গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আনজাম এখন দুবাইয়ে

Uncategorized অপরাধ


নিজস্ব প্রতিবেদক : বিনিয়োগের টাকায় অধিক মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েক হাজার বিনিয়োগকারীর কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে আনজাম গ্লোবাল লিমিটেড নামের একটি ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে বলে জানান নবাবগঞ্জ থানার এসআই মৃত্যুঞ্জয় কুমার কীর্তুনিয়া।বিনিয়োগের মাধ্যমে অনলাইনে আইডি খুলে দিয়ে বিনিয়োগকারীদের রাতারাতি অধিক মুনাফার স্বপ্ন দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানটি এ প্রতারণা করেছেন বলে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ। এতে নবাবগঞ্জ উপজেলাসহ তার পার্শ্ববর্তী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ সহ সারাদেশের হাজার হাজার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অসংখ্য নারী পুরুষ ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ফাঁদে পা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।এক ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারী অভিযোগ করে বলেন, এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও নিজের ও সংগ্রহের বিনিয়োগের টাকা ফেরত না পেয়ে ইতোমধ্যে থানায় দুইবার অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি তার।ভুক্তভোগী কয়েকজন বিনিয়োগকারী আরও জানান, ওই কোম্পানির মাধ্যমে প্রতারণায় যারা জড়িত তাদের সকলকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়াসহ তাদের বিনিয়োগের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করার ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সহযোগীতা চায় তারা।ভুক্তভোগীরা জানান, ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের সিংজোর গ্রামের বাসিন্দা মো. জালাল উদ্দিন আহম্মেদ বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নবাবগঞ্জ উপজেলার সভাপতি ও ঢাকা জেলা দক্ষিণ আঞ্চলিক শাখার সহ-সভাপতি। এছাড়াও সে দৈনিক নওরোজ পত্রিকার দোহার-নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি (সাংবাদিক)। ও মূলত এগুলোর পুঁজি করে অতি সহজে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে প্রতারণা করে আসছে। এক কথায় বলতে গেলে ও একটা প্রতারক।ভুক্তভোগীরা আরও জানান, ওই জালালই নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পাশের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের উল্টো দিকের হামদর্দ বিল্ডিংয়ের ২য় ও ৩য় তলায় অফিস ভাড়া নিয়ে চীনের ফুড সাপ্লিমেন্ট প্রোডাক্ট দিয়ে ‘তিয়ানশি’ নামে একটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) সিস্টেমের প্রতিষ্ঠানের নবাবগঞ্জের প্রধান হয়ে কাজ শুরু প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। পরবর্তীতে সেখানে তার সঙ্গে যুক্ত হয় বাসুদেব চন্দ্র শীল ও তার বোন জুমুরি বিশ্বাসসহ আরও কয়েকজন। এরপর থেকেই এই চক্রটি বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অসংখ্য নারী-পুরুষকে সেখানে যুক্ত করে স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণায় বাধ্য করেন। এভাবে কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর স্থানীয়রা প্রতারণার বিষয়টি বুঝে গেলে চক্রটি তিয়ানশির ওই ভাড়া অফিস কৌশলে ছেড়ে দিয়ে নবাবগঞ্জের কাশিমপুর এলাকায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিপরীতের গলির একটু সামনে জাকিরের বাড়ির তিনতলা বিশিষ্ট একটি বিল্ডিংয়ের ১ম তলার পুরোটা ভাড়া নিয়ে আনজাম গ্লোবাল লিমিটেড নামের একটি ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানের অফিস নিয়ে কাজ শুরু করে আরও বড় প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে এরা একজন গ্রাহককে অনলাইনে ২০০ আইডি দেওয়ার প্যাকেজসহ একাধিক প্যাকেজের প্লান দেখিয়ে বিভিন্ন কায়দায় গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়াসহ আনজাম ই-কমার্স মেগাশপ প্যাকেজের শেয়ার দেখিয়ে অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে আরও দুই লাখ করে টাকা নেয় ওই চক্রটি। এছাড়াও আনজামের ই-কমার্সের সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রতি আইডি ১ হাজার ৬০০ টাকা বিনিয়োগ করে গ্রাহক ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিনিয়োগের অর্ধেক টাকা ফেরত পাবেন প্রলোভন দেখানো হয়। পরবর্তীতে সফটওয়ারে বিজ্ঞাপণ ক্লিক করে প্রত্যেক আইডিতে প্রতিদিন একবার করে ক্লিক করে ১০ টাকা করে আয় করার পদ্ধতিসহ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) সিস্টেম মেনে লভ্যাংশ বন্টনসহ প্রতি লাখে ২৫ হাজার টাকা লাভ দেওয়ার প্রলোভনও দেখানো হয়েছে।মূলত অনলাইনে আইডি খুলে অধিক মুনাফা দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে কয়েক হাজার বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নবাবগঞ্জের প্রধান জালাল উদ্দিনসহ ওই চক্রটির কয়েকজন এখন গাঁ ঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা আরও জানান, শুরু থেকেই আনজাম গ্লোবালের ফাউন্ডার ও সিইও মো. আরিফুল ইসলাম দুবাই থেকে জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্স করে লভাংশসহ টাকা ফেরত দিবে বলে প্রায়ই প্রতিশ্রুতি দিতেন।কিন্তু এই আরিফ জেল থেকে জামিন নিয়েই তার সিন্ডিকেটের সদস্য সহ পরিবার নিয়ে এখন দুবাইতে আয়েশে জীবন যাবন করছে, সে মুলত প্রায় হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে সেখানে আর সেখানেও নতুন করে প্রতারনার ব্যবসা শুরু করেছে, যার টার্গেট অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার দের হাম জমা করলেই কিছুদিনের মধ্যে ২হাজার দেরহাম পাবে এমন প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে প্রতি মাসেই টাকা দিবে এমন অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ৩ বছর পেড়িয়ে গেলেও গ্রাহকদের বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। সরজমিনে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে উপজেলার কাশিমপুর এলাকায় আনজামের ভাড়া করা যে অফিস ছিল সেখানে গিয়ে দেখা যায় তিনতলা বিশিষ্ট বিল্ডিংটির প্রথমতলার পুরোটাই ফাঁকা। সেখানে এখন আনজামের কোনো অফিস নেই। পরে তাদের বিষয়ে জানতে বাড়ির মালিক জাকিরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রথম তলার পুরোটাই তিনি আনজাম গ্লোবাল লিমিটেড নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে মাসিক ভাড়ায় ভাড়া দিয়েছিলেন। আনজামের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে তাদের বনিবনা হচ্ছিল না। তারা বিভিন্নভাবে সমস্যা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছিল। এজন্য গতমাসের শেষের দিকে তারা অফিস ছেড়ে চলে গেছে। কোথায় চলে গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তার জানা নেই। তবে নবাবগঞ্জে আনজাম নতুন করে কোনো অফিস ভাড়া নেয়নি বলে নিশ্চিত করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *