রাজধানীতে অবৈধ বিট কয়েনসহ গ্রেফতার ৪

অপরাধ

আজকের দেশ রিপোর্ট : রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন এলাকা হতে অবৈধ বিট কয়েন/ভার্চুয়াল মুদ্রা/ক্রিপ্টো কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের অন্যতম হোতা হামিমসহ ০৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।


বিজ্ঞাপন

এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিক এর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের গোয়েন্দারা জানতে পারে যে, একটি চক্র অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রা/ক্রিপ্টো কারেন্সি/বিট কয়েন লেনদেনের সাথে জড়িত।

এছাড়া তারা ডার্ক সাইট হতে ভার্চুয়াল মুদ্রা/ক্রিপ্টো কারেন্সি/বিট কয়েন ব্যবহার করে পর্ণগ্রাফি ক্রয় ও অর্থের বিনিময়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার ২০ জুন, বিকাল ৪ টার সময় র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন মাজার রোডস্থ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ০২ টি ল্যাপটপ, ০২ টি ডেভিট কার্ড সহ নিম্নোক্ত ০৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতার কৃত রা যথাক্রমে ঃ

হামিম প্রিন্স খাঁন (৩২), জেলা- ফরিদপুর। রাহুল সরকার (২১), জেলা- ফরিদপুর। সঞ্জিব দে @ তিতাস (২৮), জেলা- ফরিদপুর। এবং মোঃ সোহেল খান (২০), জেলা- ফরিদপুর।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা ভার্চুয়াল জগতে বা ইন্টারনেটের সাইট হতে একাউন্ট করে ভার্চুয়াল মুদ্রা/ক্রিপ্টো কারেন্সি/বিট কয়েন ক্রয়/বিক্রয় করে থাকে।

তারা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে বাংলাদেশী বেশ কিছু অসাধু ডোমেইন হোল্ডার/ব্যবসায়ী চক্রের সাথে অর্থ লেনদেন করে। গ্রেফতারকৃতরা ভার্চুয়াল জগতে অবৈধ ডার্ক পর্নোসাইট হতে পর্নোগ্রাফি ক্রয় করে।

তারা পর্নোগ্রাফিগুলো অর্থের বিনিময়ে ছড়িয়ে দেয়। গ্রেফতারকৃতরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্নভাবে ভার্চুয়াল মুদ্রা/ক্রিপ্টো কারেন্সি/বিট কয়েন অত্যন্ত লাভজনক বলে প্রচারণা চালায়।

উক্ত প্রচারণার মাধ্যমে যুবক যুবতীদের অবৈধ লেনদেনে প্রলুব্ধ করে থাকে।

আগ্রহীদের তারা অর্থের বিনিময়ে ক্রিপ্টো কারেন্সি প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এছাড়া তারা বেশ কিছু আগ্রহীদেরকে প্রলুব্ধ করেছে। তারা তাদের কাছ থেকে নেয়া কোটি কোটি- টাকা বিনিয়োগ করেছে।

গ্রেফতারকৃতরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রুপের সাথে জড়িত যেখানে বিট কয়েন ব্যবসায় আগ্রহীরা যুক্ত রয়েছে। গ্রুপের কয়েক হাজার সদস্য রয়েছে। তারা প্রতি মাসে প্রায় ১.৫ কোটি টাকা লেনদেন করে বলে জানা যায়।

এ চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত হামিম প্রিন্স খাঁন এবং বাকীরা তার সহযোগি।

যেভাবে অবৈধ হ্যাকিং ও বিট কয়েন ক্রয়-বিক্রয়ের জগতে তাদের প্রবেশ

গ্রেফতারকৃত হামিম প্রিন্স খাঁন ২০১৩ সালে ফরিদপুর এর একটি কলেজ হতে ইংরেজীতে বি.এ (সম্মান) পাশ করে। পরবর্তীতে সে ইউটিউবে ভিডিও দেখে কম্পিউটারের উপর পারদর্শীতা লাভ করে। সে ২০১৩ একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কম্পিউটারের উপর দক্ষতা লাভ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল।

পরবর্তীতে সে ক্রিপ্টো কারেন্সির উপর দক্ষতা লাভ করে প্রায় ৫০ এর অধিক জনকে বিট কয়েন লেনদেন প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

বিট কয়েন ছাড়াও সে লিটকয়েন, ডগকয়েন, ইথারিয়াম, ব্রাস্ট, ন্যনো ইত্যাদি লেনদেনের সাথে জড়িত।

সে মূলত যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ কার্যক্রম চালিয়ে দেশের বিপুল পরিমান অর্থ পাচার করে আসছিল।

তার বিরুদ্ধে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। সে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে অন্যের ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করে বিট কয়েন ক্রয় করে এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ভার্চুয়াল জগতে তার ১৫/১৬টি ওয়ালেট রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত রাহুল সরকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার হামিমের সাথে পরিচয় হয়।

পরবর্তীতে হামিমের মাধ্যমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে ২০২০ সালের শেষের দিকে সে বিট কয়েন লেনদেনের সাথে জড়িত হয়। তার “Binance Wallet” সহ বেশ কয়েকটি ওয়ালেট রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত সঞ্জিব দে @ তিতাস ফরিদপুর এর স্থানীয় একটি কলেজে অধ্যয়নরত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামিমের সাথে পরিচয়ের পর থেকেই হামিম তাকে লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিট কয়েন লেনদেনে উদ্ধুদ্ব করে।

সে হামিমের কথায় উদ্ধুদ্ব হয়ে নিজের নামে বিটকয়েনে ‘Cloniex Wallet’ & ‘BetRex Wallet’ নামে একাউন্ট খোলে অর্থ লেনদেন করে আসছিল।

মোঃ সোহেল খান মূলত Software Developing, Web Developing, Graphics Design এর মাধ্যমে অল্প কিছু অর্থ উপার্জন করত।

পরবর্তীতে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে চটকাদার বিজ্ঞাপনে লোভে পরে হামিমের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে বিটকয়েনে নিজের নামে ওয়ালেট খোলে এই অবৈধ লেনদেন করে আসছিল। অনলাইনে তার ‘binance Wallet’ সহ বেশ কয়েকটি ওয়ালেট রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।