তোমরা রোহিঙ্গাদের ভাল খাবার দাও তাই আমরা ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছি

Uncategorized অন্যান্য

কুটনৈতিক বিশ্লেষক ঃ বিগত ৫ দিনে ২০০০ রোহিঙ্গা শরনার্থী ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।তাদের মাঝে ধরা পড়া রোহিঙ্গারা ভারতে ফেরত যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভাষায়, ভারতের চাইতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য সুযোগ সুবিধা বেশী।তাছাড়া,মাসিক রেশন পাওয়া যায় যা ভারতে দেয়া হয়না।তাই তারা বিজিবির কাছে কক্সবাজারের ক্যাম্পে তাদের রেখে আসতে অনুরোধ করেন।
ধরা পড়া রোহিঙ্গারা জানান সীমান্ত পার করিয়ে দিতে ভারতে তারা ১০,০০০ রুপি দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে আরেকদল এসে তাদের উদ্ধার করে কক্সবাজার পাঠানোর জন্য আরো ৫,০০০ টাকা নেয়।
অন্যদিকে বিগত দিনগুলোতে প্রায় ৩০০০ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন।যার মাঝে ৫০০ জন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন আর বাকিরা তাদের রোহিঙ্গা আত্নীয়দের কাছে লুকিয়ে আছেন। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি আফ্রিকান এবং নাইজেরিয়ান নাগরিকেরাও অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসে বসবাস শুরু করেছেন।এরই মধ্যে মাদক,চোরাচালান সহ নানা অপরাধ কর্মেও জড়িয়ে পড়েছেন তারা। বিভিন্ন সূত্রানুসারে পুরো দেশে অবৈধ প্রায় ১২ হাজার আফ্রিকান নাগরিক রয়েছেন।এটিএম থেকে টাকা চুরি করা সহ নানা কর্মকান্ডেই তারা জড়িয়ে পড়ছেন।নাইজেরিয়া তাদের ফেরত নিতে না চাওয়ায় বাংলাদেশ তাদের ফেরত ও পাঠাতে পারছেনা।এক্ষেত্রে বাংলাদেশ চরমভাবে ”অসহায়” মানবতার কাছে পরাজিত বাংলাদেশের স্বার্থ এবং অর্থনীতি।মাত্র ১০০ টা ফুটবল মাঠের সমান জায়গা রোহিঙ্গাদের দেয়াই যায়,আর তাদের শরনার্থী স্টাটাস না থাকলেও তাদের রাখতে বাংলাদেশ ”বাধ্য”। মানবিকতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বাংলাদেশ নিজ রাষ্ট্রের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও বিদেশী শরনার্থী এবং আশ্রয় প্রার্থীদের এক স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে।বিশ্বের যে কোন দেশের নাগরিকই বিজনেস ভিসায় এসে এখন নির্দ্বিধায় বাংলাদেশে বসবাস করতে পারেন।১ বছর পর বিদেশী নাগরিকের হাল-হহিকত নিয়ে কিছুই বলতে পারছেনা প্রশাসন। বিশ্বে ”Deport” এবং ”Push Back” নামক টার্মটির ব্যবহার জানে না বাংলাদেশ এবং এর স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। কিন্তু সৌদি আরব, মালেয়শিয়া, ইউরোপিয়ান দেশগুলো বাংলাদেশী নাগরিকদের ঠিক একই ভাবে ডিপোর্ট করতে পারে।সেসব দেশে বাংলাদেশীদের ধরতে ফলাও করতে অভিযান করা হয়। মালেয়শিয়ায় বাংলাদেশীদের দুরাবস্থা নিয়ে সেদেশের মিডিয়ায় বলতে চাইলে আটক করে বাংলাদেশেই ডিপোর্ট করা হয়। অন্যদিকে, মালেয়শিয়া তাদের সাগরে আশ্রয় চাওয়া রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক সীমানায় রেখে এসে ”PUSH BACK” এর অনন্য নজির স্থাপন করেছে। এরই মধ্যে সৌদি লাখখানেকের উপর রোহিঙ্গাকা তাদের কাজের মেয়াদ কিংবা সাজা শেষে বাংলাদেশে ডিপোর্টের উদ্দ্যোগ নিয়েছে,কেননা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে তারা বাংলাদেশী না হলেও বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী।
অলিখিতভাবে,বাংলাদেশের সুবিধাভোগীরা রোহিঙ্গাদের এদেশে প্রতিষ্ঠিত করার মাস্টারপ্লান নিয়ে মাঠে নেমেছে।এরই মধ্যে কক্সবাজারে উপজেলা পর্যায়ে রোহিঙ্গা চেয়ারম্যান ও নির্বাচিত হয়েছেন।যিনি আবার বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র ধারী। শুধু তিনিই নন,তাকে নির্বাচিত করা অনেকেই আবার রোহিঙ্গা, কিন্তু তাদের ও জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।
Deport & Pushback শব্দগুলো বহুল প্রচলিত হলেও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ব্যপারে নমনীয় থাকার মুল কারনই হলো আন্তর্জাতিক চাপ।মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে সৌদি আরব এবং মার্কিন ও ইউরোপিয়ান এজেন্সী এবং জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরনার্থীদের বাংলাদেশে রাখা দীর্ঘমেয়াদী করার ব্যপারে আগ্রহী। দরকারে রোহিঙ্গাদের শরনার্থী ”ঘোষণা” করতেও তারা অতিউৎসাহী। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরনার্থী রাখা একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হলেও তা একটি স্ট্রাটেজিক ডিসিশন।এর মাধ্যমে মিয়ানমারের রাখাইন না চাইতেও একটি ঝুকির মধ্যে থাকে।মিয়ানমার শরনার্থীদের ফেরত নিতে চায় না তাও যেমন সত্য ঠিক তেমনিভাবে তাদের সীমান্তের কাছাকাছি ও দেখতে চায়না বার্মা। অন্যদিকে বাংলাদেশের কাছে রোহিঙ্গা একপ্রকার বার্গেইনিং টুল।এত জনগোষ্ঠীকে রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তাদের বক্তব্য তুলে ধরা,গাম্বিয়াকে দিয়ে বার্মার বিরুদ্ধে মামলা করা,মার্কিন বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যার কথা তুলে ধরে ব্যবসার সুবিধা দেয়া। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ সম্পর্ক ঝুকিতে পড়লে ’’বেশী মানবতা চাইলে সব রোহিঙ্গাদের নিয়ে যান বলেও ”মতামত দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে,বেশ কিছু দেশ এখনো মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের মহড়ার ব্যপারে আশাবাদী।রাখাইনের প্রক্সি যুদ্ধে বাংলাদেশ মাসের পর মাস আনকনভেশনাল যুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে।এমনকি মাত্র ১৮ হাজার টাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সেনা অবস্থানের মাস্টারপ্লান কক্সবাজার থেকে যে কোন বাংলাদেশী সিভিলিয়ান ই খুজে আনতে পারেন। সে হিসেবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা কক্সবাজার কেন্দ্র করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোপন কর্মকান্ড সম্পর্কে ভালভাবেই অবগত।শুধু পার্থক্য হলো বাংলাদেশ এখনো ”ভিক্টিম” থেকে ”অফেন্সিভ” ভুমিকায় সামনে আসেনি। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চীন,জাপান,যুক্তরাষ্ট্র নানা প্রস্তাব নিয়ে সামনে এসেছে।রাখাইনে যুদ্ধ করা,স্বাধীন করা,৭০০ করে রোহিঙ্গা নেয়া সহ নানা প্রস্তাব এসেছে,যার কোনটিই অনুমোদন করেনি বাংলাদেশ।উখিয়া,টেকনাফে থাকা বাংলাদেশীরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তারা এখনো সরকারী ক্ষতিপূরণ পাননি।রোহিঙ্গারা সামনে আরো অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িত হতে পারে।কেননা ধীরে ধীরে বৈদেশিক সাহায্য কমছে,একই সাথে রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারী তহবিল দেয়া নিয়েও সরকারের অনাগ্রহ বাড়ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘায়িত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে মিয়ানমার আর এখনো তাতে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য দেখাচ্ছে বাংলাদেশ।রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের যে কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত বিশ্বে থাকা বাংলাদেশীদের ক্ষতির কারন যেন না হয়ে দাঁড়ায় তাই বাংলাদেশের লক্ষ্য।আর আপাতত তার কোন বিকল্প নেই। আমাদের রোহিঙ্গাদের তাদের পূর্ণ অধিকার নিয়েই মিয়ানমারে পাঠাতে হবে যার শুরু হতে হবে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব তাদের প্রদান করা।


বিজ্ঞাপন