বিসিক কর্মকর্তা কর্মচারীর সীমাহীন দূর্নীতির কারণে ডুবতে বসেছে

অপরাধ অর্থনীতি এইমাত্র

বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান সাবেক ইপসিক স্বাধীনতা পরবর্তীকালের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নামের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের একমাত্র পোষক প্রতিষ্ঠানটি আজ ডুবতে বসেছে। জাতির জনকের প্রাণের প্রতিষ্ঠানটি আজ স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকপ্রীতি, দূর্নীতিবাজ, অযোগ্য আর অদক্ষদের স্বর্গে পরিণত হয়েছে। বিসিকের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনি¤œ সকল পর্যায়ে দূর্নীতি তার শিকড় বিস্তার করেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান জনাব মোস্তাক হাসান এন ডি সির ছত্র ছায়ায় মামুন, ¯িœগ্ধা রায়, তারানা আর রাকিবরা ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছে। বিসিকের উত্তরাস্থ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোঃ সফিকুল আলমের বিরুদ্ধে পরিচালক (অর্থ) এর স্বাক্ষর জাল করে সম্মানী ভাতা উত্তোলন, গাড়ি মেরামত ও জ্বালানী খরচের ভূয়া বিল দাখিল, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ভ্রমণ ভাতা উত্তোলন সহ বিভিন্ন খরচের ভূয়া বিলের মাধ্যমে সি আই ডি ডি প্রকল্পের ২১,৩৭,০৩৪/- (একুশ লক্ষ সাতত্রিশ হাজার চৌত্রিশ) টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ প্রমাণিত হলে গত দেড় বছরেও তার বিরুদ্ধে বাস্তবে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি যাহার স্মারক নং-৩৬.০২.০২৭.০০০০. ০৪৫.২০১৭/২৪১৬(৩) তারিখে ২০/১০/২০১৯ইং (বিসিক সচিব মোস্তাক আহমেদ স্বাক্ষরিত)। বর্তমানে দূর্নীতিগ্রস্থ চেয়ারম্যানের এলাকা প্রীতির কারণেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের সহ অন্যান্য ব্যবস্থা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিসিকের একজন পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে প্রাথমিক ভাবে সমস্ত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে মর্মে উক্ত কমিটি দাখিলকৃত প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়। উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জরী করা হয়। কিন্তু চেয়ারম্যানের নানান অপকর্মের দোসর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আজ অবধি কোন বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়নি। অধিকিন্তু ঐ প্রমাণিত দূর্নীতিবাজ অধ্যক্ষকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত “প্রিজম” প্রকল্পের পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বও প্রদান করা হয়েছে। প্রিজম প্রকল্পের প্রাক্তন প্রকল্প পরিচালক (বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত) সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের বিরুদ্ধে টেন্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে দায়েরকৃত বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। বর্ণিত মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজনের প্রতি বর্তমান চেয়ারম্যানের এলাকাগত প্রীতির কারণে মামলাটি নিষ্পত্তি বাঁধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। যে কারণে দীর্ঘদিনেও বর্ণিত বিভাগীয় মাামলা গুলির নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করার লক্ষে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোঃ সফিকুল আলম, পরিচালক (অর্থ) বাবু স্বপন কুমার ঘোষ, বিসিকের সচিব মোঃ মফিজুর রহমান, বিসিকের প্রশাসন শাখার এজিএম ¯িœগ্ধা রায়, গোপনীয় শাখার কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান, চেয়ারম্যানের ডান হাত হিসেবে পরিচিতি পি এস মামুনুর রহমানের সাথে আমাদের প্রতিনিধি যোগাযোগ করে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা সকলেই এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিসিকের পরিচালক (প্রকল্প) আতাউর রহমান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে টেন্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সিঙ্গেল টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ বরাদ্দ দিয়ে নিজে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সাথে সাথে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতির অভিযোগ করছেন বিসিকের ক্ষতিগ্রস্থ ঠিকাদারেরা। জনাব সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অনৈতিক ও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে একাধিক সরকারী গাড়ি ব্যবহার সহ নানাবিধ অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাক হাসান এন ডি সি বিসিকে যোগদান করেই এলাকা প্রীতির মাধ্যমে মামুন, স্নিগ্ধা রায়, তারানা ও রাকিবদের সমন্বয়ে বিসিক প্রশাসনে ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছেন। সরকারী নিয়ম নীতির কোন কোন তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামাফিক ভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। নির্যাতন ও হয়রানীমূলক বদলীর মাধ্যমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন। করোনাকালীন সময়েও প্রায় ৪০০ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে হয়রানীমূলকভাবে বদলী করা হয়েছে। এতে করে ভ্রমণ বিল বাবদ কমপক্ষে সরকারের অর্ধ কোটি টাকার অপচয় হয়েছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। করোনাকালীন সময়ে হয়রানীমূলক বদলীর শিকার হয়ে রংপুরের ভারপ্রাপ্ত ডি জি এম তামান্না রহমান কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে করুন মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনার সময়ে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদানে ব্যর্থতার কারণে ইতিমধ্যেই কয়েকজন কর্মকর্তাকে আক্রশের বসে অন্যায়ভাবে চাকুরীচ্যুত করারও অভিযোগ রয়েছে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। চাকুরী হারানো কর্মকর্তাগণ ইতিমধ্যে মোস্তাক হাসান এন ডি সি এর অন্যায় ও অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চ আদালতে রীট মামলা দায়ের করেছেন। বিসিক চেয়ারম্যানের অন্যায় সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্থদের করা মামলা চালাতে এক দিকে সরকারের প্রচুর অর্থের অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে বিসিকের আইন শাখা তাদের জন্য জরুরী মামলা সমূহ পরিচালনায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অতিসম্প্রতি সম্পূর্ণ বেআইনী এবং অমানবিক পন্থায় বিসিকের অবসর ভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা স্থগিতের কার্যক্রম গ্রহণ করে অসহায় নিরুপায় কয়েকশত ভুক্তভোগীর নিদারুণ আর্থিক ও সামাজিক সংকট সৃষ্টি করেছে। কোন কর্মচারীকে একবার কোন আর্থিক সুবিধা দেয়া হলে তা রহিত করা যায় না এটাই দেশে প্রচলিত সাধারণ বিধি। দেশে প্রচলিত সাধারণ বিধি ভঙ্গ করে সম্পূর্ণ অমানবিকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পত্রের মনগড়া ব্যাখ্যা করে কয়েকশত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে বর্তমান বিসিকের চেয়ারম্যান ও আজ্ঞাবহরা। ইতিমধ্যে তিন শতাধিক ভুক্তভোগী উচ্চ আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি হিসেবে উপযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমে “উকিল নোটিশ” জারী করেছেন।

নির্যাতন ও হয়রানীমূলক কোন অফিস আদেশ বা কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ বিদ্যুৎ গতিতে জারি হলেও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্রাচুইটির টাকা প্রাপ্তির ক্ষেত্র সম্ভুক গতি লক্ষনীয়। অবসভোগীদের ফাইল অহেতুক বছরের পর বছর আটকিয়ে রাখার ডজন ডজন নজির রয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে মামুন-রাকিব গংরা অবসরপ্রাপ্তদের প্রাপ্য গ্রাচুইটির মোট অর্থের শতকরা দশ ভাগ উৎকোচ হিসেবে আদায় করে থাকে। উক্ত টাকা না দিলে মামুন-রাকিব গংরা নানান টাল বাহানা করে ফাইল আটকিয়ে রাখে। অনুসন্ধানকালে জানা গেছে অবসরপ্রাপ্তরা সমগ্র চাকুরীকাল শেষে অর্জিত ছুটি থাকা সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১২ মাস অবসর উত্তর পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি প্রাপ্য হন। অর্জিত ছুটি পাওয়া সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ লাম্প গ্রান্ট হিসেবে প্রাপ্য হয়ে থাকেন। এছাড়া বিসিকের চাকুরীজীবিরা তাদের চাকুরীকালীন সময়ে প্রাপ্ত মাসিক বেতনের শতকরা ১০ ভাগ অর্থ সিপি ফান্ডে বাধ্যতামূলক এবং অতিরিক্ত হিসেবে আরও ২.৫% টাকা জমা করেন যা চাকুরী শেষে সুদসহ ফেরত পান। সেই সাথে সিপি ফান্ডে সরকারীভাবে জমাকৃত আহরিত মূল বেতনের ১০% টাকাও সুদসহ পেয়ে থাকেন। এছাড়াও বিসিকের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী প্রতি এক বছর চাকুরীর জন্য শেষ আহরিত মূল বেতনের দুই মাসের সমপরিমাণ টাকা গ্রাচুইটি হিসেবে প্রাপ্য হয়ে থাকেন। অনুসন্ধানকালে এই প্রতিনিধি অবগত হন যে, সর্বশেষ পাওনা এই গ্রাচ্যুইটির টাকা পরিশোধের আগে বিসিকের গোপনীয় শাখার মতামতের জন্য ফাইল পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্টদের কাছে বিসিকের কোন পাওনা নাই এবং তার নামে কোন বিভাগীয় মামলা নাই মর্মে প্রত্যায়ন সহ সুপারিশ ব্যতীত কোন অবসরপ্রাপ্তকে তার সর্বশেষ পাওনা গ্রাচ্যুইটির টাকা পরিশোধ করা হয় না। বাংলাদেশে প্রচলিত বিধি মতে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর চাকুরী সমাপ্তির পরে অবসর উত্তর ছুটি ভোগ কালীন সময়ের মধ্যেই তার নামে কোন মামলা বা নিরীক্ষা আপত্তি ইত্যাদি থাকলে তা সমাধান পূর্বক ছুটি শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে পাওনা পরিশোধের বাধ্য বাধকতা রয়েছে। কোন কারণেই একজন একজন অবসরপ্রাপ্তকে হয়রানী বা প্রাপ্ত টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব করা যাবে না বলে বিধান থাকলেও বিসিকের মামুন-রাকিব সিন্ডিকেট চেয়ারম্যানের আস্কারায় সে সব বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে গোপনীয় শাখায় মাসের পর মাস এমন কি বৎসরাধীক কাল ফাইল আটকিয়ে চেয়ারম্যান, ডাইরেক্টর, প্রশাসনের এজিএম সহ অনান্যদের নামে উৎকোচ আদায় করে থাকে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান কে জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়নের অগ্রদূত, একমাত্র রাষ্ট্রীয় পোষক প্রতিষ্ঠান, জাতির জনকের স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ জরুরী বলে অভিজ্ঞ জনের মনে করেন। দক্ষ ও অভিজ্ঞ পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমে বিসিক পরিচালিত হলে অতি অল্প সময়েই দেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। এর ফলে একদিকে যেমন বেকারত্ব সমস্যার সমাধান হবে অন্যদিকে এ খাতে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানীর দ্বারা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে বলে অভিজ্ঞজনেরা মনে করেন।