হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ পরিকল্পনার অভিযোগে নির্দেশনা প্রদান করে তদন্ত কমিটি। বিক্রয় শাখা প্রধান হিসেবে জেএফসিএল এর উৎপাদিত সারের ব্যাগ গুদাম নং-০১, আমদানি সারের গুদাম নং-০২ এবং কারখানার বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত ব্যাগ স্যারের রক্ষণাবেক্ষণ ও বিতরণের সমস্ত দায়-দায়িত্ব তারই নিয়ন্ত্রণাধীন। বিসিআইসির তদন্ত কমিটি গত ২৯-০৯-২০২১ ইং তারিখে জেএফসিএল এর উৎপাদিত সারের পরিসংখ্যান/ মজুত হিসাব তার নিকট হতে সংগ্রহ করে। তার স্বাক্ষরকৃত লিখিত তথ্য অনুযায়ী গত ২৯-০৯-২০২১ ইং তারিখে জেএফসিএল এর উৎপাদিত ব্যাগ সারের মজুদের পরিমাণ ৩৭,৫৭৪.৭০ মেট্রিক টন ও খোলা সারের পরিমাণ-৫১,৮৬৬.৬০ মেট্রিক টন। কিন্তু বিসিআইসি তদন্ত কমিটি গত-২৯-০৯-২০২১ ইং তারিখে সরেজমিনে জেএফসিএল এর উৎপাদিত ব্যাগ সারের মজুদের পরিমাণ২১,৩১০.৩৫ মেট্রিক টন এবং লুজ সারের পরিমাণ ৫১,৬৪৯.৯২ মেট্রিক টন পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জেএফসিএল এর উৎপাদিত ব্যাগ সার ১৬,২৬৪.৩৫ মেট্রিক টন, এস এস সি এল এর সার ১২১.১০ মেট্রিক টন এবং খোলা সার ২১৬.৬৮ মেট্রিক টন সহ মোট-১৬,৬০২.১৩ মেট্রিক টন সার পাওয়া যায়নি যার আর্থিক মূল্য দাড়ায় ২৩,২৪,২৯,৮২০.০০ (তেইশ কোটি চব্বিশ লক্ষ উনত্রিশ হাজার আটশত বিশ) টাকা। বিক্রয় শাখা প্রধান হিসেবে ঘাটতিকৃত-১৬,৬০২.১৩ মেট্রিক টন সার এর দায়ভার তার ওপর বর্তায়। গত ২৯-০৯-২০২১ ইং তারিখে তার স্বাক্ষরকৃত লিখিত তথ্য অনুযায়ী জেএফসিএল এর ০২নং গোডাউনে রক্ষিত কাফফো সার ১,১১৩.০০ মেট্রিক টন, এস এফ সি এল এর সার ১২১.১০ মেট্রিক টন এবংং আমদানি সার ২,৭০৮.০০ মে: টন মজুত রয়েছে। কিন্তু বিসিআইসি তদন্ত কমিটি গত ২৯-০৯-২০২১ ইং তারিখে সরেজমিনে জেএফসিএল এর ০২নং গুদামে বাস্তব গণনায় কাফকো সার-৯০.০০ মেট্রিক টন এসএফসিএল এর কোন সার পাওয়া যায়নি এবং আমদানি সার-১২০০.০০ মেট্রিক টন মজুত পান। তার প্রদত্ত তথ্যের সাথে বাস্তব গণনায় কোন মিল পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে জেএফসিএল এর রক্ষিত আমদানি সার ১,৫০৮.০০ মে: টন এবং কাফকো সার-১,০২৩.০০ মেট্রিক টন সহ সর্বমোট-২৫৩১.০০ মেট্রিক টন সার পাওয়া যায়নি যার আর্থিক মূল্য আন্তর্জাতিক মূল্যে তিন বছরের আমদানী মূল্যের গড় মূল্য )=৭,০১,৯৯,৮১৬.০০টাকা। বিক্রয় শাখা প্রধান হিসেবে ঘাটতিকৃত-২৫৩১.০০ মেট্রিক টন সার এর দায়ভার তার ওপর বর্তায়। জেএফসিএল এর-১৯,১৩৩.১৩. মেট্রিক টন সার আত্মসাতের দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
বিসিআইসির প্রধান কার্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি জেএফসিএল এর ২০ হাজার মেট্রিক টন সার ঘাটতির অভিযোগের বিষয়টির সরেজমিনে তদন্তে বাস্তব গণনায় কারখানায় আসলে তদন্ত টিমকে বিক্রয় শাখা প্রধান হিসেবে ও গণনায় চরম অসহযোগিতার অভিযোগসহ অসদাচরণের অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।
এ ব্যাপারে যমুনা সারকারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সু-দ্বীপ মজুমদার এর কাছে মোবাইলে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।