এম এ স্বপন : অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব শেখ হাসিনা দলের দুর্দিনে ত্যাগীদের মূল্যায়নের কথা বলছেন, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়েও রয়েছে ভাবনা- এসব বিবেচনায় এবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এক ঝাঁক নতুন মুখ দেখা যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
তারা বলছেন, ত্রিবার্ষিক এই সম্মেলনে পরীক্ষিত তরুণদের অনেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চলে আসতে পারেন, চমক হয়ে দেখা দিতে পারে গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তনও।
আগামী ২১-২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে ঘিরে পদ প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাপের মধ্যে রয়েছে নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনাও।
আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনাই থাকছেন বলে জানিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। তবে অন্য আর কারও পদই নিশ্চিত নয়, সেক্ষেত্রে বদল হতে পারে সাধারণ সম্পাদক পদেও। পদোন্নতি ঘটতে পারে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের কয়েকজনের। এসব জায়গায় আসতে পারেন তুলনামূলক নতুন মুখ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ভবিষ্যতের নেতৃত্বের কথা আমাদের ভাবতে হবে। এখানে ম্যাচিংয়ের একটা বিষয় আছে। আওয়ামী লীগে যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন সবাই সবার জায়গায় যোগ্য। তবে এবারের সম্মেলনে তুলনামূলকভাবে তরুণ নেতৃত্ব আসবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।
সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব আসছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এই পার্টিতে শেখ হাসিনা অপরিহার্য। সভাপতি পদে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। তিনিই আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকছেন।
আগামীর নেতৃত্ব কেমন হবে-সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সকল সম্মেলনেই নেতৃত্বের পরিবর্তন নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। এবারও তেমনই হবে। অপেক্ষাকৃত তরুণরাই সামনের দিকে আসবে।
তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা উপদেষ্টাম-লীকে আরো শক্তিশালী করে সভাপতি পদটি ছেড়ে দিতে পারেন। তাহলে আওয়ামী লীগে পরিপূর্ণ একটি তরুণ নেতৃত্ব আসতে পারে। সেক্ষেত্রে সভাপতি পদে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাধারণ সম্পাদক পদে সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী হতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। আরেকটি সূত্র বলেছে সজীব ওয়াজেদ জয় এখনই সক্রিয় রাজনীতিতে আসতে চাচ্ছেন না। যদি তিনি সজীব ওয়াজেদ জয় সভাপতি না হন তাহলে শেখ হাসিনা দলের সভানেত্রী হিসেবে আবারও নির্বাচিত হবেন।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলের ৮১ সদস্যের কমিটিতে প্রায় ২৫ জন তরুণকে নেতৃত্বে আনা হয়েছিল, যারা বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
সেই হিসেবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে অনেকেই সভাপতিম-লীর সদস্য হতে পারেন, সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন কেউ কেউ।
জ্যেষ্ঠ একজন নেতা বলছেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অন্তত দুইজন সদস্য এবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি আলোচনায় আছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আজমত উল্লাহ খান।
সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বি এম মোজাম্মেল হক এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদকে নিয়েও রয়েছে আলোচনা।
সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো পরিবর্তন না এলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানককে সভাপতিম-লীর সদস্য এবং সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিন, বি এম মোজাম্মেল ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে বলেও আলোচনা রয়েছে।
ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজীত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এবং কেন্দ্রীয় সদস্য থেকে এস এম কামাল হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, মির্জা আজম ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন বলে শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।