বিশেষ প্রতিবেদন : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পরও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা নতুন করে ডিবিসি টেলিভিশনে বিশেষভাবে পুরস্কৃত হচ্ছেন, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে ডিবিসি টেলিভিশনের বিশেষ পুরস্কৃত হয়েছেন
সিইও ও প্রধান সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত পরামর্শক। জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে ভুয়া নিউজ করিয়েছেন। এনআরবিসি ব্যাংক লুটপাটের হোতা। কয়েক হাজার কোটি টাকা আমেরিকায় পাচারও করেছেন।
ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরীর নামে টেলিভিশনের লাইসেন্স। ডিবিসি নিউজে অর্থ লগ্নিকারী হিসেবে এমডি শহীদুল আহসানকে নিয়ে আসেন সিইও ও প্রধান সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম। এই সূত্রে এবং আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে কোনো ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই টিভি চ্যানেলের ১০% শেয়ার নিয়ে নেন তিনি।ডিবিসি নিউজের যাত্রা শুরুর সময় মালামাল কেনাকাটার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মঞ্জুরুল ইসলাম। এছাড়াও ট্রান্সপোর্ট, অনলাইন ও স্পোর্টস বিভাগ থেকে প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা চুরি করেন। গেল ১২ই সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে দেশ ছাড়েন সিইও মনজুরুল ইসলাম। গণহত্যা মামলার এ আসামি বিদেশে পলাতক থেকে পুরো অফিস নিয়ন্ত্রণ করছেন।
ব্রডকাস্ট হেড হামিদুর রহমান মুকুল : প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ পর্যন্ত যত কেনাকাটা হয়েছে, তার দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ-চারগুণ পর্যন্ত বেশি দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এই টাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন।ডিবিসি নিউজ থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থের ভাগ সিইও মনজুরুল ইসলাম ও চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে নিয়মিতভাবে দিয়ে আসছেন মুকুল। মুকুল যে চোর তা এমডি শহীদুল আহসানও জানেন। কিন্তু মনজুরুল ইসলাম ও ইকবাল সোবহান চৌধুরীর কারণে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
মানবসম্পদ ও প্রশান বিভাগের প্রধান ইয়াসমিন জাহানারা :
সিইও মনজুরুল ইসলামের খাস লোক। অফিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে রাখেন ইয়াসমিন জাহানারা। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পক্ষে থাকা কর্মীদের সিইওর ইশারায় বিনা কারণে শোকজ করছেন, চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিলেন। ।
অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর ও টক শো রাজকাহনের উপস্থাপক নাজনীন মুন্নী : একাত্তরের মোজাম্মেল বাবু ও শাকিল আহমেদের রক্ষিতা নাজনীন মুন্নী ডিবিসি নিউজে যোগ দেন ২০২২ সালের অক্টোবরে। সিইও মনজুরুল ইসলামকে ধরে মুন্নীর চাকরির ব্যবস্থা করে দেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর ডিপিএস আশরাফুল আলম খোকন।ডিবিসিতে এসে সিইওর ঘনিষ্ঠ লোক হয়ে ওঠেন মুন্নী। ৫ই আগস্টের আগে পর্যন্ত নিউজরুমে প্রায়ই বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে মশকরা করতেন তিনি। সাংবাদিকতাকে আড়ালে তদবির বাণিজ্য করাই তার মূল কাজ। এজন্য প্রয়োজন পড়লে বিছানায় শুতেও রাজি ছিলেন তিনি । সম্প্রতি নাজনীন মুন্নীকে হেড অব নিউজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন সিইও।
হেড অব প্রোডাকশন ও উপস্থাপক শোভন আরেফ : ডিবিসি টেলিভিশন অফিসে সিইওর এজেন্ডা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শোভন আরেফ। সিইওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় প্রোডাকশন টিমের যারা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, তাদেরকে মানসিকভাবে ও অফিসিয়ালি হয়রানি করছেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান ইয়াসমিন জাহানারা।এক নারী প্রেজেন্টারের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ায় শোভন আরেফের বিরুদ্ধে ডিবিসি নিউজ অভিযোগ করেছিলেন তার স্ত্রী। এরপর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন শোভন। দেড় বছরের ব্যবধানে আবারও তাকে ফিরিয়ে আনেন সিইও।
বিশেষ প্রতিনিধি আদিত্য আরাফাত : দুদক বিটের মাফিয়া রিপোর্টার এবং সিইও ও চেয়ারম্যান্যানের ঘনিষ্ঠ। বাড়ি ফেনীতে।দুদকের ভয় দেখিয়ে জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ের অসংখ্য বিএনপি-মনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন দুদকের অনেক কর্মকর্তাও। এছাড়া মামলায় জড়ানো কিংবা মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার মধ্য দিয়েও বিপুল অর্থ কামিয়েছেন। এই টাকায় রামকৃষ্ণ মিশন রোডে ফ্ল্যাট কিনেছেন। গাড়ি, জমিও কিনেছেন। চিকিৎসার প্রযোজন হলে সিঙ্গাপুর যান। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের সুপারিশে সরকারি টাকায় হজ করে এসেছেন তিনি ।
বিশেষ প্রতিনিধি রাজীব ঘোষ : ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW-এর এজেন্ট। রিপোর্টারদের মধ্যে সিইও মঞ্জুরুল ইসলামের অন্যতম সহযোগী। চ্যানেলে ভারতীয় দূতাবাস ও হিন্দুত্ববাদের নানা এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। রাজীব ঘোষ একজন উগ্র আওয়ামী লীগ সমর্থক।শেখ হাসিনা আমলে র্যাবের দালাল হিসেবে যেসব সাংবাদিক কাজ করেছেন, রাজীবের অবস্থান তাদের মধ্যে উপরের দিকে। বিনিময়ে র্যাবের ডকুমেন্টারি তৈরিসহ নানা ধরনের কাজ করে বিপুল অর্থ কামিয়েছেন।বিমান বাংলাদেশ, ইউএস বাংলা, নভো এয়ারসহ আরও কয়েকটি এয়ারলাইনসের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মাসিক মাসোহারা নেন রাজীব। বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের নিউজ যাতে কোথাও প্রকাশিত না হয়, সেই দিকটা দেখেন।অবৈধ টাকায় ফ্ল্যাট, গাড়িসহ দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন রাজীব।
উল্লেখ্য, রাজীব ঘোষের গুরু প্রণব সাহা। আর্থিক কেলেঙ্কারি ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ গেল আগস্টে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন প্রণব।
নিউজ এডিটর জান্নাতুল মাওয়া : রাজীবের গার্লফ্রেন্ড মাওয়া। তার সঙ্গে প্রণব সাহারও শারীরিক সম্পর্ক আছে। সিইও মনজুরুল ইসলামেরও খুব কাছের লোক। নিউজ এডিটর হলেও উনি মূলত ন্যাশনাল ডেস্কের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। ৬৪ জেলার প্রতিনিধিকে দেখভাল করেন মাওয়া। শেখ হাসিনার অন্ধ ভক্ত।
সিইও এবং রাজীব-আদিত্যর হয়ে অফিসে নানা ধরনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে জড়িত মাওয়া। তার বিরুদ্ধে নারী সহকর্মীদের ফাঁদে ফেলে রাজীব ও প্রণবের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করার অভিযোগ আছে।
লেখক : এ এস এম হুমায়ুন কবির,রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষক।