সর্বজনীন পেনশন বীমার নিবন্ধনে ব্যাপক আগ্রহ মানুষের

Uncategorized অর্থনীতি আইন ও আদালত জাতীয় জীবন-যাপন বানিজ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : এখন পর্যন্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন করেছেন। বয়সের দিক থেকে ৩১ থেকে ৪০ বছরের লোকজন বেশি রয়েছেন। এই স্কিমে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় ঢাকা বিভাগের লোকজন বেশি নিবন্ধন করেছেন।


বিজ্ঞাপন

গত সোমবার পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশনের চারটি স্কিমের আইডি পেয়েছেন ৬ হাজার ১০৩ জন। যদিও আবেদনের সংখ্যা কয়েক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকেই পেনশন আইডি পাবেন। অর্থ সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।


বিজ্ঞাপন

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, অর্থ বিভাগ প্রাথমিক একটি হিসাব করেছে। সেখানে দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে যদি ১০ লাখ মানুষ চারটি স্কিমে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের চাঁদার পরিমাণ গড়ে ৫ হাজার টাকা হয়, সেক্ষেত্রে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার তহবিল তৈরি হবে। যদি অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা এক কোটি হয়, এক্ষেত্রে তহবিলের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০ হাজার কোটি টাকা।

ফলে স্কিমটি পুরোপুরি চালু হলে সরকারের টাকার সংকট থাকবে না। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছানো হবে চ্যালেঞ্জ। অর্থ বিভাগ সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে। কারণ, মানুষ সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে ধারণা না থাকলে তা গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে না। ব্যাপক সাড়া থাকলেও বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা পাওয়ার বিষয়ে এখনো নেতিবাচক মনোভাব তো আছেই।

বিশেষ করে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের টাকা নিয়ে হয়রানির নজির কম নয়। নতুন পেনশন স্কিমে সেই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি হয় কি না, সেই চিন্তায় আছেন অনেকে। অতীতে সরকারি বা আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিলের অর্থ অব্যবস্থাপনার নজির রয়েছে। তাই যারা পেনশন সুবিধাভোগীর টাকা বিনিয়োগ করবেন, তাদের স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার উদ্বোধনের পর ব্যাপক সাড়া পড়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে। কয়েক লাখ আবেদন করলেও ২১ আগস্ট সোমবার পর্যন্ত নিবন্ধন পেয়েছেন ৬ হাজার ১০৩ জন। এর মধ্যে সুরক্ষা (স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য) স্কিমে আইডি পেয়েছেন ১ হাজার ৮২৮ জন, সমতা (স্বল্প-আয়ের নাগরিকদের অংশগ্রহণ) স্কিমে পেয়েছেন ৮৭৫ জন এবং প্রবাসীদের জন্য খোলা প্রবাসী স্কিমের আইডি ১৪৮ জন পেয়েছেন।

এদিকে স্কিমে দুটি বিষয় নিয়ে মানুষের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। প্রথম, পেনশনের টাকা সহজে ফেরত পাবেন কি না এবং দ্বিতীয়, নমিনির যদি ভোটার আইডি কার্ড না থাকে সেক্ষেত্রে করণীয়। কারণ, অনেক আগ্রহী ব্যক্তি নমিনি হিসাবে তার শিশুসন্তানকে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে শিশুর ভোটার আইডি কার্ড নেই।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, স্কিমটি চালু হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় ২১ আগস্টের মধ্যে পেনশন তহবিলে জমা পড়েছে ৩ কোটি ৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। কিন্তু সুবিধাভোগীরা কিস্তি বাবদ যে অর্থ দিচ্ছে, সেটির তহবিল ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, কীভাবে এবং কোথায় পেনশন তহবিল বিনিয়োগ হবে, লভ্যাংশ কীভাবে বণ্টন করা হবে, সেগুলো নিয়ে অস্পষ্টতার মধ্যে থাকার কথা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে আলাদা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধিমালা তৈরির কথা জানিয়েছেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে এই তহবিল সরকারি বন্ড বা ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগের কথা রয়েছে। যেসব বিনিয়োগে ঝুঁকি কম, সেদিক বেছে নেওয়া হবে। যদি ফান্ড আরও বড় হয়, তাহলে উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হতে পারে। এটা সময়ের পরিক্রমায় হবে। এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা তৈরি হচ্ছে, সেই মোতাবেক সব হবে।

তবে এই পেনশন তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। তহবিল ব্যবহারের নীতিমালা থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের বাদ দেওয়া হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, এই কর্মসূচিতে আসতে হলে আগের সুবিধা সমর্পণ করতে হবে। তাদের এই কর্মসূচিতে আনতে হলে সমপরিমাণ অর্থ সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান হিসাবে পরিশোধ করতে হবে। না হলে তারা আসবে না।

বিভাগভিত্তিক নিবন্ধন : অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২১ আগস্ট পর্যন্ত এই স্কিমে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন করেছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে নিবন্ধন পেয়েছেন ১ হাজার ৮৩৯ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ। সেখানে নিবন্ধন করেছেন ১ হাজার ৬৫৪ জন। এছাড়া খুলনায় ৭৩১, রাজশাহীতে ৫৪৪, রংপুরে ৩৯০, বরিশালে ৩৮৮, ময়মনসিংহে ৩৫২ এবং সিলেটে ২০৫ জন।

মধ্যম বয়সিরা নিবন্ধনে এগিয়ে : নিয়মানুযায়ী কারও বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে হলে অনলাইনে এই স্কিমে নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন। সুবিধাভোগীর বয়স ৬০ বছর বা এর বেশি হওয়ার পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা আছে। ইতোমধ্যে নিবন্ধনের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৩১ থেকে ৪০ বছরের বয়সিরা এখন পর্যন্ত নিবন্ধনে এগিয়ে আছেন।

এই গ্রুপের নিবন্ধনের সংখ্যা হচ্ছে ২ হাজার ৬৫৪ জন, দ্বিতীয় অবস্থানে ৪১-৫০ বছর বয়সি। এই গ্রুপে অংশ নিয়েছেন ১ হাজার ৮৩৭ জন। তৃতীয় অবস্থানে আছেন ১ হাজার ১৯৮ জন, যাদের বয়স ২১-৩০ বছর। এছাড়া ১৮-২০ বছরের ৭৬ জন, ৫১-৬০ বছরের ৩১৩ জন এবং ৬১ বছরের বেশি বয়সের ২৫ জন নিবন্ধন করেছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *