অনেক জেলা রেজিস্ট্রার এবং সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। দুদকেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন কিংবা চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন সাব-রেজিস্ট্রারের বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও হয়েছে। ৪০-৪৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় অভিযোগের তদন্ত চলছে। তাদের ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পুরো অধিদপ্তরের পেশাগত মান ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ ১৭ বছর পর সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন নিবন্ধন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এতে অনেক কর্মকর্তার (জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রার) স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। ২০০৭ সালে আইন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে হিসাব চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। অথচ সরকারি চাকরিবিধিতে পাঁচ বছর অন্তর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমার বিধান রয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর সরকারি চাকরিজীবী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে।
নিবন্ধন অধিদপ্তরের তথ্যে, সারাদেশে ৫৮ জেলা রেজিস্ট্রার এবং ৪৩০ সাব-রেজিস্ট্রার কর্মরত। গত ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হিসাব জমা দেওয়ার কথা থাকলেও, অনেক কর্মকর্তার অভিযোগ, তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত নির্ধারিত ফরম পাননি।
বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ইমরুল খোরশেদ জানান, কোন ছকে সম্পদ বিবরণী দিতে হবে, তার নির্দেশনা পাননি। নির্ধারিত ছকের জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। সব জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হয়নি বলেও জানান তিনি। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অধিকাংশ জেলা রেজিস্ট্রার, সাব-রেজিস্ট্রার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় কর্মরতরা নিজ নিজ ফরম পূরণ করে সম্পদের হিসাব বিবরণী মন্ত্রণালয় এবং নিবন্ধন অধিদপ্তরে জমা দিয়েছেন।
জানতে চাইলে নিবন্ধন অধিদপ্তরের বিদায়ী মহাপরিদর্শক (জেলা ও দায়রা জজ) আল মামুন গণমাধ্যম কে বলেন, অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। অনেকেই সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। বাকিরাও শিগগির জমা দেবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিবন্ধন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যম কে জানান, ১৭ বছর পর তাদের কাছে সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। সরকারের অবহেলার কারণেই এ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। ২-৩ বছর আগে একবার বিষয়টি আলোচনায় এলেও, প্রভাবশালী কর্মকর্তার চাপে আলোর মুখ দেখেনি। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বাড়তি আয় গোপন রাখতে হিসাব দাখিলে অনীহা প্রকাশ করেন।
অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অনেক জেলা রেজিস্ট্রার এবং সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। দুদকেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন কিংবা চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন সাব-রেজিস্ট্রারের বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও হয়েছে। ৪০-৪৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় অভিযোগের তদন্ত চলছে। তাদের ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পুরো অধিদপ্তরের পেশাগত মান ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। সম্পদের হিসাব দাখিল প্রক্রিয়া নিয়মিতভাবে হলে, এ থেকে উত্তরণ মিলবে বলে মনে করেন তারা।