নড়াইলের লোহাগড়া পৌর-সভায় অনিয়ম দুর্নীতি,ভুয়া টেন্ডারে অর্থ আত্মসাৎ,পর্ব ১

Uncategorized আইন ও আদালত

মো:রফিকুল ইসলাম,নড়াইলঃ
নানান অদৃশ্য খাত দেখিয়ে ভুয়া টেন্ডার ও বিল ভাউচারের মাধ্যমে লোহাগড়া পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়,এডিপির উন্নয়ন প্রকল্প,টিআর, হাটবাজার ইজারা,স্থানীয় করসহ সরকারের সকল বরাদ্দ থেকে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।অনুসন্ধানে জানা যায়,স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০২০-২১ অর্থ বছরে লোহাগড়া পৌরসভার অনুকূলে করোনা ও মশক নিধন সামগ্রী ক্রয়ের জন্য,নয় লাখ ৮৮ হাজার নয়শ’ ৯৮ টাকা বরাদ্ধ দেয়। বরাদ্ধকৃত অর্থের ব্যয় দেখাতে প্রকৌশলী শেখ স্যাইয়াদুল হক ওই অর্থ বছরের শেষ দিন ৩১ জুন কাগজে কলমে দুটি প্যাকেজে কোটেশন দরপত্র আহবান করেন। এক নম্বর প্যাকেজের প্রাক্কলিত মূল্য চার লাখ ৭১ হাজার নয়শ’ ৯৯ টাকা। প্যাকেজটিতে চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে মর্মে কাগজপত্র প্রস্তুত করা হয়। যেসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেখানো হয়েছে সেগুলো হলো (১) মেসার্স বিশ্বাস এন্ড সন্স,প্রোপাইটর মো: জিয়াউল হুদা,(২) মেসার্স ফকির এন্টারপ্রাইজ, প্রোপাইটর মো: জাহিদুল ইসলাম,(৩) মেসার্স শুভ এন্টারপ্রাইজ,প্রোপাইটর শেখ ইমরান হোসেন এবং (৪) মেসার্স তালুকদার ফোর্ট প্রোপাইটর,টিএম শফিউল আলম,অপর প্যাকেজের প্রাক্কলিত মূল্য পাঁচ লাখ ১৬ হাজার নয়শ’ ৯৯ টাকা। প্যাকেজে চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে দেখানো হয়। এগুলো হলো (১) মেসার্স বিশ্বাস এন্ড সন্স,প্রোপাইটর মো: জিয়াউল হুদা, (২) সান ট্রেডার্স,প্রোপাইটর মো: রবিউল ইসলাম রবি, (৩) মেসার্স ফকির এন্টারপ্রাইজ,প্রোপাইটর জাহিদুল ইসলাম এবং (৪) মেসার্স তালুকদার ফোর্ট, প্রোপাইটর টি এম শফিউল আলম। উভয় প্যাকেজে মেসার্স তালুকদার ফোর্টকে সর্বনিম্ন দরদাতা দেখিয়ে প্রকৌশলী শেখ স্যাইয়াদুল হক তার পূর্বের কর্মস্থল মণিরামপুর থেকে নামমাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার করোনা ও মশক নিধন সামগ্রী ক্রয় করেছেন। মণিরামপুরের সরবরাহকারী (দোকানি) একটি সিএনজি অটো রিকশায় লোহাগড়া পৌরসভার প্রকৌশলী বরাবরে ওই মালামাল প্রেরণ করেন । মালামাল গুলো বিতরণ না করে স্টোরজাত করে রেখেছেন যাতে ক্রয় ও টেন্ডার নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্নের সম্মুখিন হলে উক্ত মালামাল স্টোরে এবং অক্রয়কৃত মালামাল বিতরণ করা হয়েছে বলে চালিয়ে নিতে পারেন। মেসার্স তালুকদার ফোর্টের ঠিকাদার টিএম শফিউল আলম পৌরসভার কর আদায়কারী সোনিয়া আফরোজের ভাই। চাকরির সুবাদে সোনিয়া আফরোজের সাথে সহকারী প্রকৌশলী স্যাইয়াদুল হকের সক্ষতা রয়েছে। সেই সুবাদে পৌরসভার অধিকাংশ প্রকল্পের অর্থ ভুয়া টেন্ডারে মেসার্স তালুকদার ফোর্টকে দেয়া হয়। এজন্য ঘুরেফিরে ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এভাবে মেসার্স তালুকদার ফোর্টের অনুকূলে বরাদ্ধকৃত অর্থ ছাড় করে আত্মসাত করা হচ্ছে।লোহাগড়া পৌরসভার একাধিক ঠিকাদার বলেন, পৌরসভার প্রায় সব কাজই অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে করা হয়। যদি নিরপেক্ষ তদন্ত হয় তবে অনিয়ম- দুর্নীতিতে নিমজ্জিত লোহাগড়া পৌরসভার থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। তারা আরও অভিযোগ করেন, মেসার্স তালুকদার ফোর্টের প্রোপাইটর টিএম শফিউল আলম একজন প্রকৌশলী। তিনি সিলেটের একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করেন। দরপত্রের সময় তিনি সেখানে কর্মরত ছিলেন। উভয় দরপত্রের অপর ঠিকাদার’রা বলেন,তারা এই দরপত্রের দুটি প্যাকেজের বিষয়ে কিছুই জানেন না। সিডিউল ক্রয়,দরপত্র জমা এবং ব্যাংকের পেঅর্ডার কিছুই তারা করেন নি। তবে,যেহেতু তারা ঠিকাদারী করেন,পৌরসভার সাথে তাদের ব্যবসা রয়েছে,বকেয়া বিলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা পৌরসভার কাছে জিম্মি,সে কারণে তাদের কাছে জানতে চাইলে ‘দরপত্র জমাসহ সব কিছুই করেছি’বলা ছাড়া কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক ঠিকাদার। দরপত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তাদের অনেকে এই প্রতিবেদককে বলেন,দরপত্রে ঠিকাদারের স্বাক্ষর পরীক্ষা করলেই জালিয়াতি ধরা পড়বে। এ বিষয়ে লোহাগড়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী শেখ স্যাইয়াদুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,পৌরসভার যাবতীয় সব কিছুই মেয়র মহোদয় করেন। মেয়রের অনুমতি ছাড়া কারও কিছু করা সম্ভব নয়। পৌর মেয়র সৈয়দ মসিয়ুর রহমান বলেন,তিনি একই সাথে লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী-লীগের সাধারণ সম্পাদক। দলীয় ও সামাজিক কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পৌরসভার প্রকৌশলী বিষয়গুলি দেখে থাকেন। তাছাড়া টেন্ডারটি তার দায়িত্ব গ্রহণের আগে হয়েছে বলেও জানান মেয়র। তারপরও কোন অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি ।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *