মো : সুমন হোসেন অভয়নগর (যশোর) : “নানা রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা” স্লোগানে অভয়নগর উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যেগে গাছি সম্মেলনে জেলা প্রশাসক বলেন, খাঁটি গুড় উৎপাদন করে নিদ্রিষ্ট জায়গায় বিক্রি করার মাধ্যমে খেজুর গুড়ের বাজার তৈরি করা হবে। গ্রাম থেকে প্রকৃত গাছিদের খুজে বের করে তাদের সঠিক নামের তালিকা তৈরি করা হবে। তাদেরকে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। বিভিন্ন সরকারি রাস্তার পাশ্বে খেজুর ও তালের বীজ রোপন করা হবে। কোনো ব্যক্তি খেজুর ও তালের গাছ কেটে বিক্রি করার খবর পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস ও গুড় সারা দেশের মানুষের পিঠা-পুলি খাওয়ার চাহিদা পূরন করার পাশ্বাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এজন্য গাছিদের সাথে সকলকে এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে হবে। খেজুর গাছে রস খেতে আসা বাদুরের মুখের লালা থেকে নিপা ভাইরাসের সৃষ্টি হয়। কাঁচা খেজুর রস খাওয়ার মাধ্যমে অনেক সময় এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। সুতরাং এ বিষয়ে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
“খালি কলশি থুয়ে দিলে ভরে যায় রসে, ভরা কলশির রসের ঘ্রানে মন ভরে যায় সুবাসে” (১১ নভেম্বর) শনিবার বিকালে উপজেলা পরিষদ চত্তর থেকে সকল গাছিদের নিয়ে একটি রালী নওয়াপাড়া বাজারের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি প্রদক্ষিন করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আবু নওশাদ এর সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাসান মজুমদার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যশোর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মঞ্জুরুল হক, নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র সুশান্ত কুমার দাস শান্ত, অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বি এম মেহেদী মাসুদ, নওয়াপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো: রবিউল হাসান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোছাঃ লাভলী খাতুন, ভাইস চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান তারু, মিনারা পারভীন সহ প্রমুখ।
আলোচনা সভার শুরুতে একজন গাছি তাদের সকল সমস্যা ও ভবিষ্যতের সম্ভবনা নিয়ে কথা বলেন। এরপর অপর একজন গাছি যশোরের আঞ্চলিক একটি গান পরিবেশন করেন।”ঠিলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাটতি যাবো, খাজুর গাছে চোমর বের করে তোরে এনে দেবো”।
বক্তব্য শেষে ধোপাদী গ্রামের চিত্তরঞ্জন দাস দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে সেচ্ছাশ্রমে বিভিন্ন রাস্তার পাশ্বে ৮৮ হাজার তালের বীজ রোপনের জন্য তাকে প্রধান অতিথি সহ সকলে উপহার হিসাবে একটি সনদ ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন। এসময় রাজঘাট এলাকার মৃত আকাম শেখের ছেলে কওসার আলী শেখকে উপহার হিসাবে সনদ ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।
” ঠিলে ধুয়ে দে লো বউ গাছ কাটতি যাবো সন্ধ্যের নস ঝাইড়ে আইনে জাউ নাইন্দে খাবো ” গাছির মুখের মিষ্টি মুখে মিষ্টি হাসি ভরা মুখে এই গান ফিরিয়ে আনতে পারবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। গাছি সম্মেলনে উপস্থিত গাছিরা আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
পাশাপাশি দুই জন গাছিকে খেজুর গাছ কাটা ‘দা’ উপহার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে সকল কে খাবার বিতরন করার মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।