অভয়নগর উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি হতদরিদ্রদের চাল উত্তোলনে পদে পদে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ

Uncategorized অন্যান্য

সুমন হোসেন, (যশোর) ঃ
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের মাঝে চাল বিতরণে নিয়োগ করা ডিলারেরা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে টাকা না দিলে তাঁদের চাদিহাপত্র (ডিও) দেওয়া হয় না। ঘুষ দেওয়ার কারণে তাঁরা সুষ্টুভাবে চাল বিতরণ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র জনসাধারণকে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তা দিতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ১০টা কেজি দরে চাল বিতরণ (বিক্রি) কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত বিধবা, বয়স্ক, পরিবারপ্রধান নারী, নিম্ন আয়ের দুস্থ পরিবারপ্রধানদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার জন্য একটি তালিকা রয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে উপকারভোগীর তালিকা হতে মৃত, স্বচ্ছল, ভুঁয়া এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবর্তে প্রকৃত হতদরিদ্রদেরকে অন্তুর্ভুক্ত করার নিয়ম রয়েছে।

প্রতিবছরের মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মোট পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলে। ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করা হতো। গত বাজেটে এর দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা কেজি করা হয়। ভোক্তারা ৩০ কেজি চাল পাবেন। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে।

তালিকা সঠিকভাবে তৈরি ও ডুপ্লিকেশন রোধ করতে ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে উপকারভোগীর তালিকা হতে মৃত, স্বচ্ছল, ভুঁয়া, এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া এবং অন্য খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত এমন ব্যক্তিদের পরিবর্তে প্রকৃত হতদরিদ্রদেরকে অন্তুর্ভুক্ত করে তালিকা তৈরি করে উপজেলা কমিটিতে পাঠায় এবং উপজেলা কমিটি তা যাচাই করে অনুমোদন করে। এরপর কমিটি প্রতি পরিবারের একজনের নামে ছবিসহ কার্ড ইস্যু করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সদস্যসচিব।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় উপজেলায় আটটি ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের মাঝে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়ের জন্য ৩২ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চাল বিতরণ তদারকির জন্য প্রতি ইউনিয়নে একজন করে তদারকি কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) নিযুক্ত আছেন।

উপজেলায় ১৬ হাজার ৪৮৪ জন হতদরিদ্র উপকারভোগীর মধ্যে মাসে ৫০০ মেট্রিক টন করে চাল বিতরণ করা হতো। ডিজিটাল ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যাচাইবাছাই কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় বর্তমানে উপজেলায় ১৪ হাজার ২৪৫ জন হতদরিদ্র উপকারভোগীর মধ্যে মাসে ৪২৭ মেট্রিক টন ৩৫০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে।

চালের সরবরাহ নেওয়ার সময় বোঝা, ওজন, বস্তা সেলাই ইত্যাদির কোন খরচাদি ডিলারের নিকট হইতে আদায় করা যাবে না।

নাম প্রকাশে অনৈচ্ছুক কয়েকজন ডিলার অভিযোগ করে বলেন, চাল উত্তোলন করতে একজন ডিলারকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মীনা খানমকে প্রতিবার ডিও প্রতি ৭’শ থেকে এক হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, এর আগে খাদ্য গুদাম থেকে ৩০ কেজি চাল ভর্তি বস্তা সরবরাহ করা হতো। ওই বস্তা সরাসরি ভোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করা হতো। কিন্তু চলতি মাসে ৫০ কেজির চাল ভর্তি বস্তা সরবরাহ করা হচ্ছে। এ জন্য উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অসীম কুমার মন্ডলকে প্রতি ডিলারকে তিন হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে।

উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের একজন ডিলার বলেন,‘উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মীনা খানমকে প্রতিবার ডিও প্রতি ৭’শ থেকে এক হাজার টাকা, ভোক্তাদের তালিকার জন্যও টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অসীম কুমার মন্ডলকে ৫০ কেজির চালের বস্তার জন্য তিন হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। খাদ্য কর্মকর্তা তদারকিতে গেলে তাকে এক হাজার টাকা দিতে হয়।
চলিশিয়া ইউনিয়নের একজন ডিলার বলেন ,‘উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সহকারী ইকবালের হোসেনের মাধ্যমে এবং খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুদামের দারোয়ান রমিজ উদ্দীনের মাধ্যমে ঘুষ আদায় করেন। আমি এবার অনেক বলেকয়ে কিছু টাকা কম দিয়েছি।’

অভয়নগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মীনা খানম বলেন,‘ডিলারদের অভিযোগ ঠিক না। আমার অফিসে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। টাকা না নিতে আমার অফিসে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

জানতে চাইলে উপজেলার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অসীম কুমার মন্ডল বলেন,‘বস্তার ওজনের পার্থক্যের জন্য কেন ডিলারেরা টাকা দেবেন? ৩০ কেজির হোক আর ৫০ কেজিরই হোক-সব চালের বস্তাই সরকারের। এখানে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই অভিযোগ করলে মেনে নেওয়া সম্ভব না।
ডিলারদের এই অভিযোগ সঠিক না। তবে ডিলারেরা খুশি হয়ে গুদামের কর্মচারীদের কিছু বকশিস দিয়েছেন কি না-সেটা আমার জানা নেই।’


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *