রিয়াজুল হক সাগর, (রংপুর) : অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের মেয়াদকালেই বহুল আলোচিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, এটি কেবল একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয় এটি উত্তরাঞ্চলের কোটি মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন। সরকার যদি এ সময়ের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেয়, তবে নভেম্বর থেকে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে।

আজ শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর চেম্বার ভবন অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, “ঘড় পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়।
অতীতে পতিত স্বৈরাচারী সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনার স্বপ্ন দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত তা তিস্তার তীরে ডুবিয়ে দিয়েছে। আমরা আর প্রতারণার শিকার হতে চাই না। তিস্তার মানুষের জন্য অবিলম্বে বাস্তবায়ন চাই।”
তিনি আরও বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্য দূর হবে না, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে না, নদীভাঙন থামবে না। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সময়েই কার্যক্রম শুরু হোক। সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ৫ অক্টোবর রংপুর বিভাগের ৫ জেলায় পদযাত্রা। পদযাত্রা শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রধানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান।

আগামি ৯ অক্টোবর উপজেলায় পর্যায়ে গণ মিছিল ও গণসমাবেশ। ১৬ অক্টোবর ১০টি উপজেলায় নদী তীরবর্তী স্থানে একযোগে মশাল প্রজ্বলন কর্মসূচি পালিত হবে। দুলু বলেন, এর মধ্যেও যদি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না আসে, তাহলে নভেম্বর থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেই কর্মসূচি হবে জনতার আন্দোলন, যা সরকারকে বাধ্য করবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন উত্তরবঙ্গবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদী খনন, সেচব্যবস্থা, বাঁধ নির্মাণ এবং আধুনিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হলে উত্তরাঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ঘটবে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব দূর হবে, বর্ষায় ভাঙন কমবে। কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে একদিকে কৃষিজমি সেচের আওতায় আসবে, অন্যদিকে কৃষিপণ্য উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

তিস্তা তীরবর্তী মানুষেরা বছরের পর বছর ধরে প্রকল্প বাস্তবায়নের আশায় দিন গুনছেন। কিন্তু প্রতিবারই সরকারগুলো শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এ কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আস্থা সংকট তৈরি হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ফসল নষ্ট হয়, বর্ষায় ভাঙনে ঘরবাড়ি হারাতে হয়। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
নদী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টন ইস্যুতে সমঝোতা এবং কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া এ প্রকল্প পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার চাইলে প্রকল্পের প্রাথমিক ধাপ, যেমন নদী খনন, বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণ কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে পারে।
তাদের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি একটি নতুন গতি পাবে। শুধু কৃষি নয়, যোগাযোগ, শিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসা খাতেও পরিবর্তন আসবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুধু একটি উন্নয়ন উদ্যোগ নয়, এটি উত্তরবঙ্গের মানুষের বেঁচে থাকার প্রশ্ন।
তাই আন্দোলনকারীরা এবার স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন কথার ফুলঝুরি নয়, এখন বাস্তবায়নের সময়। নভেম্বর থেকে আন্দোলনের ঢেউ তিস্তার তীর ছাপিয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে যদি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলহাজ্ব সালেকুজ্জামান সালেকসহ তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও স্থানীয় বিশিষ্ট জনেরা।