ডিসিবিএল’র সাবেক চেয়ারম্যান আলিমের ১০ কোটি টাকা আত্মসাত  : দুদকে অভিযোগ

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত কর্পোরেট সংবাদ জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক :  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অংশীদারিত্ব থাকা; শতবর্ষ পুরাতন ঐতিহ্যবাহী সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লি: এর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে আইন-বিধি ভঙ্গ করে, সমবায় মন্ত্রণালয় ও নিবন্ধকের অনুমোদন ছাড়া;ব্যাংক ভবনের দু’টি ফ্লোর বিক্রি করে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সমবায় অধিদপ্তরের ২০১৭-২০১৮,২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে অডিট রিপোর্টে ব্যাংকের ফ্লোর বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম দুনীর্তির তথ্য উঠে এসেছে।


বিজ্ঞাপন

সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান এর নেতৃত্বে সম্পাদিত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে-”সমবায় আইন-বিধি অনুসরন না করে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে ব্যাংকের ২য় তলার ২১০০ বর্গফুট তফসীলি অংশ তৎকালিন সভাপতি(আব্দুল আলীম) ও প্রিন্সিপাল অফিসার কর্তৃক চুক্তিপত্র সম্পাদন পূর্বক পজেশন বিক্রি করা হয়েছে। পজেশন হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি গোপনে সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রথমত মন্ত্রণালয় বা নিবন্ধকের অনুমতি ছাড়াই ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকায় একজন ব্যক্তির চাহিদা বিবেচনা করে যোগসাজসের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। তৎকালীন সভাপতি মো: আব্দুল আলীম ও প্রিন্সিপাল অফিসার মো: আতাউর রহমান পজেশন হস্তান্তর করে সমবায় ব্যাংকের ক্ষতি করেছে। তাছাড়া, এই পজেশন হস্তান্তরে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরন করা হয় নাই”।


বিজ্ঞাপন

রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে-”পুরাতন ঢাকার ব্যবসা বহুল এলাকায় যেখানে প্রতি বর্গফুট হিসাবে প্রায় ১৫০০০-২০০০০ টাকা পজেশন বিক্রি হয় সেখানে ৪৮০০ টাকা বর্গফুটে পজেশন হস্তান্তর হয়েছে।

পজেশন বিক্রি করে তৎকালীন সভাপতি মো: আব্দুল আলীম ও প্রিন্সিপাল অফিসার মো: আতাউর রহমান ব্যক্তিগত আর্থিক স্বার্থে ব্যাংকের তহবিলে বিক্রিত শর্তানুসারে ১.২৬ কোটি টাকার মধ্যে ১.১৭ কোটি টাকা ব্যাংকের তহবিলে জমা করেন। বিক্রির অবশিষ্ট ৯ লক্ষ টাকা জমা করা হয়নি।

১.২৬ কোটি টাকা পজেশন বিক্রি করা হলেও প্রকৃত মূল্য অনেক বেশি যে কারনে সমিতি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উক্ত পজেশন বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যাংক বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদন গ্রহন করা হয়নি। মন্ত্রণালয় ও নিবন্ধক মহোদয়ের অনুমোদন ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছাড়াই ব্যাংকের মূল্যবান সম্পদ হস্তান্তরের জন্যে ব্যাংকের তৎকালীন সভাপতি মো: আব্দুল আলীম ও প্রিন্সিপাল অফিসার মো: আতাউর রহমান দায়ী”।

রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে-” বিগত ২৩/৮/২০১৭ তারিখের ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যাংকের পুরাতন ভবনের ৪র্থ তলার ফ্লোরের দক্ষিণাংশের ১৩১৫ বর্গফুট জায়গা নুরুজ্জামান শিকদার এর নিকট পজেশন হস্তান্তর করে। ৩০ লক্ষ টাকায় ব্যাংকের মূল্যবান সম্পদ হস্তান্তর করা হয়েছে নিবন্ধকের অনুমোদন ছাড়াই।

সমবায় সমিতি আইন(সংশোধিত ২০০২ ও ২০১৩) এর ৩৫ ধারায় বলা হয়েছে- সমবায় সমিতির সম্পত্তি,যন্ত্রপাাতি বিক্রয়,বিনিময় ও হস্তান্তর পূর্বে নিবন্ধকের অনুমোদন গ্রহন বাধ্যতামূলক।

তাছাড়া,পল্লী উন্নয়ন সমবায় বিভাগের বিগত ১৭/৭/২০১২ তারিখের ২৪১(৯) নং স্মারক মূলে জারীকৃত পরিপত্রে সমবায় সমিতির সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। পুরাতন ঢাকার ব্যবসা বহুল এলাকায় যেখানে প্রতি বর্গফুট অঞ্চল ভেদে প্রায় ১০০০০-১২০০০ টাকায় পজেশন বিক্রি হয় সেখানে ২২০০ টাকা বর্গফুটে পজেশন হস্তান্তর হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও নিবন্ধক মহোদয়ের অনুমোদন ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছাড়াই ব্যাংকের মূল্যবান সম্পদ হস্তান্তরের জন্যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও নির্বাহী কর্মকর্তা দায়ী থাকবে”।

অন্যদিকে ১৫ অক্টোবর-২০২৪ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়েরকৃত এক অভিযোগে দাবি করা হয়েছে;আব্দুল আলীম চক্র ব্যাংকের দু’টি ফ্লোর বিক্রি করে অন্তত: দশ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। বাজার মূল্যের থেকে দশগুণ কম দাম দেখিয়ে ক্রেতার সাথে যোগসাজস করে টাকা আত্মসাত করেছেন।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে-আব্দুল আলিম নিয়ম বর্হিভূতভাবে ১৪/১০/২০১৬ সাল থেকে ৮/১০/২০২২ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। তিনি ব্যাংকের ঋণ খেলাপি। ঋণ খেলাপি হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা না থাকলেও তিনি চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। ব্যাংকের ঋণ খেলাপি মামলায় তিনি কয়েকদিন জেলও খেটেছেন।

সমবায় সমিতির টাকা লুটপাট করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঢাকাতে ফ্লাট,প্লট,গাজীপুরে মার্কেটসহ প্রচুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। যা তার জ্ঞাত আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আব্দুল আলীম ও তার পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয় পত্রের বিপরীতে অনুসন্ধান করলে অভিযোগের প্রমান পাওয়া যাবে বলে আবেদনে দাবি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য,কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে ১৯০৯ইং সনে ঢাকা নওয়াব পরিবারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে কৃষি ঋণ কার্যক্রম মূলত নেই, কেবল স্বর্ন বন্ধকি ঋণ কার্যক্রম চলছে, ব্যাংকের প্রচুর স্থাবর অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। যা সমবায়িদের কোন কাজে আসেনা। ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতরা লুটেপুটে খাচ্ছে।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচিত হয় না। জানা গেছে, ধামরাই, সাভার, কেরানীগঞ্জ, দোহার, নবাবগঞ্জ, মহানগর,গাজীপুর সদর,শ্রীপুর,কালিয়াকৈর,কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জে ব্যাংকের বর্তমান সদস্য সমিতির সংখ্যা ৪০৫টি।এরমধ্যে ইউনিয়ন বহুমূখী সমবায় সমিতি ৫৭টি, কৃষি সমবায় সমিতি ২৬৬টি,সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতি ৬৪টি ও অন্যান্য ১৮টি সমবায় সমিতি। কাগজে কলমে ৪০৫টি সদস্য সমিতি থাকলেও তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়না।

সব সময় আব্দুল আলিম গংরা সমবায় অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে পকেট কমিটি গঠন করেছেন। সমিতির রয়েছে প্রচুর স্থাবর অস্থাবর সম্পদ। ঢাকা ও গাজীপুর জেলায় ব্যাংকের ৩.৪৫ একর ভূসম্পত্তি রয়েছে।এরমধ্যে ঢাকা শহরে ০.২২৫০ একর, গাজীপুর সদর উপজেলায় ২.৪৩৫০ একর ,কালীগঞ্জ উপজেলায় ০.১৩০ একর ও ডেমরা থানায় ০.৬৯০০ একর জমি রয়েছে ।

এরমধ্যে ঢাকার ইসলামপুরে ব্যাংকের নিজস্ব ২টি বহুতল ভবন রয়েছে। একটিতে ফ্লোরের একাংশ ব্যাংকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়। বাকি ফ্লোর গুলো ভাড়া দেয়া হয়েছে। ভাড়া বাবদ ব্যাংক প্রতি মাসে মাত্র সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা পায়, অথচ ইসলামপুরের বাজার দর অনুযায়ী ভবন দুটির মাসিক ভাড়া হওয়া উচিত ২৫ লক্ষ টাকা। এখানেই রয়েছে চরম জালিয়াতি। ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ২ভাবে ভাড়া আদায় করা হয়।

একটি কাগজে কলমে ভাড়া দেওয়া হয় যা ব্যাংকে জমা হয়। বাকিটা অনানুষ্ঠানিক ভাবে নেয়া হয় যা ব্যবস্থাপনা কমিটির পকেটে যায়। এতে ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হয় তেমনি ব্যবস্থাপনা কমিটির পকেটও ভারী হয়।

মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাংক ও সাধারণ সমবায়ীগণ। নানাভাবে জাল-জালিয়াতী করে বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে ইচ্ছা করে লোকসান দেখানো হয়। যাতে করে সদস্য সমিতিকে লভ্যাংশ দিতে না হয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *