বিএসইসির তদন্তে সিমটেক্সের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে

Uncategorized অপরাধ অর্থনীতি আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক :   শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছে। ভারতের কারাগারে থাকা আলোচিত পিকে হালদারের কাছে এ অর্থ পাচার করছে কোম্পানিটি। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মো. সিদ্দিকুর রহমান পিকে হালদারের বন্ধু ও বিশ্বস্ত সহযোগী।


বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক তদন্ত প্রতিবেদনেও পিকে হালদারের সঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান ও সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও নতুন চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগেও অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে বিএসইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন

সূত্র মতে, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়াজ রহমান সাকিব কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুরের রহমানের পুত্র। প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাৎ করে তিনি (সাকিব) ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ভারতে থাকা পিকে হালদার কাছে পাঠাচ্ছেন। বিএসইসির তদন্তেও সিমটেক্সের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের অনিয়মের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি সদস্যরা হলেন, বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওহিদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাহমুদুর রহমান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের উপ-মহাব্যবস্থাপক সাইয়েদ মাহমুদ জুবায়ের। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করেছে।

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবের একক স্বাক্ষরকারী। লেনদেনের কোন সীমা ছাড়াই তিনি ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারতেন। এ সুযোগে তিনি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করলেও বিভিন্ন বিল পরিশোধ করেছেন মাত্র ২৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকার। অর্থাৎ কোম্পানিটির প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ অর্থবছরের (২০২২ সাল) অডিট রিপোর্টের সঙ্গে আগের বছরের প্রতিবেদনের অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, কোম্পানির তহবিল আত্মসাতের জন্য সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ভুয়া ভাউচার তৈরী করেছে। ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ২১ কোটি ৯১ লাখ টাকার ১৩৩টি উচ্চ মূল্যের নগদ চেকের কপি পেয়েছে বিএসইসি। অথচ সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ২৯৮৬টি ভাউছার জমা দিয়েছে।

বিএসইসির তদন্ত কমিটি বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখেছে। এর মধ্যে- এস.আর থ্রেডস অ্যান্ড এক্সেসরিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, কোম্পানিটি প্রতি বছর ৩০/৩৫ লাখ টাকার মতো থ্রেড সরবরাহ করতো সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে।

তবে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের জমা দেওয়া নথিতে বলা হয়েছে, তাঁরা এসআর থ্রেডসকে ২০২২ অর্থবছরে নগদ আড়াই কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এছাড়াও চেকের মাধ্যমে আরও ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানায় সিমটেক্স। বিএসইসির তদন্ত কমিটি বলছে- অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এ ভুয়া ভাউছার তৈরী করেছে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।

এছাড়াও এস এম প্লাস্টিক নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে প্লাস্টিক সরবরাহ বাবদ নগদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে লাখ ৭৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা পরিশোধের তথ্য দিয়েছে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। এর মধ্যে নগদ ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা এবং ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৫৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা পরিশোধের কথা জানানো হয়।

তবে এস এম প্লাস্টিক বিএসইসিকে জানিয়েছে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের শুধুমাত্র চেকের মাধ্যমেই বিল পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ নগদ যে ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা পরিশোধের কথা সিমটেক্স জানিয়েছে তার পুরোটাই ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে।

এদিকে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের বর্তমান চেয়ারম্যানসহ দুই পরিচালককে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্ত কমিটি বলছে, পরিচালনা পর্ষদের সংশ্লিষ্ট বৈঠকে চেয়ারম্যান নিয়োগের কোন এজেন্ডা ছিল না। সিমটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ রহমান সাকিব আকস্মিকভাবে ওই বৈঠকে ইওআই উপস্থাপন করেন। এছাড়াও মাত্র ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ শেয়ারের বিপরীতে নতুন করে দুইজনকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অথচ বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেকের ন্যূনতম ২ শতাংশ করে মোট ৪ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিএসইসি বলছে, চেয়ারম্যান এবং পরিচালক নিয়োগে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশনের আদেশ লঙ্ঘন করেছে।

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলায় দুদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, তার স্ত্রী মাহফুজা রহমান, দুই ছেলে নিয়াজ রহমান সাকিব (সিমটেক্সের বর্তমান এমডি) এবং ইসতিয়াক রহমান ইমরান, তার ভাই মো. এনসান আলী শেখ। ফলে আদালত এই ব্যক্তিদের সিমটেক্সের শেয়ারহোল্ডিং জব্দ করার নির্দেশ দেন। এছাড়া পৃথক আদেশে আদালত মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও তার স্ত্রী মাহফুজা রহমানের বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

তালিকাভুক্তির পর থেকে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফা কমছে বলেও বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তালিকাভুক্তির সময় সিমটেক্সের নিট মুনাফা ছিল প্রায় ১০ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে যায়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব অসীম কুমার সাহা গণমাধ্যম কে বলেন, কোন কিছু জানার থাকলে অফিস চলাকালীন সময়ে যোগাযোগ করুন।

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, বিএসইসিকে সব ধরণের ক্ষমতা দেওয়া আছে। তাঁরা চাইলে এ ধরণের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নিজেরা ব্যবস্থা নিতে পারে, আবার মামলাও করতে পারে। অন্যান্য কোম্পানিতেও এ ধরণের কোন অনিয়ম হচ্ছে কি না সেটিও বিএসইসির দেখা উচিৎ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম গণমাধ্যম কে বলেন, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে যদি তদন্ত কমিটি কোন সুপারিশ করে সেটি কমিশন বিবেচনা করবে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিএসইসি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *