রাজধানীর ধোলাইপাড় থেকে কুতুবখালী খাল পর্যন্ত আবর্জনার ভাগাড় এখন দৃষ্টিনন্দন স্থানে পরিনত হয়েছে

Uncategorized অন্যান্য



নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ পূর্ব দোলাইরপাড় থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত দীর্ঘ এ খাল ছিল আবর্জনার ভাগাড়, দুর্গন্ধে হাঁটা যেত না। সংস্কারের পর সেই খালপাড়ের চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে। একসময় খালপাড়ে নিয়ম করে ময়লা ফেলা হতো। দুর্গন্ধে খালপাড় দিয়ে হাঁটা দূরের কথা, কাছেও যাওয়া যেত না।

সেই খালপাড়ই এখন বিশ্রামের জায়গা। এখন খালপাড় দিয়ে মানুষ হাঁটার পাশাপাশি সেখানে বসে একটু জিরিয়ে নিতে পারছে। তবে খালের এক পাড় বদলে গেলেও অন্য পাড় এখনো ময়লার ভাগাড়। একই খালের দুই পাড়ের ভিন্ন দৃশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।

এখন অন্য পাড়ের লোকেরাও ময়লা সরিয়ে একই ধরনের পরিবেশ তৈরির দাবি করছেন। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কুতুবখালী খালের পাড়ে গিয়ে এ অবস্থা দেখা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পূর্ব দোলাইরপাড়ে কুতুবখালী খালের অবস্থান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, কুতুবখালী খালের প্রস্থ ছিল প্রায় ৫০ ফুট। গভীরতা ছিল ৮ ফুট।

বিশেষ স্বার্থন্বেষী মহলের অবৈধ দখলের ফলে খালের পূর্ব দোলাইরপাড় অংশের প্রস্থ নেমে আসে প্রায় ৩০ ফুটে। এরপর সেখানে দোকানপাট বসানো হয়। দোকানের নিচ দিয়ে বর্জ্য ও মাটি ফেলে আস্তে আস্তে খালের ভেতরে দখল আরও বাড়াতে থাকে তারা। এ অবস্থায় খালটির উত্তর পাড়ে সংস্কার কাজ করা হয়। এখন দক্ষিণ পাড় বদলের আশায় সেখানকার বাসিন্দারা।

এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রথমে এই কাজে বাধা এলেও এখন তারাই পরিবর্তনটি চাচ্ছেন। বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ কাজ করেছে। মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস চাচ্ছেন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দাবি উঠলে তখন দখল উচ্ছেদ করে বড় আকারে করা সহজ হবে। তাই এলাকাবাসীর দাবিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন মেয়র। তিনি বলেছেন, এক পাড় যখন ব্যবহার উপযোগী হবে, তখন অন্য পাড়ের লোকেরাও চাইবে সুন্দর পরিবেশ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) প্রকৌশল বিভাগের তথ্যানুযায়ী খালটির দৈর্ঘ্য ৯০৬ দশমিক ৩০ মিটার, ফুটপাতের দৈর্ঘ্যও ৯০৬ দশমিক ৩০ মিটার। আর ফুটপাতের গড় প্রস্থ ১ দশমিক ২০ মিটার। খালপাড়ে বসার জন্য ৪টি বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ১১৬টি বাতি স্থাপন করা হয়েছে। পুরো খালপাড়টি এখন দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।

কুতুবখালী খালের উত্তর পাশে হাঁটার পথসহ বেষ্টনী নির্মাণে ব্যয় হয় ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩০২ টাকা। খালপাড়ে যেন কেউ ময়লা না ফেলে সে জন্য খালপাড়কে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে ২০২২ সালের ৯ মে স্বপন ট্রেডিং করপোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয় ঢাদসিক কর্তৃপক্ষ। কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. সাইফুল ইসলাম জয় গণমাধ্যম কে বলেন, আগেও কুতুবখালী খাল সংস্কার হয়েছে; কিন্তু যথাযথভাবে পরিকল্পনা হয়তো ছিল না। এক সময় যেখান দিয়ে মানুষ হাঁটতে পারত না, এখন সেখানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে, গল্প আড্ডা করছেন এলাকাবাসী। খুব বেশি কিছু না, শুধু মেয়র মহোদয়ের একটা পরিকল্পনা ছিল খালপাড়টি ব্যবহার উপযোগী করা। এখন সেখানে রাতের বেলাতেও মানুষ বসে সময় পাড় করেন। এক পাড়ে করা হয়েছে অন্যপাড়ে দখলদার ও স্থানীয়দের বাধা থাকায় করা হয়নি। এখন তারাও চাইছেন এভাবে খালপাড় দৃষ্টিনন্দন করা হোক। হয়তো মেয়র নতুন কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন। তখন ওই পাড়ও ঠিক হয়ে যাবে।

এর আগেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খাল থেকে বর্জ্য অপসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে সেই কাজ কিছুটা গতি পেলেও সুফল পায়নি স্থানীয়রা। কারণ খাল থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হলেও খালপাড়ে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে পারেননি তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তাই খালটিতে বর্জ্য ফেলা বন্ধে নতুন করে পরিকল্পনা করেন বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

ঢাদসিক সূত্রে আরও জানা যায়, তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কুতুবখালী খাল খনন ও দনিয়া রোড সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
একটি প্রকল্পের অধীনে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে দনিয়া রোড সংস্কার, কুতুবখালী খাল খননসহ ১৫টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। খাল থেকে বর্জ্য অপসরণ করা হলেও কয়েক মাস পড়ে আবার বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়ে যায়। খালটি স্থায়ীভাবে যেন পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা যায় সে জন্য নতুন করে বর্জ্য অপসারণ ও পাড় রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেন বর্তমান মেয়র।

পূর্ব দোলাইরপাড়ের দনিয়া রোডে ওয়াসার পানির পাম্প (জোন-৭) পর্যন্ত কুতুবখালী খালের মাঝ বরাবর (প্রায় ১৫ ফুট) বাঁশ ও টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি অংশে পাইলিং করছেন শ্রমিকরা। পাশে দুটি মোটর দিয়ে খালের পানি অপসারণ করা হয়।

পূর্ব দোলাইরপাড় কাঁচাবাজারের উত্তর অংশ পর্যন্ত খালের ভেতরে বাঁশ পুঁতে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ৩০টি দোকান।এসব অবৈধ দোকান এবং ওয়াসার পানির পাম্পের কারণে এখনো পুরো খালের দুই পাড় দৃষ্টিনন্দন করা সম্ভব হয়নি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *