দুদকের অনুসন্ধান ::অর্থ লোপাটে বাপ-বেটার বিশ্বরেকর্ড : ছিলেন ‘মাফিয়াদেরও গডফাদার’

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে নিয়োগ বাণিজ্যে ঘুষ হিসেবে বস্তায় বস্তায় টাকা নিতেন তিনি। দেশ থেকে পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। আসাদুজ্জামান খান, তার পরিবার এবং সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের অর্থ সঞ্চয় ও পাচারের তথ্য মিলছে।


বিজ্ঞাপন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকা রাখার জন্য তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে হত্যার অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। তার দুর্নীতির সব ধরনের তথ্য অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৫ আগস্ট দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম জানান।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগের অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর ও অপরাধ তদন্ত বিভাগও (সিআইডি) তাঁর দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

তদন্তসংশ্লিষ্টদের মতে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক তথ্য বেরিয়ে আসছে। তিনি ‘মাফিয়াদের গডফাদার’ ছিলেন। তার নিয়ন্ত্রণে ছিল একটি বড় দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট। তিনিসহ এই সিন্ডিকেটের সব সদস্য এখন গাঢাকা দিয়েছেন। জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠের প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যপ্রমানাদি তদন্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানতে পেরেছেন, সাবেক এক স্বরাষ্ট্রসচিবের মাধ্যমে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটের আশীর্বাদ ছাড়া পুলিশের কেউ কোনো জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেতেন না। জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে এক থেকে তিন কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এই চক্রের অন্যরা হলেন তাঁর সাবেক পিএস অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, মন্ত্রণালয়ের সব ঘুষ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ঝুঁকি এড়াতে দুর্নীতির টাকাগুলো তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন। কক্সবাজারে হোটেলের পাশাপাশি জমিও রয়েছে তাঁর।

এসআই নিয়োগে শতকোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ : পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পুলিশের এসআই ও সার্জেন্ট পদে নিয়োগের মাধ্যমে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট এই বিপুল অর্থ  হাতিয়ে নেয়। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি গোপন প্রতিবেদন জমা হয়েছে।প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানতে পেরেছেন, এই নিয়োগ দুর্নীতিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে একেকজন প্রার্থীর কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে পছন্দের তালিকা তৈরি করা হয়। আর চাহিদামতো ঘুষ না দিলে তাঁকে ভাইভায় ফেল করিয়ে দেওয়া হতো। সার্বিক বিষয়ে পুলিশের নতুন নিয়োগ পাওয়া আইজিপি ময়নুল ইসলাম বলেন, পুলিশকে এখন ঢেলে সাজানো হচ্ছে। গত ১৫ বছরে পুলিশের অনেক ক্ষতি হয়েছে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের সিপিইউ পরীক্ষা করবে দুদক : দুর্নীতির তথ্য পেতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দপ্তরে দাপ্তরিক কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারের সিপিইউ ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করার অনুমতি পেয়েছে দুদক।

দুদক কৌঁসুলি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এই আদেশ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ আগস্ট দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেনের ব্যবহৃত ৩০৪ নম্বর রুম থেকে তাঁর ব্যবহৃত কম্পিউটারের সিপিইউটি জব্দ করা হয়।

আসাদুজ্জামান খান এবং তাঁর পরিবারের ৩২০ কোটি টাকা দুর্নীতির প্রমাণ :  সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের নামে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। সংস্থাটির অনুসন্ধানে আরো ২০০ কোটি টাকার বেশি মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটির অনুসন্ধান টিম। সব মিলিয়ে আপাতত ৩০০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে আসাদুজ্জামান কামাল, তাঁর স্ত্রী লুত্ফুল তাহমিনা খান, তাঁর ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান, মেয়ে সোফিয়া তাসনিম খান এবং সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেনকে আসামি করে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।জানা গেছে, দুদক টিম ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে অন্তত ২০০ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে। আপাতত এসব কারণেই মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।ু


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *