সুন্দরবনে ফুল ফোটেনি তাই মধু নেই!
দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধিঃ চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টি ও সময়মতো বনের গাছগাছালিতে ফুল না ফোটার কারণে সুন্দরবনে মধু পাচ্ছেন না মৌয়ালরা।
এমন পরিস্থিতিতে লোকসানে পড়ে এ বছর দ্বিতীয়বার আর বনে যাবে না মৌয়ালদের অনেক দল। সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা মৌয়ালারা জানান, ১৪ দিনের পাস নিয়ে গত ১ এপ্রিল বনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন তারা।
এবার বন বিভাগের দ্বিগুণ রাজস্বসহ নৌকা ভাড়া, খাবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় ও আনুষঙ্গিক মিলিয়ে দলের একজন সদস্যের খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। কিন্তু মধু না পেয়ে প্রথম চালানেই লোকসানে পড়েছেন তারা।
এ অবস্থায় মহাজনদের কাছ থেকে নেওয়া দাদনের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এমনকি বনে যাওয়ার মতো হাতে টাকা না থাকায় এ বছর দ্বিতীয়বার আর বনে যাবেন না এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মৌয়ালদের অনেক দল।
উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের বুড়িরডাবুর গ্রামের মৌয়াল ইউসুফ মুন্সী জানান, প্রথম ১৪ দিনে তার ১০ জনের দলে মধু পেয়েছে মাত্র ১৭ কেজি, যা জনপ্রতি ভাগে পেয়েছেন এক কেজি ৭০০ গ্রাম করে। গত তিন যুগে সুন্দরবনে মধুর এমন বিপর্যয় দেখেননি তারা।
মৌয়াল নূর ইসলাম ফরাজী, ইব্রাহীম বেপারি, রিয়াদুল ফরাজীসহ অনেকেই জানান, আগে বনের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকা খুঁজলেই ৪-৫টি মৌচাক পাওয়া যেত। একেকটি মৌচাক থেকে ১০-১২ কেজিও মধু পেয়েছেন তারা। কিন্তু এবার মাইলে পর পর মাইল হেঁটেও মৌচাক চোখে পড়ে না।
বনে ফুলের সংখ্যাও কম দেখা গেছে। দুই-একটি ছোট মৌচাক পাওয়া গেলেও তা ভেঙে দুই থেকে তিনশত গ্রাম করে মধু পাওয়া গেছে।
সুন্দরবনের স্টেশন কর্মকর্তা জানান, এ বছর ১-১৫ এপ্রিল স্টেশন থেকে ৭৬টি দলকে মধু আহরণের পারমিট দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ১৮টি দল তাদের পাস জমা দিয়েছে কিছু কিছু দল ফিরে এলেও অনেকেই বনে রয়েছে। তার মতে, গত দুই বছর সুন্দরবন অঞ্চলে এমন সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে না।
এ কারণে বনের গাছগাছালিতে ফুল এলেও তা শুকিয়ে ঝরে যায়। ফলে মৌমাছি ও কীটপতঙ্গের খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয়। তাই মধু না পেয়ে মৌমাছিও আসে না।
গত বছরও প্রথম দিকে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল। কিন্তু শেষের দিকে ভালোই মধু পাওয়া গেছে। সামনে বৃষ্টিপাত হলে বনে ফুল এবং মধু পাওয়া যাবে বলে আশা করেন তিনি।
বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, পূর্ব সুন্দরবনে এ বছর ১০৫০ কুইন্টাল মধু এবং ৩৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্য নিয়ে শরণখোলা, চাঁদপাই, ঢাংমারী ও জিউধরা স্টেশন থেকে ১২৭টি পাস (পারমিট) দেওয়া হয়েছে।
৩০ জুন পর্যন্ত মধু আহরণ চলবে। প্রথম চালানে মধু কম হলেও মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কম বা বেশির হিসাব এখনই নির্ধারণ করা যাবে না।