গোলাম মওলা রনি, সাবেক সংসদ সদস্য।
গোলাম মওলা রনি : মীর জাফর ও মোনাফেক শব্দ দু’টি খুব ছোটবেলা থেকেই আমার মনে এক ধরনের বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে চলেছে। সত্তরের দশকের একটি নিভৃত পল্লীতে আমার শৈশব কেটেছে। আমাদের গ্রামটি সার্বিক বিচারে একটি আদর্শ গ্রাম ছিল। সেখানে দারিদ্র্য ছাড়া অন্য কিছুর অভাব ছিল না এবং গ্রামবাসীর মধ্যে কলহ বিবাদ ছিল না বললেই চলে। বিয়েশাদী, দেনা-পাওনা অথবা জমি জিরেত নিয়ে বিরোধ হলে গ্রাম্য সালিশেই নিষ্পত্তি হয়ে যেত। খুব বড় বিরোধ হলে মাঝে মধ্যে সানি বিচার মানা হতো অর্থাৎ আপিল। সে ক্ষেত্রে গ্রাম্য মাতব্বরদের ওপর মাতব্বরি করার জন্য ১০ গেরামের মাতব্বরকে প্রধান বিচারক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হতো। তারপর সারারাত হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে শত শত উৎসুক নারী-পুরুষের সামনে প্রকাশ্য বিচারকাজ চলত। বিচারকদের ঘুষ গ্রহণ পক্ষপাতিত্ব বা বিচারকর্মে অদক্ষ এমন বদনাম কেউ দিতে পারত না।
গ্রামের অন্যসব অতি উৎসুক শিশু-কিশোরের মতো আমারও নিদারুণ আগ্রহ ছিল তিনটি বিষয়ে। প্রথমত, হাটবারের দিনে যে ওষুধ বা তাবিজ বিক্রির মজমা বসত এবং সেসব মজমাতে কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাদু দেখানো হতো- আবার কেউ কেউ সাপখেলা দেখিয়ে অথবা নাচগান করে মানুষকে মোহমুগ্ধ করে নিজেদের পণ্য বিক্রি করত। আমাদের এলাকায় বড় হাট বসত মঙ্গলবার দিন। সুতরাং মঙ্গলবার বিকেলে যেকোনো মূল্যে হাটের মজমাতে উপস্থিত থাকার চেয়ে বড় কোনো কর্ম আমার ছিল না। মজমা ছাড়াও আমাদের দুই-চার, দশ গ্রামে জারি-সারি, যাত্রা-থিয়েটার, কবিতা পাঠের আসর বসত। এ ছাড়া ফুটবল ও হাডুডু খেলার বিরাট সব আয়োজন হতো। আমি ১০-১৫ মাইল হেঁটে গিয়ে ওসব অনুষ্ঠান উপভোগ করতাম।
আমাদের তৃতীয় দফার আগ্রহ ছিল গ্রাম্য সালিশ। যেখানে প্রতিপক্ষকে নাজেহাল বা পরাজিত করার জন্য মিথ্যা সাক্ষী দেয়া অথবা পরিবার বা গ্রামের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়া ছিল অহরহ ব্যাপার। বিশেষ করে পারিবারিক কলহ অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াসংক্রান্ত বিচার সালিশি ছিল চরম বিনোদন অথবা চরম বিয়োগাত্মক ঘটনায় ভরপুর, যা নাটক সিনেমাকে হার মানাত। তো এসব বিচার সালিশিতে প্রায়ই দুটো শব্দ উচ্চারিত হতো। একটি হলো মোনাফেক এবং অপরটি হলো মীর জাফর। এই শব্দগুলো যখন শুনতাম তখন সেগুলোর মর্মার্থ না বুঝলেও ধারণা করে নিতাম যে, ওগুলো খুবই নিকৃষ্ট প্রকৃতির গালিগালাজজাতীয় কিছু একটা হবে। কিন্তু পরবর্তী জীবনে মোনাফেক এবং মীর জাফরের আদি-অন্ত জানার পর শৈশবের সেই স্মৃতি হঠাৎ করে কিভাবে যে মন-মস্তিষ্কে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
আজকের নিবন্ধে আমি মোনাফেক ও মীর জাফরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং বাঙালির জীবনযাত্রা এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে- এই দু’টি ঐতিহাসিক চরিত্র কিসব সর্বনাশ করেছে তার একটি রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করব। আলোচনার শুরুতেই মোনাফেক নিয়ে কিছু বলে নেই। এটি একটি আরবি শব্দ। আরো স্পষ্ট বললে এটি কুরআনিক শব্দ। সাধারণ আরবি শব্দ এবং কুরআনিক শব্দের মধ্যে মৌলিক কতগুলো পার্থক্য রয়েছে। কুরআন নাজিলের আগে আরবি একটি আঞ্চলিক কথ্য ভাষারূপে পরিচিত ছিল হেজাজ ও নজদ এলাকায়। পুরো জাজিরাতুল আরবে তখন রোমান সাম্রাজ্য ও পারস্য সাম্রাজ্যের প্রবল দাপটের কারণে রোমান ভাষা ও ফারসি ভাষা ছিল সেসব সাম্রাজ্যের প্রভাবাধীন এলাকার রাজকীয় ভাষা তথা ভদ্রজনের ভাষা। এই দুই ভাষার দাপটে ওই অঞ্চলের কুলিন ভাষা বলতে পরিচিত পাওয়া হিব্রæও মরতে বসেছিল।
উল্লিখিত অবস্থায় প্রাচীন আরবের হেজাজ ও নজদ এলাকার বেদুইন আরবদের মধ্যে আরবি ভাষা প্রচলিত ছিল এবং তা হিব্রু-রোমান-ল্যাটিন বা ফারসির মতো রাজকীয় ভাষায় আক্রান্ত হয়নি এ কারণে যে, পুরো অঞ্চলটি ছিল দুর্গম-ঊষর এবং বাণিজ্যিকভাবে অগুরুত্বপূর্ণ। আবরাহা নামক একজন সামন্ত রাজার মক্কা আক্রমণ ছাড়া পুরো হেজাজ ও নজদে কোনো বিদেশী শক্তি অভিযান চালায়নি- এমনকি ওই পথে তারা কোনো দিন যাতায়াতও করেনি। ফলে আরবি ভাষা, সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের সীমা-পরিসীমা ও ইতিহাস ঐতিহ্য খুবই সীমিত। কিন্তু কুরআন নাজিলের পর এই মহাগ্রন্থকে কেন্দ্র করেই আরবি ভাষা ভদ্রজনের আধুনিক ভাষারূপে ধীরে ধীরে সারা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ইসলামী হুকুমাতের অধীনে সারা দুনিয়ার ভাষাবিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আরবি ব্যাকরণ এবং এই ভাষায় অসংখ্য বিদেশী শব্দের সংযোজন যেভাবে হয়েছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর। পবিত্র কুরআনকে আরবি ভাষার সংবিধান মেনেই এই ভাষাকে যেভাবে লালিত্য দেয়া হয়েছে তা পৃথিবীর ভাষার ইতিহাসে আর কোথাও ঘটেনি।
কুরআন নাজিলের পর দেখা গেল, সেখানে এমন সব শব্দ এসেছে যেগুলো জাজিরাতুল আরবে এর আগে ছিল না- এমনকি দুনিয়ার অন্য কোনো ভাষাতেও সেই শব্দগুলো ছিল না। ফলে সেসব শব্দের ব্যাখ্যা অর্থ এবং বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য আল্লাহর রাসূল সা:-এর হাদিসের বিকল্প নেই। এজন্য আরবি ভাষার যে শব্দগুলো কুরআনে রয়েছে অথচ তা এর আগে ছিল না সেগুলোর যেমন গুরুত্ব রয়েছে তদ্রুপ হেজাজ ও নজদে প্রচলিত শব্দমালার মধ্যে যেগুলো কুরআনে স্থান পেয়েছে সেগুলোর গুরুত্বও অন্যান্য সাধারণ আরবি শব্দের চেয়ে বেশি। সুতরাং মোনাফেক যেহেতু কুরআনিক শব্দ সেহেতু এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য, ব্যাখ্যা এবং শব্দের কার্যকারিতার সাথে পৃথিবীর সমপর্যায়ের অন্য কোনো শব্দের তুলনা করা যাবে না। বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য ছোট্ট একটি উদাহরণ দিতে চাই।
মোনাফেকের হুবহু বাংলা বা ইংরেজি প্রতিশব্দ নেই। ইংরেজিতে কেউ কেউ এর অনুবাদ করেন হিপোক্র্যাট হিসেবে। হিন্দিতে বলা হয় নিমকহারাম। এখন যদি পৃথিবীর এমন কোনো অঞ্চলে যান সেখানকার লোকজন আরবি-হিন্দি কিংবা ইংরেজি বোঝেন না। আপনি যদি তাদের মধ্য থেকে তিনজন লোককে বাছাই করেন এবং একজনের নাম দেন মোনাফেক, অন্যজনের নাম হিপোক্র্যাট এবং সর্বশেষ জনের নাম নিমকহারাম। এরপর আপনি যদি তাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন তবে দেখবেন যে, আপনি যার নাম মোনাফেক রেখেছেন সে কিছু না বুঝলেও আপনার ডাকে সাড়া দেবে না। আপনি একটু জোরাজুরি করলে সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষেপে যাবে এবং আপনার দিকে তেড়ে আসবে, আর এটাই হলো কুরআনিক শব্দের প্রভাব।
আমার শৈশবে আমি যখন মোনাফেক শব্দটি শুনতাম তখন শব্দটির অর্থ না বুঝা সত্তে¡ও মনের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতো। পরে যখন ইসলামের ইতিহাসে মোনাফেকদের কর্মকাণ্ড জানলাম এবং মোনাফেক সর্দার আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ার চরিত্র অধ্যয়ন করলাম তখন মনে হলো- অনেক অপরাধের পুঞ্জীভুত দুর্গন্ধ যখন জমাট বেঁধে জমিন-আকাশ-বাতাস-বৃক্ষরাজি- প্রাণিকুল সব কিছুকে দূষিত করে প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় কেবল তখন সেই পুঞ্জীভ‚ত অপরাধগুলোর নায়ককে মোনাফেক বলে গালি দেয়া যায়। আমাদের দেশের রাজনীতি অর্থনীতি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপনি যদি কাউকে মোনাফেক বলে গালি দিতে চান তবে ধরে নিতে হবে যে, লোকটি প্রথমত, আল্লাহ কর্তৃক অভিশপ্ত। দ্বিতীয়ত, তার জবান কর্ম চিন্তা স্বপ্ন বিশ্বাস অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি কোনোটির সাথে কোনোটির মিল থাকে না।
তার ধর্ম-কর্ম, কথা-বার্তা, পোশাক-পরিচ্ছদ, হাসি-কান্না সবকিছুই মিথ্যা বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যে কাউকে বিশ্বাস করে না এমনকি নিজেকেও। আর সে খুব ভালো করে জানে যে, তাকেও কেউ বিশ্বাস করে না। বরং উল্টো ঘৃণা করে এবং গোপনে প্রকাশ্যে অভিশম্পাত দেয়। একটি দেশ কাল সমাজে যদি মোনাফেকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং মোনাফেকদের নেতা যদি রাষ্ট্রক্ষমতা পায় তবে সুনামি অগ্ন্যুৎপাত ঝড় জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চেয়েও বড় মানবিক বিপর্যয় পুরো সভ্যতার চাকা উল্টো পথে ঘুরিয়ে আধুনিকতাকে প্রথমে ঐতিহাসিক বস্তুতে পরিণত করে এবং শেষ অবধি সব কিছুকেই প্রাগৈতিহাসিক জমানায় নিয়ে যায়।
উল্লিখিত অবস্থা সৃষ্টি হলে মানুষ হারাম হালাল পার্থক্য করতে পারে না। দিনের চেয়ে রাতের কর্ম অধিক প্রাধান্য প্রায়। পোশাক ছেড়ে মানুষ প্রাগৈতিহাসিক জমানায় উলঙ্গপনায় মেতে ওঠে। সত্যের চেয়ে মিথ্যা আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে এবং সুগন্ধের তুলনায় দুর্গন্ধের বাজারজাতকরণ বেশি হয়। মানুষ নিজেদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে পরিচয় দেয়ার পরিবর্তে বনের জন্তু-জানোয়ার ও হিংস্র প্রাণীর পরিচয়ে গর্ব অনুভব করতে থাকে।
আলোচনার এই পর্যায়ে এবার মোনাফেক বাদ দিয়ে মীর জাফর নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করব। আমরা কমবেশি সবাই জানি যে, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি ছিলেন মীর জাফর। তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজ বেনিয়াদের সাথে চক্রান্ত করে নির্মমভাবে বাংলা বিহার উড়িষ্যার স্বাধীনতা বিদেশীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ফলে মানবজাতির ইতিহাসে যে ক’জন মোনাফেক সর্বকালের নিকৃষ্ট বিশ্বাসঘাতক এবং আন্তর্জাতিক বেঈমান বলে মহাকালের স্বীকৃতি পেয়েছেন তাদের মধ্যে তিনি প্রধানতম।
আমরা যদি মীর জাফরের চরিত্র বিশ্লেষণ করি তবে দুটো বৈশিষ্ট্য পেয়ে যাবো।
তিনি যখন প্রধান সেনাপতি ছিলেন তখন তিনি নবাব হওয়ার বাসনায় দেশ বিক্রি করে হলেও সিংহাসনে বসার জন্য বহুমুখী দেশী-বিদেশী চক্রের হোতারূপে চক্রান্তের ময়দানে মোনাফেকি শুরু করেন। নবাবের রাজদরবার, মুর্শিদাবাদ তথা বাংলা বিহার উড়িষ্যার রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি মোনাফেকির সর্বোচ্চ কলাকৌশল প্রয়োগ করে নিজের পদ-পদবি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি রক্ষা করে চলেছিলেন। দ্বিতীয়ত, মোনাফেকির মাধ্যমে অর্জিত প্রভাবকে ইংরেজ বণিকদের কাছে দেশ বিক্রির হাতিয়াররূপে ব্যবহার করেছিলেন। ফলে মোনাফেক মীর জাফর তার চক্রান্তের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের জন্য ৫৩ হাজার সৈন্যসহ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে গিয়েছিলেন।
মীর জাফরের মোনাফেকি ও বিশ্বাসঘাতকতায় ইংরেজ বেনিয়ারা বিস্ময়করভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং ৫০ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ৭৫০ জন ইংরেজ সৈন্য এবং দুই হাজার ১০০ ভাড়া করা স্থানীয় সৈন্যসহ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ যুদ্ধক্ষেত্রে হাজির হয়েছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে মীর জাফরের মতো অন্য কোনো বিশ্বাসঘাতক খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি একই সাথে দু’পক্ষের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করে উভয়পক্ষকে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে এসেছিলেন এবং স্বল্পকালীন সময়ের মধ্যে ৫০ হাজার সৈন্যের বাহিনীকে মাত্র পৌনে তিন হাজার সৈন্যের বাহিনীর কাছে আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করেছিলেন।
মীর জাফর যখন তার মোনাফেকি ও বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কারস্বরূপ বাংলার সিংহাসন পেলেন তখন তিনি বাংলার মানসম্মান, অর্থবিত্ত, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ইত্যাদি সব কিছু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে অকাতরে বিসর্জন দিতে লাগলেন। কেন্দ্রীয় রাজকোষ উজাড় করে তিনি তৎকালীন জমানায় পাঁচ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড সমমূল্যের অর্থ পরিশোধ করলেন এবং বাংলার দেওয়ানি অর্থাৎ খাজনা আদায়ের দায়িত্ব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দিয়ে দিলেন।
তাছাড়া ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ দেশের সর্বত্র অবাধে বিচরণ, স্থানীয় লোকদের ধরে নিয়ে যাওয়া, বিচার করাসহ লিখিত ও অলিখিত এমন সব অধিকার বেনিয়াদেরকে দিলেন যার ফলে সর্বভারতীয় রাজনীতি অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তিতে ইংরেজরা অতি অল্পসময়ের ব্যবধানে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে ভারতবর্ষকে গোলামির শিকলে এমনভাবে আবদ্ধ করে ফেলে যেখান থেকে মুক্তি পেতে কম করে হলেও ২০০ বছর সময় লেগেছে।
মীর জাফরের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের সাথে আমাদের গ্রামের চুনোপুঁটি প্রকৃতির দুষ্ট লোকদের অপরাধের কোনো তুলনাই হয় না। তবুও মানুষ কথায় কথায় মীর জাফর বলে প্রতিপক্ষকে গালি দিত। আমি আমার শৈশব পেরিয়ে প্রথমে কৈশোর তারপর যৌবন পেরিয়ে এখন প্রৌঢ়ত্বের মধ্যে গগনে দাঁড়িয়ে যখন ২০২২ সালের বাংলাদেশকে দেখছি তখন লক্ষ করছি যে, আমার শৈশবের সেই মীর জাফরগুলো বংশবিস্তার করতে করতে আজ রীতিমতো বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। তারা আজ এত বড় হয়ে গেছে যে, তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কেউই আর তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে এ কথা বলার হিম্মত রাখে না যে, তুই মোনাফেক! তুই মীর জাফর…! (লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য)