বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের উকিল হিসেবে পরিচিত তিন বিদেশি আইনজীবী–টবি ক্যাডম্যান, স্টিভেন কে কিউসি, জন ক্যামেগ এখন বহির্বিশ্বে সরব বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায়

Uncategorized অন্যান্য


বিশেষ প্রতিবেদক ঃ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের উকিল হিসেবে পরিচিত তিন বিদেশি আইনজীবী–টবি ক্যাডম্যান, স্টিভেন কে কিউসি, জন ক্যামেগ–এখন বহির্বিশ্বে সরব বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায়। কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে একটি গোষ্ঠীর হয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর কাছে নিয়মিত ধরনা দিচ্ছেন বাংলাদেশকে দেয়া সুবিধা তুলে নিয়ে আর্থিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে।

পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বরোচিত গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করে ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের ঋণ শোধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলাদেশের মানুষ।

অথচ এ সময়েই যুদ্ধাপরাধীদের রেহাই দিতে শুরু হয় অপপ্রচার, বিকৃত তথ্য দেয়া আর বিদ্বেষের ষড়যন্ত্র। ২০১০ সালে লাখো শহীদ পরিবারের সঙ্গে বেইমানি করার উকিল হিসেবে পরিচিত মার্কিন লবিস্ট ফার্ম ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে ২৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করা হয়।

মীর কাশিম আলীর স্বার্থরক্ষায় মার্কিন সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চালানো হয় জোর তৎপরতা। উদয় হন এ তিন আইনজীবী ছাড়াও স্বাধীনতাবিরোধীদের দোসর ডেভিড বার্গম্যান।

বিদেশি গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিনিয়ত বিচার নিয়ে কুৎসা রটানোই ছিল বিদেশি এ আইনজীবীদের কাজ। তবে শেষ পর্যন্ত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিতের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের বিজয় হলেও পরাজয় মানতে নারাজ স্বাধীনতাবিরোধীদের এ বিদেশি দোসররা।

তাইতো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে টার্গেট করে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব তৈরি, তাদের দিয়ে অর্থনৈতিক-সামরিক নিষেধাজ্ঞার খড়গ চাপাতে কূটকৌশল চালিয়ে আসছেন ডেভিড বার্গম্যান ও টবি ক্যাডম্যানরা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে টবি ক্যাডম্যান স্বীকার করেন, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বর্তমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য কাজ করছেন তিনি। নতুন করে ব্রিটিশ ও মার্কিন সরকারের কাছে ধরনা দিচ্ছেন বাংলাদেশের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিতে।

নিজেদের মানবাধিকার কর্মী ও আইনের রক্ষক হিসেবে পরিচয় দিলেও টবি ক্যাডম্যান, স্টিভেন কে কিউসি, জন ক্যামেগের ইতিহাস বলছে, বরাবরই টাকার কাছে বিক্রি হয়ে বিভিন্ন দেশে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের রেহাই পাইয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছেন তারা। সিয়েরা লিওনের নাবিশায় জাতিগত নিধনের প্রধান অভিযুক্ত অগাস্টিন গাবাওয়ের পক্ষের উকিল ছিলেন জন ক্যামেগ। গণহত্যার জন্য ২৫ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত গাবাওয়ের সাজা কমানোসহ মামলার বিচারকাজ বিলম্বিত করার অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।

বসনিয়া হার্জেগোভেনিয়া গণহত্যার বিচার চলাকালেও সব অভিযুক্তের পক্ষের উকিল ছিলেন টবি ক্যাডম্যান। শুধু তাই নয়, স্টিভেন কে কিউসিসহ এ তিন কুশীলব ২০১০ থেকে লাগাতার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তৃতা করে আসছেন।

সবশেষ গত ৬ ডিসেম্বর ব্রাসেলসে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকে বিএনপি জোট সরকার আমলের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের এনজিও ‘অধিকার’ প্রশ্নে বাংলাদেশকে দেয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সুবিধা প্রত্যাহার করে আবারও নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেন টবি ক্যাডম্যান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, দীর্ঘকাল পরে হলেও সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবীরা এ সরকারের পক্ষে অবস্থান করবে বা এ সরকারের কার্যক্রমগুলো সহজে মেনে নেবে–এটা ভাববার কোনো কারণ তখনও ছিল না, আজও নেই।

অথচ টবি ক্যাডম্যান দিয়ে আজ যে একটা ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে, তার জন্য যত চক্রান্ত আছে দেশে-বিদেশে, সবই তারা কার্যকর করার চেষ্টা করছে।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি আর স্বাধীনতাবিরোধীদের দোসর বার্গম্যান-টবি ক্যাডম্যানরা স্বাধীন বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট করে এ দেশের ওপর বিদেশি শক্তির খড়গ আনতে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ আমিন উদ্দিন বলছেন, বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়েই বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে বিদ্বেষমূলক বিকৃত প্রচারণা চালাচ্ছেন বার্গম্যান-টবি ক্যাডম্যানরা। এসব কুশীলবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘ভাড়া করা মানুষ হিসেবে তারা এসব কাজ করছে। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বলছে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে।

এখানে আমাদের কথিত সুশীলদের বলব বাংলাদেশ কি আপনার দেশ নয়? আমাদের দেশের বদনাম করার কারণে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত।’

এদিকে গত ২৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের কথা স্বীকার করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারবিরোধী প্রচারণা চালাতে ও বাংলাদেশের ওপর বিদেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপে স্টিং অপারেশন বাড়াতে লবিস্টের পেছনে মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট–এমন অভিযোগ উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে।

এদিকে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দলটির নেতাকর্মীদের সরকারবিরোধী কর্মসূচি পালনে সাহস জুগিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণেই বিএনপির সাম্প্রতিক সময়ে করা বিভিন্ন জনসভা ও রাজপথের কর্মসূচি সফল হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *