সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আপীল অ্যান্ড আরবিট্রেশন বোর্ডে বিচারাধীন মামলা তোয়াক্কা না করে সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ হতে দুর্নীতির দায়ে চূড়ান্ত বরখাস্ত হওয়া ওয়াজেদা পারভীন কে পুনর্বহাল করেছে বিদ্যালয়ের নবগঠিত এডহক কমিটি।

গতকাল রোববার এ বিষয়টি বিদ্যালয়ের অভিযোগকারী সাবেক শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য বিকাশ চন্দ্র সাহা লিটন ও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন এবং বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আসাদুজ্জামান সামাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন কে পুনর্বহাল করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ও শিক্ষক কর্মচারীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে ।

বিদ্যালয়ের অভিযোগকারী সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিযুক্ত শিক্ষক সূত্রে জানা যায়, সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক (ইংরেজী) মোস্তাফিজুর রহমান ও শিক্ষার্থীবৃন্দ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ লিখিতভাবে তুলে ধরে বিগত ২০২৪ ইং সালের ২৮ আগস্ট পৃথক পৃথকভাবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট দাখিল করেন।

দাখিলকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয় প্রধান শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ব্যাংক রশিদের মাধ্যমে আদায়কৃত অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা না দিয়ে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করে আত্নসাৎ করেন।
এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন এর বিরুদ্ধে দফায় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে কর্মসূচি পালন করে সকল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা অনাস্থা প্রস্তাব এনে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন ইউএনও’র নিকট। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দাবীতেও দফায় দফায় ইউএনও’র কার্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রাখে বিদ্যালয়ের শিক্ষাথীরা।
এ অভিযোগের আলোকে ২০২৪ ইং সালের ৩রা সেপ্টেম্বর তারিখে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কে আহ্বায়ক করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা সহ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি অভিযোগের তদন্ত করে নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে সক্ষম হন।
উক্ত তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন এর বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এ প্রেক্ষিতে বিগত ২০২৪ ইং সালের ২১ অক্টোবর তারিখে প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাব পত্র প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে ওয়াজেদা পারভীন তার জবাব দাখিল করেন।
দাখিলকৃত নোটিশের জবাব পর্যালোচনা করে সন্তোষজনক না হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় উল্লেখ করে বিগত ২০২৫ ইং সালের ৪ ঠা নভেম্বর তারিখে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার স্বাক্ষরিত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের পত্র দেন।
পরে চলতি বছরের ২রা জানুয়ারী তারিখে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুন কৃষ্ণ পাল চুডান্ত বরখাস্ত করে ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আপীল অ্যান্ড আরবিট্রেশন বোর্ডে মোকদ্দমা দায়ের করেন এবং মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
আপীল অ্যান্ড আরবিট্রশন বোর্ডে বিচারাধীন সত্ত্বেও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন ও বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য বিকাশ চন্দ্র সাহা লিটন নিশ্চিত করে বলেন, চলতি মাসের গত ১৫ জুন ম্যানেজিং কমিটির সভায় পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ সিদ্ধান্তের আলোকে গতকাল রোববার সকালে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনকে দায়িত্বভার দিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটি।
বিষয়টি বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য বিকাশ চন্দ্র সাহা লিটন ও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নব গঠিত এডহক কমিটির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীমকে মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন,সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পুনর্বহাল করার বিষয়টি আমাকে অবগত করা হয়নি। এ বিষয়টি জেনে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড,ময়মনসিংহ এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড.মো:শহিদুল্লাহ জানান, সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চুড়ান্ত বরখাস্ত করণ বিষয়ে আপীল অ্যান্ড আরবিট্রেশন বোর্ডে বিচারাধীন রয়েছে। তাকে পুনর্বহাল করার বিষয়টি জেনে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।