অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ঃ সামরিক শক্তি, যুদ্ধ এগুলার মূল ভিত্তি আর চালিকাশক্তি হল কৃষি। বড় ভাবে বললে অর্থনীতি। যুদ্ধ শুধু সমরাস্ত্র দিয়েই জেতা যায় না। যুদ্ধের ধকল একটি দেশ কতদিন সামলাতে পারবে তার উপর নির্ভর করে জয় পরাজয়।
আপনার অস্ত্র, সৈন্য সব আছে। কিন্তু ঘাটতি পড়েছে খাদ্যের। এরকম মুহুর্তে শৃংখল একটা বাহীনি মুহুর্তে বিশৃঙ্খল হয়ে যেতে পারে। নিজ দেশে শুরু হতে পারে বিদ্রোহ। নিজ দেশকে দুর্ভিক্ষে ফেলে কেউ বিজয় অর্জন করতে পারেনা। যুদ্ধের জন্য দরকার একতা। আর এই একতায় ফাটল ধরে খাদ্যের অভাবে। শত্রু যতই শক্তিশালি হোক, যদি শত্রুর রসদ সাপ্লাই এর পথ বন্ধ করা যায় তবে শত্রু নত হতে বাধ্য। যুদ্ধকে যদি মেশিন বা ইঞ্জিন হিসাবে কল্পনা করি তবে অর্থনীতিকে বলা যায় ফুয়েল। যেদেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালি সেই দেশ তত বেশি সময় যুদ্ধে টিকে থাকতে পারে।
যুদ্ধের প্রভাব প্রত্যক্ষ ভাবে পড়ে অর্থনীতিতে। ধরুন বাংলাদেশের কথা। বার্মার সাথে যুদ্ধ হল। এমন সময় বঙ্গোপসাগর দিয়ে খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য আমদানি বা রপ্তানির জন্য কোন জাহাজ ঢুকতে চাইবে না। সমুদ্রে ব্লকেড হলে অবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।
কিন্তু এমন সময়েও একটি খাত দেশকে শক্ত রাখতে পারে। অর্থনীতি যদি ধ্বসেও যায়, কিন্তু কৃষি খাত যদি টিকে থাকে, খাদ্যে যদি ঘাটতি না থাকে তাহলে সহজে মাথা নোয়ানোর প্রশ্নই আসে না।
আর এই একটি দিককে আমরা সব থেকে অবহেলা করি। ডেফ্রেসে কিছুদিন কৃষি নিয়ে পোস্ট দেয়ায় অনেকে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছেন। আমাদেরকে লেকচার দিয়ে যাচ্ছেন ডিফেন্সের সাথে এর কি সম্পর্ক। তাদের উদ্দেশ্যে বলি, আপনাদের কৃষির গুরুত্ব বুঝার মত ক্ষমতা হয়নি।
একটা দেশ দুর্ভিক্ষে পড়লে শত্রু সুযোগ নিতে পারে। ধরুন করোনার কারনে সারা বিশ্বের অর্থনীতি ধ্বসে গেল। এমন সময় তারাই নিরাপদ থাকবে যাদের কৃষি শক্তিশালি। যারা খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ন। খাদ্য না থাকলে যুদ্ধ করা লাগবে না।
মানব ধ্বংসের পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের আমরা মাথায় তুলে নাচি। কিন্তু যেই কৃষি বিজ্ঞানী অতিরিক্ত মানুষের খাদ্য চাহিদা মাথায় রেখে উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উৎপন্ন করল তাকে আমরা চিনি না। অথচ বিপদে পড়লে তাদের আবিস্কার আপনার আমার পেট ভরাবে। পারমাণবিক বোমা নয়।
কৃষি বাচলে বাচবে দেশ। কৃষক বাচলে বাচবে দেশ।