২৪ বছর পালিয়ে থাকা যাবতজীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব

Uncategorized আইন ও আদালত



!! দীর্ঘ ২৪ বছর পালিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হলোনা নবু প্রামানিক হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মজিবরের !!



নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ গত ১৬ নভেম্বর ১৯৯৮ সালে বিকাল অনুমান সাড়ে ৫ টার সময় ফুটবল খেলা নিয়ে ভিকটিম নবু প্রামানিক এর ছেলে মোঃ বাদশার সাথে আসামী মোঃ মজিবরের চাচাতো শ্যালক মোঃ বরকতের সাথে বিরোধ বাধে। এরই সূত্র ধরে ভিকটিম নবু প্রামানিক এর স্ত্রী নুর নাহারের সাথে আসামী মোঃ মজিবরের স্ত্রী জুলেখার মধ্যে কথা কাটাকাটি ও চুল টানাটানি হয়।

একপর্যায়ে উক্ত ঝগড়া থামানোর জন্য নবু প্রামানিক চেষ্টা করে। উক্ত সময়ে ঘটনাস্থলে মোঃ মজিবর, ছমির, আলতাফ, লেবু, জামাল এবং আব্বাছ দাঁ, লাঠি, শাবলসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভিকটিম নবু প্রামানিক এর উপর অতর্কিত ভাবে আক্রমন করে। সেখানে উপস্থিত আসামী মজিবরের হাতে থাকা নৌকার কাঠের বৈঠা দিয়ে ভিকটিম নবু প্রামানিককে আঘাত করে গুরুতর জখম করে, যার ফলে ভিকটিম নবু প্রামানিক এর মাথার মগজ বাহির হয়ে যায়।

তখন ভিকটিম নবু প্রামানিক মাটিতে পড়ে গেলে জামাল ও অন্যান্য আসামীদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি ভাবে মারধর করে ভিকটিম নবু প্রামানিক এর মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থ থেকে পালিয়ে যায়।

ভিকটিমের স্ত্রীর চিৎকার শুনে আশপাশ হতে লোকজন এসে ভিকটিম নবু প্রামানিককে রক্তাত্ত অবস্থায় উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম নবু প্রামানিককে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের স্ত্রী নুর নাহার বাদী হয়ে আসামী মোঃ মজিবর সহ সর্বমোট ০৭ জনকে আসামী করে একই দিন মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-১৪(১১)৯৮ তারিখ-১৭/১১/১৯৯৮, ধারা ১৪৮/৩০২/৩২৩/৩২৪/১১৪ পেনাল কোড।

মামলা হওয়ার পর আসামী মোঃ মজিবর ব্যতিত বাকি এজাহারনামীয় সকল আসামী থানা পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয়। মামলা হওয়ার পর থেকেই আসামী মজিবর আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা ০৩ মাস হাজত খেটে ১৯৯৯ সালে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।

উক্ত মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারনামীয় আসামী মোঃ মজিবর’কে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন এবং এজাহার নামীয় বাকি ০৬ জন আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশীট থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন।

পরবর্তী চার্জশীটের ভিত্তিতে আদালত উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম নবু প্রামানিক হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামী মোঃ মজিবরকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। পলাতক আসামী মোঃ মজিবর মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় প্রথম থেকেই গত ২৪ বছর পলাতক ছিল।

আসামীর জীবন বৃত্তান্তঃ আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী ১৯৬২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন রাজনগর এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। সে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করেননি। ব্যক্তিগত জীবনে আসামীর ঘরে তার দুইটি মেয়ে এবং একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ১৯৯৮ সালের পর থেকে আসামী আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে অবস্থান করেন নাই।

আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় আসামীর জীবনযাপনঃ আসামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় এবং ঐ মামলায় সে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লোক চক্ষুর আড়ালে আত্মগোপন করেন। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে ঢাকায় চলে আসে।

গত ২৪ বছর ধরে আসামি মোঃ মজিবর নাম পরিবর্তন করে মোঃ কালাম নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুরহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামী নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে সে পেশা পরিবর্তন করে। প্রথমদিকে সে দিনমজুর, রিক্সাচালক হিসেবে কাজ করে। পরবর্তীতে আসামী মোঃ মজিবর মোহাম্মদপুরের আদাবর থানা এলাকায় অবস্থান করে মাছ ধরে আত্মগোপনে থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।

দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ ও গোপন তদন্তের ভিত্তিতে র‍্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল আসামী মজিবরকে ঢাকার মোহাম্মদপুর হতে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *