ফাস্টফুডের দোকানদার বেকার সমাজ থেকে বঙ্গলীগ নামে রাজনৈতিক দলের আবেদন ইসিতে,

Uncategorized অন্যান্য



!! নির্বাচন কমিশন (ইসি)তে আবেদিত ৯০ টি দলের তালিকার মধ্যে ৪১ টি দলের অফিস পাওয়া গেলেও ৪ টি দলের হদিস মেলেনি !!


নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ফাস্ট ফুডের দোকান চালান মো. হাসান। এটাই তাঁর আয়ের উৎস। তিনি বাংলাদেশ বেকার সমাজ নামের একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছেন নির্বাচন কমিশনে (ইসি)।

ইসিতে আবেদন করা আরেকটি দলের নাম নাকফুল বাংলাদেশ। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই নারী। জেলা ও উপজেলা কমিটির সভাপতি হতে পারবেন না কোনো পুরুষ। অথচ দলটির চেয়ারম্যান একজন।

ইসির কাছে নিবন্ধন চেয়ে যে ৯৩টি দল আবেদন করেছে, সেগুলোর তত্ত্ব-তালাশ করতে গিয়ে এমন সব অদ্ভুত বিষয় বেরিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন চেয়ে আবেদনকারীদের তালিকায় আছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী, জমিজমা বেচাকেনার পরামর্শদাতা, আইনজীবী, শিক্ষক, স্থপতি, সাংবাদিকসহ সমাজের সর্বস্তরের ব্যক্তিরা।

জানা গেছে, ঠিকাদারি, আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করেন গণ রাজনৈতিক জোট, ইনসানিয়াত বিপ্লব, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টিসহ সাতটি দলের নেতা। বাড়িভাড়ার টাকায় চলেন জাতীয় বঙ্গলীগের সভাপতি শওকত হোসেন মিঞা। শুভাকাঙ্ক্ষীদের চাঁদায় ন্যাপ (ভাসানী) চালান মোসতাক আহমেদ ভাসানী। আর তিনি চলেন ছেলে এবং বিদেশে থাকা ভাইয়ের টাকায়।

নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া ৯৩টি দলের তালিকা ধরে আজকের দেশ এর প্রতিনিধিদল অনুসন্ধানে গেছেন ঢাকায় ৪৫টি ঠিকানায়।

এগুলোর মধ্যে ৪১টির খোঁজ মিলেছে, বাকি ৪টির হদিস মেলেনি। ওই সব ঠিকানায় যাঁদের পাওয়া গেছে, তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা হয়েছে। আর যাঁদের ঠিকানায় পাওয়া যায়নি, তাঁদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন আজকের দেশ প্রতিবেদকেরা। এ রকম ৩৬টি সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী একসময় স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন এ এফ এম সোলাইমান চৌধুরী। বর্তমানে আবুল খায়ের গ্রুপের অন্যতম নির্বাহী পরিচালক। তাঁর দল এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি) সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের চাঁদায় চলে বলে তাঁর দাবি।
নৈতিক সমাজ নামের দলের নিবন্ধন চেয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমসাআ আমিন। অবসর ভাতা আয়ের উৎস স্বপন রেজার। ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। চেয়েছেন নাকফুল বাংলাদেশ নামের দলের নিবন্ধন।

জমি বেচাকেনার পরামর্শ
পেশাজীবনে কিছু না করার অভিযোগ আছে স্ত্রীর। তিনি ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন। পেশা কী জানতে চাইলে বললেন, পারিবারিক সম্পদ দেখাশোনা করা। দলটির মহাসচিব মো. জহিরুল ইসলাম জমিজমাসংক্রান্ত বিষয়ে মানুষকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। স্ত্রীর অভিযোগ যেমনই হোক, আনোয়ার হোসেন নিজেকে পুরোদস্তুর রাজনীতিক মনে করেন। তাই তাঁর দলকে সময় দেওয়া উচিত বলে ঠিক করেছেন। জমি কেনাবেচা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন এস এম আশিক বিল্লাহ। শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার বিষয়েও পরামর্শ দিতেন। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেওয়া এখন বন্ধ। আহ্বায়ক হিসেবে তিনি চেয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নিবন্ধন।

শিক্ষক, স্থপতি, আইনজীবী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয় দেওয়া নিবন্ধনপ্রত্যাশীর একজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) আবদুর রহমান। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জানতে চাইলে বললেন, তিনি খুব অসুস্থ। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। শিক্ষক হিসেবে পরিচিত অপর এক ব্যক্তি চেয়েছেন সাধারণ জনতা পার্টির নিবন্ধন। স্থপতি হিসেবে পরিচয় দিলেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী। আইনজীবী শাহরিয়ার ইফতেখার চেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় লীগের নিবন্ধন।

সাংবাদিক, গবেষকও
সাংবাদিক পরিচয়ধারী কিছু লোকও কয়েকটি দলের নিবন্ধন চেয়েছেন। দলগুলোর মধ্যে আছে পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএনডিএম), গণ আজাদী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি।
গবেষক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির প্রধান আইসিডিডিআরবির সাবেক চাকরিজীবী মো. দেলোয়ার হোসেন।
বেকার সমাজ থেকে বঙ্গলীগ
ঠিকানা আছে, অফিস নেই
নির্বাচন কমিশনের তালিকা ধরে অনুসন্ধানে গিয়ে অন্তত ৩ ভাগের ১ ভাগ ঠিকানায় দলগুলোর অফিস মেলেনি। ছোট-বড় যেমনই হোক, অর্ধেকের বেশি ঠিকানায় অফিস পাওয়া গেছে। আর কিছু কিছু দলের অফিস আছে নামমাত্র।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যান এলাকার একটি ঠিকানা ধরে কড়া নাড়া হলো জাতীয় ইসলামী মহাজোটের অফিসে। বেরিয়ে এলেন এক তরুণী। জানালেন দলের চেয়ারম্যান তাঁর মামা হন। একটু পর এলেন চেয়ারম্যানের স্ত্রী। দলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, দলটির নাম কী? নাম শুনে বললেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। পরে পাওয়া গেল চেয়ারম্যান আবাসন ব্যবসায়ী মাওলানা আলতাফ হোসাইনকে। তাঁর দাবি, বাসার গ্যারেজেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। নির্মাণের কারণে বন্ধ আছে। শিগগির চালু করবেন।

বাংলাদেশ জনতা পার্টির ঠিকানা ধরে কমলাপুরে ইস্টার্ন কমপ্লেক্স নামের বহুতল ভবনে গিয়ে দলটির অফিসের কোনো অস্তিত্ব মেলেনি কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক রফিক জানালেন, দলের নামে অফিস ভাড়া নেওয়া হয়েছিল ছয় মাস আগে। চাকরি দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ ছিল এই ভাড়াটের বিরুদ্ধে। ভাড়া বাকি রেখে তিন মাস আগে চলে গেছেন তাঁরা। প্রতারণার শিকার অনেক মানুষ এখনো আসে তাঁদের খোঁজে। নিবন্ধন পাওয়ার আবেদনে দুটি মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে।

কাগজপত্রে আম জনতা পার্টির ঠিকানা ২০৫, বিজয়নগর, ঢাকা। পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় ওষুধের দোকান, আর একটি চায়ের দোকান। পুরো ভবন ঘুরেও দেখা মেলেনি দলের কার্যালয়। দুই দোকানি জানালেন, কোনো দলের অফিস নেই ওই ভবনে। ভবনের তৃতীয় তলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শাহ আলমের চেম্বার। তিনি বললেন, চার-পাঁচ বছর ধরে আছেন এই ঠিকানায়। কোনো দলের নামে অফিস কিংবা কাজকর্মের কথা তিনি শোনেননি। দলের সভাপতি হাসিবুর রহমান তালুকদারের মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *