নিজস্ব প্রতিবেদক : টিসিবি অডিটরিয়ামে (টিসিবি ভবন, ২য় তলা,১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫) আসন্ন পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে অংশীজন এবং ঢাকা সিটির অধীন সকল বাজারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, এফবিসিসিআই এর সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ হাফিজুর রহমান, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আরিফুল হাসান, পি.এস.সি. এবং বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দীন।
অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব ) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় এবং ঢাকা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালকগণ, ঢাকা সিটির অধীন প্রায় সকল বাজারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ, বিভিন্ন অংশীজন এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
উল্লেখ্য, মতবিনিময় সভাটি অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
সভায় আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ যেন স্বাভাবিক থাকে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অবৈধ মজুদ, পন্যের মূল্য তালিকা না দেয়া, ক্রয়ের ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ না করা, বিক্রয়ের ক্যাশমেমো না দেওয়া, আমদানি সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র না থাকা, পাইকারি মূল্য খুচরা মূল্যের সামঞ্জস্য না থাকা এবং ভোক্তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত পন্য ক্রয় করার বিষয়েও আলোচনা করা হয়।
সভায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল ও সরবরাহ সংকট হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান এলসি খোলার ক্ষেত্রে সমস্যা, ডলার এর মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি, অসাধু ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার লোভে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, ডলারের মূল্য স্থিতিশীল থাকলে আসন্ন রমজান মাসের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় ৬টি পণ্য (চাল, ডাল, তেল, ছোলা, চিনি, ও খেজুর) এর মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
সভায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আরিফুল হাসান পি.এস.সি. রমজান মাসে ভোক্তাদের সংযমী হতে আহবান জানান এবং এ মাসে টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে অবহিত করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক(অতিরিক্ত সচিব) মোঃ হাফিজুর রহমান ভোক্তাদের মিতব্যয়ী হতে এবং ব্যবসায়ীদের কম লাভ করে যৌক্তিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করার অনুরোধ করেন।
আলোচনায় কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান জানান বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে ভোক্তা সঠিক মূল্যে ন্যায্য পণ্য পাবে।
এফবিসিসিআই এর সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন জানান কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা হঠাৎ করে পণ্যের দাম বাড়ালে দায় সকল ব্যবসায়ী নিবে না। পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয় করে সবদিক বিবেচনা করার বিষয়ে নজর দিতে বলেন।
আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সাথে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সমন্বয় করে কাজ করার সংস্কৃতি তৈরির বিষয়ে পরামর্শ দেন।
সভায় মহাপরিচালক বলেন, আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সকলের সাথে সমন্বয় করে নিবিড়ভাবে বাজার অভিযান পরিচালনা জোরদার করা হবে।
প্রতিদিন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৫০টি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৪ টি টিম বাজার মনিটরিং করবে। পণ্য মজুদ রেখে বাজার অস্থিতিশীল করা হলে উক্ত বাজার কমিটিকে তার দায় নিতে হবে।
ন্যায্য মূল্যে ট্রাকসেলের মাধ্যমে যৌক্তিক মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য রিফাইনারি ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানান। তিনি মুক্ত আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণকারীবৃন্দের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, রমজান মাসের মূল লক্ষ্য সংযম ও আল্লাহভীতি। ব্যবসায়ীদের নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে হবে।
২০৪১ সালের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের যে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে, সেখানে আমাদের অর্থনীতি হবে স্মার্ট ইকোনমি, বাজার হবে সিস্টেমেটিক। স্মার্ট ইকোনমির গঠনের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা হবে।
পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া কঠিন। আর মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হলে সেটা অবশ্যই মানতে হবে। স্বচ্ছতার সাথে যার যার অবস্থান থেকে নিয়ম মেনে ব্যবসা করলে এবং যার যার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থার সৃষ্টি হবে।
আলোচনা শেষে সিনিয়র সচিব আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে মসলাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যেন বৃদ্ধি না পায় সে বিষয়ে সকলে সমন্বিতভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।