চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : যেখানে সাধারণ সরকারি চাকুরেরা মাসের শেষে হিসাব মিলিয়ে চলতে হিমশিম খান, সেখানে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ক্লেরিক্যাল সুপারভাইজার ও সিবিএ নেতা মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন যেন এক অন্য গ্রহের মানুষ। বেতনের কষাঘাতে যেখানে সহকর্মীরা নাভিশ্বাস তোলেন, সেখানে নাছিরের জীবন যেন রূপকথার গল্প। তবে এই রূপকথার রঙ মাখানো হয়েছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ছায়া আর দুর্নীতির কালি দিয়ে।

এক পিয়নের বিস্ময়কর উত্থান : ১৯৮৬ সালে মাত্র ২৩০ টাকা বেতনে পিয়ন হিসেবে চাকরি শুরু করেছিলেন নাছির। কাগজ-ফাইল বহন থেকে যাত্রা শুরু করে আজ তিনি পদ্মা অয়েলের প্রভাবশালী সিবিএ নেতা। ক্ষমতার দাপটে বদলি ও পদোন্নতির বাজারে নাছির হয়ে উঠলেন এককর্ত্রী—যেখানে ফাইল চলে ঘুষের দামে, আর চাকরি টেকে তার আশীর্বাদে।
অবৈধ সম্পদের পাহাড় : দুদকের অনুসন্ধানে যা বেরিয়ে এসেছে, তা চমকে দেওয়ার মতো—চট্টগ্রামের আনোয়ারায় প্রায় ২৮ লাখ টাকার জমি। একই এলাকায় ১.৪২ কোটি টাকায় নির্মিত শশী কমিউনিটি সেন্টার। ২৪ লাখ টাকার ব্যক্তিগত গাড়ি। ব্যাংকে ৪৫ লাখ টাকা আমানত। শেয়ার ও ইনস্যুরেন্স ব্যবসায় ৪০ লাখ টাকার বিনিয়োগ ।

মেয়ে ডাক্তার বানাতে ব্যয়িত ২৩ লাখ টাকার টিউশন ফি । সব মিলিয়ে পৌনে তিন কোটি টাকার সম্পদ, অথচ সরকারি বেতনে এ পরিমাণ টাকার কোনো হদিস মেলে না।

দুদকের মামলা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ : ২০১৯ সালে দুদকে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে নাছির দাবি করেছিলেন তাঁর সম্পদ মাত্র ১.৩০ কোটি টাকা। তদন্তে ধরা পড়ে গোপন তথ্য, বাড়তি সম্পদ আর অজানা উৎসের কোটি টাকা। ২০২৩ সালে মামলা হয়, ২০২৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা পড়ে।
অভিযোগ স্পষ্ট—জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও গোপন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়—চার্জশিটের পরও নাছির দিব্যি বহাল তবিয়তে অফিসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিচ্ছেন। নিয়ম-কানুন কেবল সাধারণ কর্মচারীর জন্য, সিবিএ নেতাদের জন্য নয়।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সুরক্ষা : প্রশ্ন জাগে—একজন সাধারণ পিয়ন কীভাবে কোটি টাকার মালিক হলেন? উত্তর একটাই—আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সুরক্ষা ছাতা। শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানার আর দলীয় পদবী তাঁকে বানিয়েছে অপরাজেয়। মামলা আছে, চার্জশিট আছে, তবু শাস্তি নেই—কারণ তিনি ক্ষমতার ‘ঘরের মানুষ’।
শেষ কথা : নাছির উদ্দিনের গল্প আসলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের চিত্রকেই উন্মোচন করে। যেখানে শ্রমিক নেতা মানেই দুর্নীতির রাজা, যেখানে দলীয় ছায়া মানেই দায়মুক্তি। পিয়ন থেকে কোটি টাকার মালিক—এ কেবল নাছিরের কাহিনি নয়, বরং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রাজনীতির এক নগ্ন প্রতিচ্ছবি।