নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতির অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন এটুআই প্রোগ্রামের ১৪ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরামর্শক এবং পরবর্তীতে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ৬ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করার প্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ গত ২০ আগস্ট ২০২৪ তারিখ রোজ মঙ্গলবার এই নির্দেশনা জারি করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আসা অভিযোগের তদন্ত করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ মেহেদী হাসানকে সভাপতি করে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন এটুআই প্রোগ্রামের যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক মোল্লা মিজানুর রহমান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব মো. শাহীনুর আলম।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2024/05/WhatsApp-Image-2024-05-31-at-21.07.07_c7f123fd.jpg)
তদন্ত সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও অডিট অধিদপ্তরের এক জন করে প্রতিনিধিকে কমিটিতে যুক্ত করা হয়।
কমিটি গঠনের দীর্ঘ ২২ দিন পর গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ রোজ বুধবার কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়!
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটির ৩ জনের সাথে এটুআই-এর কয়েকজন অভিযুক্ত কর্মকর্তার গোপন যোগাযোগ ও প্রায় দেড় কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে!
এই অভিযুক্ত কর্মকর্তারা প্রধান অভিযুক্ত এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বন্ধু আনীর চৌধুরীর উপর সকল দায়ভার চাপিয়ে অন্য সকল কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়ার পায়তারা করছে।
লেনদেনের সাথে কমিটির সভাপতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ মেহেদী হাসানের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপদেষ্টা জনাব নাহিদ ইসলাম ্ তদন্তের শুরুতেই সতর্ক করে বলেছিলেন “তদন্ত কমিটিকে যাতে তদন্ত না করা লাগে।” তিনি সততার সাথে দ্রুত এই তদন্ত শেষ করার নির্দেশনাও প্রদান করেছিলেন।
শেষ পর্যন্ত উপদেষ্টার আশংকাকে সত্য প্রমাণ করে তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আসলো। এই অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে এটুআই-এর ১৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা সুস্পষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটি প্রধান ড. মেহেদির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে ফোনে কথা বলতে অস্বীকার করেন।
ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ার পর ইতিমধ্যেই একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল অনুসন্ধান করে অভিযোগের প্রমাণসহ রিপোর্ট প্রচার করেছে। অথচ তদন্ত কমিটি নাকি এই ধরনের কোন অভিযোগ খুঁজে পাচ্ছে না। বরং অভিযোগ সংগ্রহের নামে কালক্ষেপণের জন্য গত ১২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মুহাম্মদ মেহেদী হাসানের স্বাক্ষরে একটি বিজ্ঞপ্তি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে ইমেইল মারফত অভিযোগ প্রেরণ করতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী আইসিটি প্রকৌশলী পরিষদের সমন্বয়ক তালহা ইবনে আলাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমে বলেন, “তদন্ত কমিটির নিকট আমরা দুই দফায় লিখিত ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দাখিল করেছি। অভিযোগের তদন্ত, প্রমাণ ও অধিকতর সত্যতা নিরূপণের স্বার্থে আমরা বেশ কিছু ডকুমেন্ট এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় ও এটুআই প্রোগ্রামের ঘটনা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নাম্বার তদন্ত কমিটিকে প্রদান করলেও তারা আজ পর্যন্ত (১৫ সেপ্টেম্বর রাত এগারোটা) কারো সাথে যোগাযোগ করেননি। আমরা আশঙ্কা করছি তদন্ত কমিটি অনৈতিক সুবিধা নিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির মুখোমুখি না করে বরং বাঁচানোর পায়তারা করছে”।
এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মুহাম্মদ মেহেদী হাসানের বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তার কোন প্রকার বক্তব্য প্রকাশিত হলো না।