বীরগঞ্জে ঐতিহাসিক আদিবাসী মিলন মেলা  : জীবনসঙ্গীর খোঁজে তরুণ-তরুণীর উপচে পড়া ভিড়

Uncategorized ইতিহাস ঐতিহ্য গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিনোদন বিশেষ প্রতিবেদন রাজশাহী সারাদেশ

গোকুল চন্দ্র রায়, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর)  : দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হলো শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী মিলন মেলা। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মেয়েরা জীবনসঙ্গী খোঁজার প্রত্যাশায় হাতে চুড়ি, কপালে টিপ, রঙিন শাড়িতে সেজে হাজির হয় এই মেলায়। তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি সনাতন ও ইসলাম ধর্মাবলম্বী হাজারো মানুষের পদচারণায় মিলন মেলা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।


বিজ্ঞাপন

বিজয়া দশমীর বাসিয়া হাটের নর-নারী, কুমার-কুমারীও যোগ দেয় এই মিলন মেলায়। বিকাল ৫টা থেকে রাত পর্যন্ত নিজপাড়া ও মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ এবং বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির আয়োজনে নাচ-গান, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির নেতা যোসেফ হেমরম। প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মঞ্জুরুল ইসলাম মনজু। বিশেষ অতিথি ছিলেন মোহনপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান চৌধুরী শাহিন, নিজপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস, কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক রবিন মার্ডি এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক মনোজ কুমার রায়।


বিজ্ঞাপন

মেলার আনন্দে কেউ কেউ জানান, আগে তরুণ-তরুণীরা মেলায় পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে পেলে পরিবারের মাধ্যমে তা পরের বছর বিবাহবন্ধনে রূপ নিত। এখনো সেই ঐতিহ্য টিকে আছে, তবে বিয়ের আয়োজন কিছুটা ভিন্নভাবে হলেও মূল সংস্কৃতি অটুট রয়েছে।


বিজ্ঞাপন

এবারের মেলায় হরিপুরের চিন্তামনি হাসদা (১৯) ও মোহনপুরের হোপনা সরেন (২৫) নামের নতুন জুটি পরিবারসহ উপস্থিত হয়ে জানায়, তারা একে অপরকে পছন্দ করেছে, তাই নিয়ম-রীতিনীতি অনুযায়ী তাদের বিয়ে হবে। আয়োজকদের ধারণা, এবারের মেলায় দুই’শরও বেশি জুটি বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

বউ মেলাকে ঘিরে বিদ্যালয় মাঠ ও পুরো গোলাপগঞ্জ বাজার এলাকা ভরে যায় দোকানপাটে। জিলাপি, নিমকি, পিঠা, ফুচকা, চটপটি, গহনা, অলংকার, কসমেটিকস, খেলনা, গৃহস্থালির সরঞ্জাম, মাটির জিনিসসহ দেড় সহস্রাধিক দোকান বসে।

আদিবাসী নেতা জোসেফ হেমরম জানান, শুধু দিনাজপুর নয়, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, জয়পুরহাট ও নওগাঁ থেকেও অসংখ্য মানুষ মেলায় অংশ নেয়।

শত বছরের পুরনো এই ঐতিহ্যকে ঘিরে এলাকাবাসী গর্বিত এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক – এটাই সকলের প্রত্যাশা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *