কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নুর চেহের, দপ্তরে ঘুরেও জমির ক্ষতিপূরণ পাননি অশীতিপর, সরকারি দফতরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচার চাই’ ‘বিচার চাই’ স্লোগান,

Uncategorized অন্যান্য

!! চট্টগ্রামে দুদকের গণশুনানিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নুর চেহের, দপ্তরে ঘুরেও জমির ক্ষতিপূরণ পাননি অশীতিপর, সরকারি দফতরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচার চাই’ ‘বিচার চাই’ স্লোগান, হতোবম্ভ দুদক কমিশনার (তদন্ত) !!


নিজস্ব প্রতিবেদক  ঃ ৮৭ বছরের নূর চেহের জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে ৪০ বছর ধরেই ঘুরছেন জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের নানা কর্মকর্তার দুয়ারে দুয়ারে। কিন্তু তিনি পাননি সমস্যার সমাধান। চট্টগ্রামে বুধবার দুদকের গণশুনানিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ৮৭ বছরের নূর চেহের জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে ৪০ বছর ধরেই ঘুরছেন জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের নানা কর্মকর্তার দুয়ারে দুয়ারে। কিন্তু তিনি পাননি সমস্যার সমাধান। চট্টগ্রামে বুধবার দুদকের গণশুনানিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ৮৭ বছরের নূর চেহের বেগম। জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে ৪০ বছর ধরেই ঘুরছেন জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের নানা কর্মকর্তার দুয়ারে দুয়ারে। কিন্তু এত বছরেও তিনি পাননি সমস্যার সমাধান। পেয়েছেন কেবল ভোগান্তি আর হয়রানি। ১৯৮০ সালে নূর চেহের বেগমের শেষসম্বল ৩৬ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিজের বৈধ জমি হওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রশাসনের ভুলে তার ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছে অন্যরা। কিন্তু নিজের ন্যায্য পাওনা পাবে এমন আশায় একে একে কেটেছে তার ৪০টি বছর। বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত গণ শুনানিতে অভিযোগ নিয়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই হতভাগী। তার কান্নায় পুরো হলরুমে নেমে আসে কান্নার রোল। অনেকে ‘বিচার চাই’ ‘বিচার চাই’ স্লোগানও দেন। এত বছরেও এমন অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়ায় হতবাক হোন দুদক কমিশনারও। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শহীদ বীরউত্তম অডিটোরিয়ামে চট্টগ্রামের সব সরকারি অফিস নিয়ে এই গণশুনানির আয়োজন করে দুদক। অভিযোগ শুনানি করেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। সোমবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে গণশুনানি চলে বিকেল পর্যন্ত। সরকারি দপ্তরে সেবা সহজীকরণ, হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধে দুদক এ গণশুনানির আয়োজন করেন।
গণশুনানিতে সরকারি দফতরের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক অভিযোগ করেন সেবাগ্রহীতারা। চট্টগ্রামে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ২৩ সিন্ডিকেট থাকার তথ্য দুদকের কাছে তুলে ধরেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। অসাধু উপায়ে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড লেবার ইউনিয়নের এক সিবিএ নেতা। ওই সিবিএ নেতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে গণশুনানিতে। এত বছর পরও হাসপাতালে পুরোনো অভিযোগ শুনে বিস্মিত দুদক মহাপরিচালক। ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গণশুনানিতে নূর চেহের বেগমের ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য আমার বৃদ্ধ মা ৪০ বছর ধরে এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ঘুরছেন। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাননি। উল্টো যারা এই ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ভূমি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে। বন্দর ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে ধর্ণা দিলেও সুরাহা মিলেনি।’ কান্নায় ভেঙে পড়া নূর চেহের বেগমের কোনো ভাষা ছিল না। কান্নারত অবস্থায় তিনি বলেন, ‘আমি আর কবে ন্যায্য বিচার পাব?’ শুনানিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এ ঘটনার ব্যাখা দিয়ে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি আমার কাছে একাধিকবার এসেছিলেন। যতটুকু জেনেছি উনার টাকা আত্মসাৎকারী আছেন ছয়জন। তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলাও বিচারাধীন আছে। যেহেতু মামলাটি বিচারাধীন তাই আমাদের কিছুই করার নেই। তবে আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য হিসেবে নূর চেহের বেগমকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারি।’ গণশুনানিতে উপস্থিত বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি বলেন, ‘উনার ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। মূলত অন্যরা ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে তার টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমরা জমি পছন্দ করার পর অধিগ্রহণের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করি। এটির দায়িত্বভার তাদের। জেলা প্রশাসনের ভুলের কারণে নুর চেহের বেগমের টাকা অন্যরা পেয়েছে। বিষয়টি জানার পর কিছুই করার ছিল না। আইনগতভাবেও আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। তারপরও মানবিক দিক বিবেচনা করে নূর চেহের বেগমের এক ছেলেকে আমরা বন্দরে চাকরির ব্যবস্থা করেছি।’
দুদকের আয়োজিত গণশুনানিতে চট্টগ্রামের সরকারি দপ্তরে অনিয়ম, দুর্নীতি, হয়রানি ও ভোগান্তির দুই শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। তারমধ্যে নগরের ২২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্ধ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভাগীয় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা, আগ্রাবাদ ভূমি অফিস, রেলওয়ে, বিআরটিএ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ, যমুনা ওয়েল কোম্পানি, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়, কেজিডিসিএল, খাদ্য অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআরটিসি, নির্বাচন অফিস ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ উঠে।
গণশুনানিতে চট্টগ্রামের সরকারি দপ্তরে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভোগান্তির দুই শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে।
বিভাগীয় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, ‘এখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায় না। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরাও সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে কাজ করে দেন। না দিলে হয়রানি করেন।’
সায়মুন হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সিডিএ অবৈধভাবে কবরস্থানের ওপর ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। সাড়ে ৩ বছর ধরে এর প্রতিকার পেতে একাধিকবার সিডিএ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করলেও কেউ কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *