বিসিক এর দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ!

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই দুই কর্মকর্তা হলেন: মোঃ নাজমুল হোসেন,শাখা প্রধান, কর্মীব্যবস্থাপনা শাখা ও মোঃ আরিফ হোসেন কর্মীব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকর্মীব্যবস্থাপনা শাখা।


বিজ্ঞাপন

বিসিক প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞদের মতে সরকারী দপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন, পদ সৃজন, সংরক্ষণ এবং স্থায়ীকরণ বিষয়ক একটি কমিটি হচ্ছে সরকারের সচিব কমিটি।এতদ্ব্যতীত অন্য কোন কমিটি বা ব্যক্তির এ জাতীয় কার্য সম্পাদনের প্রচলিত কোন বিধান নেই। বিধানটির বত্যয় ঘটিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশীমতো কাজ করে চলেছেন বিসিকের দুজন কর্মকর্তা। যাদের একজন বিসিকের কর্মীব্যবস্থাপনা শাখা প্রধান মোঃ নাজমুল হোসেন, অপরজন একই শাখার কর্মীব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন।


বিজ্ঞাপন

নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তারা দু’জন প্রতিনিয়ত স্বেচ্ছাচারী মনোভাব পোষণ করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উস্কানীমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ ও বিদ্বেষ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন । যা সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালার ২৭ ধারায় বর্নিত ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিগ্রস্থকরণ. এখতিয়ার বহির্ভুত কাজ সম্পাদন এবং ৩০এ ধারার (এ), (সি) উপধারার বিধান মতে সরকারী আদেশ বা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, বদলানো, সংশোধন এবং (ডি) ধারা লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণ।

সরকারী কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রয়েছে সরকারী বিধি-বিধান।সকল কর্মচারী সরকারের প্রচলিত বিধি-বিধান অনুস্মরণ করে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কারো অজানা থাকার কথা নয়।

প্রশাসন বিভাগে কর্মরত থেকে সরকারী বিধি-বিধানের বত্যয় ঘটিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব পোষনের মাধ্যমে দাপ্তরিক কার্যাদি সম্পাদনের কোন সুযোগ নেই। তথাপি এ ধরনের কাজ কেউ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
ব্যবস্থা নেয়া না হলে বিষয়টি পানির মতো পরিস্কার হয়ে যায় যে কর্তৃপক্ষের আশীর্বাদেই তারা এইসব অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ প্রাপ্ত হয়েছেন।

১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব স্বাক্ষরিত সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর/অধিদপ্তর/সংস্থার রাজস্ব খাতের শুন্য পদ জরুরী ভিত্তিতে পূরণের লক্ষ্যে জারীকৃত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজস্ব খাতের সরাসরি নিয়োগযোগ্য ৯০% পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হতে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। সংরক্ষিত কোটার ১০% নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে।

একই পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের প্রচলিত বিধি-বিধান এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের (মন্ত্রণালয়/দপ্তর/অধিদপ্তর/সংস্থার) অনুমোদিত নিয়োগবিধি যথাযথভাবে অনুস্মরণ পূর্বক নিয়োগ কার্য সম্পাদন করতে হবে।

বিসিকের কর্মীব্যবস্থাপনা শাখা প্রধান মোঃ নাজমুল হোসেন এবং একই শাখার কর্মীব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন এর অসত্য, মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর উপস্থাপনায় বিসিকে সরাসরি নিয়োগযোগ্য শুন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারীকৃত পরিপত্রের নির্দেশনার বত্যয় ঘটিয়ে বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদের উপধারা (১) এবং উপধারা (৩) এর (গ) ধারায় উল্লিখিত প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের অধিকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করা এবং বিসিক এ নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ ও বিদ্বেষ সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্যে সরাসরি নিয়োগযোগ্য প্রায় সাত শতাধিক পদের মধ্য হতে ৪১ ক্যাটাগরীর ১৯২টি পদ পূরণের লক্ষ্যে ১২ মার্চ ২০২৪ তারিখে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে বিসিক চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে একটি পত্র প্রেরণ করে।

যেখানে সরকার অনুমোদিত পদ সংখ্যা এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে সরকারী সিদ্ধান্ত বা আদেশ পরিবর্তন করে পদ সংখ্যা কম দেখানোর পাশাপাশি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্বেষ প্রসূত মনোভাব প্রদর্শন করা হয়েছে।

মোঃ আরিফ হোসেন এবং নাজমূল হোসেন দুঃসাহস দেখিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারীকৃত পরিপত্রের নির্দেশনার বত্যয় ঘটিয়ে তাদের ইচ্ছামত কাজ সম্পাদনা করতে।

বিসিকের শুন্য পদসহ জনবলের পজিশন পেপার এবং সময়ে সময়ে বিসিক কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত গ্রেডেশান তালিকা হতে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বিসিকের মহাব্যবস্থাপক ও সমমানের পদে সরকার অনুমোদিত পদ সংখ্যা ১৪টি, ১২ মার্চ ২০২৪ তারিখে শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত প্রস্তাবে উক্ত পদসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১১টি।

বিসিকে উপমহাব্যবস্থাপক ও সমমানের পদে সরকার অনুমোদিত পদসংখ্যা ৪৩টি, ১২ মার্চ ২০২৪ তারিখের প্রেরিত প্রস্তাবে উক্ত পদসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৩৪টি, বিসিকে সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও সমমানের পদে সরকার অনুমোদিত পদসংখ্যা ৬৫টি, ১২ মার্চ ২০২৪ তারিখের প্রেরিত প্রস্তাবে উক্ত পদসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৩৬টি, বিসিকে উপব্যবস্থাপক ও সমমানের পদে সরকার অনুমোদিত পদসংখ্যা ১৫৫টি, ১২ মার্চ ২০২৪ তারিখের প্রেরিত প্রস্তাবে উক্ত পদসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১২৮ টি।

সরকার অনুমোদিত পদের বিপরিতে সরকারী অনুমোদন ব্যতীত পদসংখ্যা কমানোর কোন এখতিয়ার বিসিক কর্তৃপক্ষ বা মোঃ নাজমুল হোসেন এবং মোঃ আরিফ হোসেন সংরক্ষণ করেন না। তাদের উপস্থাপিত প্রস্তাবটি অসত্য, বিভ্রান্তিকর এবং সরকারী সিদ্ধান্ত বা আদেশ এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে পরিবর্তন, বদলানো, সংশোধন এবং অসন্তোষ সৃষ্টি ও বিদ্বেষ প্রসূত একটি কাজ।
যার কারণে সরকারের ভাবমুর্তি বিনষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বিসিকের কর্মীব্যবস্থাপনা শাখা প্রধান মোঃ নাজমুল হোসেন এবং একই শাখার কর্মীব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার পাশাপাশি এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে সরকারী সিদ্ধান্ত বা আদেশ অবমাননা করে অনুমোদিত মহাব্যবস্থাপক ও সমমানের পদের পদসংখ্যা ৩টি, উপমহাব্যবস্থাপক ও সমমানের পদের পদসংখ্যা ৯টি, সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও সমমানের পদের পদসংখ্যা ২৯টি, উপব্যবস্থাপক ও সমমানের পদের পদসংখ্যা ২৭টি কম দেখিয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন।
নবম গ্রেডের ২৫০টির অধিক পদ খালি থাকার পরও হাতে গোনা কয়েকটি পদে নিয়োগের জন্য ছাড়পত্রের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ১০ম গ্রেডে কারিগরী কর্মকর্তা এবং টেকনিক্যাল অফিসার পদ আলাদাভাবে দেখানো হয়েছে।
১৩-২০ গ্রেডের বিভিন্ন ক্যাটাগরীর কর্মচারীর বিপুল পরিমাণ পদ খালি থাকা স্বত্তেও কর্মচারী বিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে ১০ ক্যাটাগরীর মাত্র ৯১টি পদের।তাছাড়া পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ১০% এর বেশী পদ সংরক্ষণ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে।

এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে সরকারী সিদ্ধান্ত বা আদেশ পরিবর্তন, বদলানো, সংশোধন-সরকারী কর্মচারী আচরণবিধিমালা লংঘন-শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ!
ক্ষমতাসীন সরকারের ভাবমুর্তি রক্ষা করা এবং বিসিকের বিরাজমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিসিকের কর্মীব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন এবং কর্মীব্যবস্থাপনা শাখা প্রধানের গুরুতর অসদাচরণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ।

এ বিষয়ে কথা বলত চাইলে অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাই মহাপরিচালকের পারমিশন ছাড়া মিডিয়ার সাথে কথা বলতে রাজি হননি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *