চলমান শুদ্ধি অভিযান
বিশেষ প্রতিবেদক : দেশব্যাপী চলমান শুদ্ধি অভিযানের ফলে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিতর্কিত কর্মকা-ের নানা চিত্র সামনে চলে আসছে। দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। তবে আসন্ন সম্মেলনে সে শঙ্কা বাধা হতে পারেনি। সম্মেলনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা।
ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদচ্যুতির মধ্যদিয়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপরই ক্যাসিনো সম্পৃক্ততা ও অনিয়মের অভিযোগে যুবলীগের বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন কেউ কেউ। সর্বশেষ যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুককে যুবলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পাঁচ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ২ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগ, ১২ নভেম্বর জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগ এবং ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হবে। ২৩ নভেম্বর যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন গুলোর আগ পর্যন্ত এই শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হবে বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।
আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুদ্ধি অভিযানকে কেন্দ্র করে বিতর্কিতদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করলেও সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলো নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে। সম্মেলনগুলোয় যাদের শীর্ষ পদে আগ্রহ রয়েছে তারাও তাদের কার্যক্রম বেশ জোরেশোরে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়, আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে যাতায়াত বৃদ্ধির পাশাপাশি গণভবন কেন্দ্রীয় যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন। নানা অজুহাতে গণভবনে প্রবেশসহ আওয়ামী লীগ সভাপতির নজর পেতে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ বাড়িয়েছেন।
রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ভবনটি আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। তবে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠনের জায়গা বরাদ্দ সম্পন্ন না হওয়ায় আশপাশের ভবনের ভাড়াকৃত অস্থায়ী কার্যালয় থেকে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নেতাকর্মীরা এসব কার্যালয়ে যাতায়াত করতে থাকেন। তবে সব থেকে বেশি ভিড় দেখা যায় বিকেলের পর থেকে। নেতাদের সঙ্গে কর্মীরাও আসেন কার্যালয়ে। সম্মেলনকে সামনে রেখে কার্যালয়ের সামনে কর্মীদের নিয়ে শোডাউন দেন কোনো কোনো প্রার্থী।
চলমান শুদ্ধি অভিযানের আওতায় এসেছেন ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও যুবলীগের শীর্ষ নেতারা। তবে শিগগির আওয়ামী লীগ নেতাদেরও এর আওতায় আনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সম্প্রতি সচিবলায়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যারা দেশে অপরাধ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাড় দেয়া হবে না। যেসব কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠবে তারা আগামীতে মনোনয়ন পাবেন না। এটি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। তিনি বলেন, গুটিকয়েক লোকের কারণে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্জন ম্লান হতে দেয়া যায় না। অপরাধীদের মাথায় যারা ছাতা ধরবে তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
