দুর্যোগে জেলেরা, মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, নিউত্তাল সাগর, ঝড় বাতাসে টিকতে না পেরে ইলিশ শূন্য শতশত ট্রলার ফিরেছে উপকূলে

Uncategorized অর্থনীতি আইন ও আদালত খুলনা গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বরিশাল বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নইন আবু নাঈম তালুকদার, (বাগেরহাট) :  মা ইলিশ রক্ষায় ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার ঠিক আগমুহুর্তে দুর্যোগের কবলে পড়েছেন জেলেরা। বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় প্রবল ঝড়ো বাতাসে উত্তাল হয়ে ওঠে সাগর। ঢেউয়ের আঘাতে টিকতে না পেরে বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেল থেকেই গভীর সাগরে ইলিশ আহরণে নিয়োজিত বড় ফিশিং ট্রলারগুলো কূলে ফিরতে শুরু করে।


বিজ্ঞাপন

প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে বুধবার বাগেরহাটের শরণখোলার শতাধিক ফিশিং ট্রলার নিরাপদে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে এসে পৌঁছে। ছোটবড় মিলিয়ে আরো শতাধিক ট্রলার পথে রয়েছে। সেসব ট্রলারও বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই ঘাটে ফিরবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য আড়ৎদার ও ট্রলার মালিকরা।

নিষেধাজ্ঞার আগে শেষ ট্রিপে প্রচুর ইলিশ পাওয়ার আশায় থাকেন মহাজনরা। সেই আশায় লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে সাগরে পাঠিয়েছেন ট্রলারগুলো। কিন্তু বৈরি আবহাওয়া তাদের সেই আশা মুহুর্তেই নিরাশায় পরিণত করেছে। ঘাটে ফেরা শতাধিক ট্রলারের মধ্যে বেশিরভাগ ট্রলারেই চালান উঠবে না। ইলিশ না পাওয়ায় কয়েক কোটি টাকা লোকসান হবে বলে হতাশা প্রকাশ করেন জেলে ও মহাজনরা।


বিজ্ঞাপন

ঘাটে ফেরা জেলেদেরে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে শেষ ট্রিপে অনেক আশা নিয়ে তারা সাগরে রওনা হয়ে যান। সাগরে গিয়ে দুই-তিন দিন ঠিক মতো জাল ফেলতে পেরেছেন। কিন্তু এর পরই আবাহাওয়া খারাপ হতে শুরু করে। বুধবার সকাল থেকে প্রবল বেগে বাতাস শুরু হলে আর টিকতে পারেননি তারা। দ্রæত জাল তুলে সাগর থেকে উঠে আসেন। ঠিক মতো জাল ফেলতে না পারায় বেশিরভাগ ট্রলারেই চালান বাঁচবে না। আবহাওয়া ভালো থাকলে দুশ্চিন্তায় পড়তে হতোনা বলে জানান জেলেরা।


বিজ্ঞাপন

শরণখোলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়ৎদার মো. কবির হাওলাদার ও ইমাদুল ফরাজী জানান, লাল জালের যেসব বড় ট্রলার গভীর সাগরে মাছ ধরতে যায়, সেসব ট্রলারের মালিকরা সবাই এবার ধরা। এসব ট্রলারে লোকবল বেশি এবং প্রতি ট্রিপে খরচ হয় দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা। এমন শতাধিক ট্রলার রয়েছে যার একটিতেও চালান উঠবে না। সাদা জালের ছোট ট্রলারগুলোতে ইলিশ ধরা পড়েছে। এসব ট্রলারে খরচও কম। যে কারণে লাভবান হবেন ট্রলার মালিকরা।

শরণখোলা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন জানান, এবছর এমনিতেই তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি। এ কারণে বেশিরভাগ ট্রলার মালিক ও আড়ৎদার লাখ লাখ টাকা লোকসানে রয়েছেন। আশা ছিলো নিষেধাজ্ঞার আগের শেষ ট্রিপে সেই ক্ষতি পোষানোর। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ায় তা আর হলো না। বড় ট্রলারের বেশিরভাগই প্রায় শূন্য হাতে ফিরেছে।

সেসব ট্রলার মালিকরা লোকসানে পড়বে। কোনো ট্রলারে ১০০ কোনো ট্রলারে দেড়শ ইলিশ পেয়েছে। তবে সাদা জালের ছোট ট্রলারগুলোতে বেশি ইলিশ ধরা পড়েছে বলে শোনা গেছে।
শরণখোলা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন সরকার জানান, মা ইলিশ রক্ষায় শনিবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরসহ স্থানীয় নদ-নদীতে ইলিশ আহরণ, মজুদ ও বিপননে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য কারীর বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে দুই বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এজন্য আগে থেকেই উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে শরণখোলার সকল ট্রলার মালিক, আড়ৎদার ও জেলেদের নিয়ে সভা করে সতর্ক করা হয়েছে।

শরণখোলা ৬হাজার ৮০০ নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে ৪হাজার ৫০০ ইলিশ আহরণকারী জেলে। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে এসব বেকার জেলের প্রত্যেকে ২৫ কেজি করে ভিজিএফ এর চাল বরাদ্দ রয়েছে।##


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *