নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ গতকাল মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নতুন সময়সূচিতে শুরু হয়েছে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস। এতে কাজের গতি বাড়বে বলে মনে করছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তারা বলেন, এতোদিন তাড়াহুড়ো করে অফিসে আসতে হতো। এখন অফিস ৯টা থেকে শুরু হলে সবারই সুবিধা হবে। তাড়াহুড়া করতে হবে না, ধীরে সুস্থে কাজ সেরে অফিসে আসা যাবে। ফলে অফিসের কাজের গতিবাড়ার পাশাপাশি খুশি সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীরা।
প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎসাশ্রয়ে এতদিন সকাল ৮টা থেকে চলছিল সরকারি অফিস। কিন্তু শীত মৌসুম আসায় দিন ছোট হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সকাল ৮টায় অফিসে আসা কষ্টকর। সেজন্য অফিস শুরুর সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯টা থেকে করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর, সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অফিসের নতুন সময়সূচিতে তারা খুশি। কারণ এখন সকাল হতেই ৮টা বেজে যায়। তাই নতুন সময়সূচির সিদ্ধান্তটা খুবই ভালো হয়েছে।
আগে ফজরের নামাজের পড়ে আর সময় থাকতো না। অফিসের জন্য বের হওয়া লাগতো। আর শীতের জন্য অফিস সময় ৯টা থেকে ৪টা খুবই সুবিধাজনক। কাজ সেরে সকাল ৮টার মধ্যে অফিসে আসাটা কষ্টকর ছিল। নতুন অফিস সময়ে আমরা খুশি। পাশাপাশি কাজের গতি বাড়বে। দুপুরের খবারের পড়ে অনেক সময় পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক আহমেদ গণমাধ্যম কে বলেন, সরকার অত্যন্ত ভালো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত পজিটিভলি দেখছি। কারণ সামনে শীত এ সময়ে এরকম একটি সিদ্ধান্ত কাজের গতি বাড়িয়ে দেবে। ৯টা ৪টা অফিস হওয়াতে দুপুরের লাঞ্চের পর কাজের সময় পাওয়া যাবে। ৮টা থেকে বিকেল ৩টা অফিসের সময়ে সেটা পাওয়া যেতো না। তাছাড়া তখন ভোর থেকেই তাড়াহুড়ো শুরু হতো এখন সেটা কমবে কর্মকর্তা কর্মচারীরা ধীরে সুস্থে অফিসে আসতে পারবেন।
এছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশে গ্রীষ্ম ও শীতকালে অফিস সময় রিশিডিউল করে থাকবে। আমাদের এখানে সেটা হয় না। তবে সরকার বিদ্যুৎসাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে করেছে সেটা সফল হবে পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সুবিধা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বকশি গণমাধ্যম কে বলেন, সরকার আমাদের যে সময় নির্ধারণ করে দেবে আমরা সে সময়ই অফিস করতে বাধ্য। আজ থেকে অফিসের নতুন সময় হওয়ায় সকালে একটু সময় পেয়েছি।
ধীরে সুস্থেই অফিসে আসতে পেরেছি। তবে আমার মতামত হলো, সামনে শীত মৌসুম আসছে পাশাপাশি দিন ছোট হয়ে আসছে সকাল ৮টায় অফিস একটু কষ্ট হয়ে যায়। এখন ৯টা থেকে ৪টা হওয়াতে একটু সুবিধা হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই অফিস টাইম রিসিডিউল করে। সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে এটা করেছে। সরকারের এ উদ্যোগ অবশ্যই ভালো।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক দপ্তরের অফিস সহায়ক রাকিবুল হাসান গণমাধ্যম কে বলেন, আজকে সকালে একটু রিলাক্সে বাসা থেকে বের হতে পেড়েছি। অন্যদিন সকালে অফিসের জন্য তৈরি, বাচ্চার স্কুল, বাড়ির কাজ সব কিছু নিয়ে টেনশনে থাকতে হতো। এখন সকালে এক ঘণ্টা সময় পাওয়াতে সব কিছুতে সুবিধা হয়েছে।
এদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও চলছে নতুন সূচিতে আজ থেকে ব্যাংক লেনদেন সকাল ১০ টায় শুরু হয়েছে, চলবে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। আর ব্যাংকের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনও চলছে নতুন সূচিতে। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান চলছে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, স্বাভাবিক সময়ে সরকারি অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লেনদেন আর লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো ৬টা পর্যন্ত। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গত ২৩ আগস্ট থেকে অফিসের সেই সূচিতে পরিবর্তন আনে সরকার।
সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস করছেন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা। বর্তমানে ব্যাংক লেনদেন পরিচালিত হচ্ছে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টাু পর্যন্ত। শীত মৌসুমকে সামনে রেখে গত ৩১ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন সময়সূচি অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
শীত চলে আসায় গতকাল মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর থেকে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলছে । শীতকালে সকাল ৮টায় অফিসে আসতে অসুবিধা হবে। তিনি বলেন, আদালত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়সূচির বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত তারা নেবেন। এছাড়া স্কুল কলেজের সময়সূচির বিষয়ে উনাদের (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) কর্তৃপক্ষ যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবেই হবে।