নিজস্ব প্রতিবেদক : মঙ্গলবার ৮ আগস্ট, সকাল সাড়ে ১০ টায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ভোক্তা-অধিকার বিষয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সংক্রান্ত বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
উল্লেখিত প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালকগণ, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার স্বাগত বক্তব্যে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। শোকের মাস আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতা মনন গঠনের হাতিয়ার এবং এটি চিন্তনকে প্রসারিত করে। এর মাধ্যমে একটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, প্রতিটি ধর্মেই জ্ঞান অন্বেষণ করার কথা বলা হয়েছে।
আমি বিশ্বাস করি এই বিতর্কের মাধ্যমে একটি প্রাজ্ঞ সমাজ গঠিত হবে এই প্রত্যাশা করি। বিতর্ক প্রতিযোগিতার এই মহৎ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। কম জনবল নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে আইনের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ভোক্তা-অধিকার রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই এমন একটি বাজার ব্যবস্থা যেখানে ব্যবসায়ী জানবে যে ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কাজ করা যাবে না। তারুণ্যের উপর নির্ভর করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আমি আশা করি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ তাঁদের লেখনি দ্বারা ভোক্তা-অধিকার সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে তাঁদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।
আলোচনায় বিশেষ অতিথি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাথে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে এক নব দিগন্তের সূচনা হলো। সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সাথে বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাজ করাটা কঠিন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করার ক্ষেত্রে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর মাইফলক হয়ে থাকবে।
আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব এ এই অধিদপ্তরের নিয়মিত কার্যক্রম দেখি যা ভোক্তা-সাধারণের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
তিনি বলেন আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করব ভোক্তা-অধিকার সম্পর্কে মানুষকে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার। তিনি বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দুটি দল থাকে; সরকারি ও বিরোধী দল। তাদের যুক্তি তর্কের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়। তিনি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে অনুষ্ঠানে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন সাধারণ মানুষ যখন আইনের অধীনে বিচার পায় না তখন গণমাধ্যমের কাছে যায়।
তিনি বলেন, তরুণ শিক্ষার্থীগণ এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সমাজ রাষ্ট্র তথা সরকারের নিকট ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে তুলে ধরবে। আমি সরকারের নিকট সুপারিশ করব যেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে রাষ্ট্রীয় কোন পদকে ভূষিত করা হয়। এতে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা বাড়বে।
বর্তমান সময়ে অধিদপ্তরের নিকট মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। এখন কোন সমস্যা হলেই সাধারণ মানুষ তাকিয়ে থাকে ভোক্তা অধিকার কেন আসে না? কিছু হলেই ভোক্তা সাধারণ এখন জানতে চান ভোক্তা অধিকার কি করছে? এটাই এই অধিদপ্তরের জন্য অর্জন। এই অধিদপ্তরের জনবল ও সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। অধিদপ্তর যত শক্তিশালী হবে প্রান্তিক পর্যায়ে ভোক্তাগণ তত সুফল পাবে। তিনি আরও বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের এই সময়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সোনালী সময় অতিবাহিত করছে। অধিদপ্তরের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে অধিদপ্তর যেন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ না হয়। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সততা ও মহত্ব যত বাড়বে, অধিদপ্তরের প্রতি ভোক্তার আস্থা তত বাড়বে। পরিশেষে ভোক্তা-অধিকার রক্ষায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাথে কাজ করার সুযোগ প্রদানের জন্য আমি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আলোচনা শুরুতে মহাপরিচালক বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব প্রেরণের জন্য ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান । তিনি বলেন, আজ অধিদপ্তরের জন্য একটি বিশেষ দিন। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় ভোক্তা-সাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে অধিদপ্তর নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালিত করছে। প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রমকে বেগবান করার লক্ষ্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি কর্তৃক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। সে প্রেক্ষিতে প্রেরিত প্রস্তাব মহাপরিচালক জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে উত্থাপন করেন। ভোক্তা-সাধারণের সচেতনতার বিষয় বিবেচনায় পরিষদে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। অধিদপ্তরের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, CCMS(Consumer Complaint Management System) এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা এই পদক্ষেপেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা।তরুণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ভোক্তা-সাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন অধিদপ্তরকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা যৌথ ভাবে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে ভোক্তা-সাধারণকে সচেতন করার যে উদ্যোগ নিয়েছি আমি তার সফলতা কামনা করছি।
মহাপরিচালক আলোচনায় আরও বলেন, গত ৩ আগস্ট মাস্টার্স অব প্রফেশনাল মার্কেটিং (MPM) প্রোগ্রাম চালুকরণ ও বর্ণিত প্রোগ্রামসহ মার্কেটিং বিভাগের কারিকুলামে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর হয় ।
এর ফলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন,২০০৯ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে আইনটি অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা খাতে ভোক্তা-অধিকার বিষয়ে প্রচারে এক নব দিগন্তের সূচনা হয়। তাছাড়া যেকোনো তথ্যের জন্য অধিদপ্তরের হট লাইন নম্বর ১৬১২১ এ ফোন করে ভোক্তাগণ তথ্য জানতে পারছেন। তিনি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সুপারশপে প্রদর্শিত স্ক্রীনে ভোক্তা-অধিকার সম্পর্কে প্রচারণার বিষয়ে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১১ আগস্ট , শুক্রবার সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হবে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব টিপু মুনশি এমপি। তিনি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ উপস্থিত সকলকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
পরিশেষে ভোক্তা-অধিকার রক্ষায় সকলে সমন্বিতভাবে কাজ করবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।