কুটনৈতিক বিশ্লেষক ঃ নরওয়ের টেলিনর-এর মালিকানাধীন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন-এর ৩৪.২০ শতাংশের মালিক ড. ইউনূসের মালিনাকাধীন গ্রামীণ টেলিকম। গ্রামীণফোনের কাছ থেকে প্রতি বছর গ্রামীণ টেলিকম ডিভিডেন্ট পায় হাজার কোটি টাকার ওপরে। শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই তাদের ডিভিডেন্ট এসেছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
যার ৫% শ্রমিক কল্যাণে দেওয়ার কথা থাকলেও ১ টাকাও পরিশোধ করেনি গ্রামীণ টেলিকম। আর এভাবে ২০০৬ সাল থেকে জমতে জমতে এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকায়। ফলে ক্ষুব্ধ কর্মীরা বকেয়া পাওনা চেয়ে ১০৭টি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর টনক নড়ে ইউনূস গং-এর। ঢাকার শ্রম আদালতে দায়েরকৃত ১০৭টি মামলা থেকে বাঁচতে প্রায় ১৪ কোটি টাকা দিয়ে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দেয় গ্রামীণ টেলিকম। যে কোনোভাবেই হোক এই মামলা জিতিয়ে দিতে চুক্তি সই করে গ্রামীণ কল্যাণ আর ঢাকা লজিস্টিক সার্ভিসেস অ্যান্ড সলিউশন। আর, সেই চুক্তি অনুমোদন করেন খোদ ড. ইউনূস।
২০২১ সালের ১৪ই জুন পরিচালনা পর্ষদের ভার্চুয়াল সভায় মামলাগুলো জিততে ঢাকা লজিস্টিকের সঙ্গে চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। চুক্তি অনুসারে, ঢাকা লজিস্টিক মামলাগুলোর রায় গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে আনতে প্রশাসনের বিভিন্ন পক্ষের সাথে ‘এনগেইজ’ করার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘সন্তুষ্ট’ করার কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আমলা, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং শ্রমিক নেতাদেরও। এই পুরো কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যয় ধরা হয়ছে ১৪ কোটি টাকা। বোর্ড সভায় এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনুমোদন দেন স্বয়ং ড. ইউনূস।
এর আগেও মামলা করার অপরাধে ৯৯ জন কর্মীকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরাসরি ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম। সেই মামলা জিততেও গ্রামীণ টেলিকম শ্রম আদালতে ঘুষ দেয় ইউনূস কোম্পানি। সেই উদাহরণটিও উল্লেখ করা হয় এই চুক্তিপত্রে। যদিও এসব তথ্য স্বাভাবিকভাবে উঠে আসেনি ইউনূস সেন্টারের বিবৃতিতে। জনগণের সামনে ইউনূসের মুখোশ খুলে দেওয়ার স্বার্থে সংযুক্ত করা হলো।
কোনো হুমকি-ধমকিতে পিছপা হননি শেখ হাসিনা। সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে তা উদ্বোধনও করেছেন। একটি সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের অভিনন্দন আসে, এটা আগে কখনও দেখা যায়নি।
এতে বোঝা যায়, এই সেতু বাংলাদেশের জন্যে বিশেষ কিছু। দেশের মানুষের কাছে এর নাম এখন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পত্রিকার কল্যাণে দেখা গেছে উচ্ছ্বসিত জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের সন্তানের নাম রেখেছেন এই সেতুর নামে। এই সেতু দেশের অনেকের মন খারাপ করে দিয়েছে, অনেককে বিবস্ত্র করেছে। অনেক ষড়যন্ত্রীকে নতুন করে জাতির সামনে তুলে ধরেছে।
আর তাই আত্মপক্ষ সমর্থনের বিবৃতিতে ড. ইউনূস নিজেকে ফেরেস্তা প্রমাণে বলতে চেয়েছেন, কিরা কেটে বলছি, আমি কিস্যু করিনি পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে চাঁদা দেইনি। কিন্তু ইউনূসের বক্তব্য যে অসার-অসত্য এর প্রমাণ তো মার্কিন নথি। উইকিলিকসও তা ফাঁস করে দিয়েছে বিশ্ববাসীর সামনে।
এসব জেনেও বিবৃতি দিয়েছে ইউনূস সেন্টার। কারণ তো আগেই বলা হয়েছে। ইউনূস এসব অভিযোগকে (আসলে প্রামাণিক দলিল) অস্বীকার করেছেন, সেই লেজুড় যেন সংবাদে যুক্ত হয়, সেজন্যই এই বিবৃতি।
এদিকে পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। একে একে উদ্ঘাটিত হবে অনেক ষড়যন্ত্রের খবর। উন্মোচিত হবে অনেকের মুখোশ।
নোবেল লরিয়েট ইউনূস, পদ্মা সেতু নিয়ে জাতির বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এবার অন্তত ক্ষমা চান। তাতে যদি পাপের বোঝা একটু কমে।