সুমন হোসেন, অভয়নগর (যশোর) : যশোরের অভয়নগর উপজেলার পল্লীতে দিনে-দুপুরে নিজ বাড়ির উঠান থেকে সাড়ে চার বছরের এক শিশুকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপহরণকারীরা শিশুটিকে অপহরণ করে বাড়িতে চিঠি লিখে ফেলে রেখে যায়। ঐ দিনেই পরিবারের সদস্যরা মাওয়া ঘাটে গিয়ে অপহরণকারীদের আড়াই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে এনেছে বলে পরিবার দাবি করেছে। তবে এ ঘটনায় থানায় কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি। ঘটনাটি, সোমবার বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার বর্ণি গ্রামের ইসলাম মোল্যার বাড়িতে ঘটেছে। এদিন বেলা ১১ টার দিকে ইসলাম মোল্যার সাড়ে চার বছরের শিশু পুত্র ইব্রাহিমকে বাড়ির উঠান থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে পরিবারের দাবি। ঐ দিনই গভীর রাতে মাওয়া থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পর থেকে শিশুটির মা শয্যাশায়ী বলে জানাগেছে।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে অভয়নগর উপজেলার বর্ণী গ্রামে ইসলাম মোল্যার বাড়িতে গেলে পরিবারের সদস্যরাসহ প্রতিবেশীরা সকলেই অপহরণের বর্ণনা দেন। শিশুটির পিতা ইসলাম মোল্যা জানান, তিনি নওয়াপাড়া বাজারের ভৈরব নদীর ওয়াকওয়ে সংলগ্ন স্থানে পান-বিড়ির দোকান দিয়ে কোনমতে সংসার চালান। তার মধ্যে তার বড় মেয়ে গুরুত্বর অসুস্থ্য অবস্থায় চিকিৎসাধীন। সোমবার সকালে তিনি দোকানে চলে আসেন। বেলা তিনটার দিকে তাকে বাড়ি থেকে ফোন করে দ্রুত বাড়িতে ফিরতে বলা হয়। বাড়ি ফিরে তিনি জানতে পারেন তার একমাত্র ছেলেকে অপরণ করা হয়েছে। বাড়িতে তখন এলাকার হাজারও মানুষের ভীড়। পরে তিনি অপহরণকারীদের রেখে যাওয়া চিঠিটি পান। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় পাথালিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনিও চিঠিটি সংগ্রহ করেন। চিঠিতে পুলিশকে জানালে সন্তানকে হত্যা করার হুমকি দেয়া হয়। এ কারনে পুলিশের সহায়তা না নিয়ে তিনি একমাত্র পুত্রকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে তার স্ত্রী ও শিশুটির বড় মামা চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী আড়াই লাখ টাকা নিয়ে মাওয়া ঘাটে যান। সেখান থেকে রাত ১০ টার দিকে অপহরণকারীদের আড়াই লাখ টাকা দিয়ে শিশু পুত্রকে উদ্ধার করা হয়।
ইসলাম মোল্যা দাবি করেন, ঘটনার ৪/৫ দিন আগে একটি কালো রঙের মাইক্রো এসে আমার বাড়ির সামনে থামে। গাড়ি থেকে দু’জন অপরিচিত লোক নেমে এসে পানি খেতে চায়। তাদের পানি খেতে দিলে পানি খেতে খেতে তারা আমার ছেলে –মেয়ের খোঁজ খবর নেয়।
এ ব্যাপারে শিশু ইব্রাহিমের বড় মামা আবু সুফিয়ানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, পুলিশের সহায়তা নিলে যদি একমাত্র ভাগ্নেকে হারাতে হয় এ কারনে অপহরণকারীদের চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্ধারের চেষ্টা করি। ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় বোনকে সাথে নিয়ে মাওয়া ঘাটে যাই। এ সময় একটি প্রাইভেট কার আমাদের লক্ষ করে। প্রাইভেট কার থেকে দু’জন হেলমেট পরা ব্যাক্তি নেমে এসে তাদের দাবিকৃত তিনলাখ টাকা এনেছি কিনা জানতে চান। আমরা আড়াই লাখ টাকা জোগাড় করতে পেরেছি বলে কাকুতি মিনতি করলে তারা টাকাগুলো নিয়ে প্রাইভেট কার থেকে শিশুটিকে বের করে আমাদের হাতে দিয়ে প্রাইভেট কার নিয়ে দ্রুত চলে যায়।
এ ব্যাপারে অপহরণের শিকার শিশু ইব্রাহিমের শয্যাশায়ী মা বিউটি বেগমের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি অসুস্থ্য অবস্থায় বিছানায় শুয়ে কোন মতে বলেন, আমার ছেলে বেলা ১১ টার দিকে উঠানে বসে আইসক্রিম খাচ্ছিল। দশ মিনিট পর তাকে উঠানে না দেখে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকি। এক পর্যায়ে উঠানে অপহরণকারীদের রেখে যাওয়া চিঠিটি পাই। পরে ধার দেনা করে আড়াইলাখ টাকা ম্যানেজ করে ভাইকে সাথে নিয়ে মাওয়া ঘাট থেকে আমার একমাত্র পুত্রকে উদ্ধার করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জীবনের চেয়েতো আর টাকা বড় না। তাই পুলিশের সহায়তা নেয়নি। যদি ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলে!
এ ব্যাপারে পাথালিয়া ক্যাম্পের আইসি এসআই শামছুর রহমানের সাথে কথা বললে, তিনি বলেন বিষয়টি সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে পারবোনা। তারা ঘটনা আমাদেরকে জানায়নি। ঘটনার দিন ক্যাম্পে ফেরার পথে রাস্তার পাশে ইসলাম মোল্যার বাড়িতে লোকজনের জটলা দেখে গাড়ি থামিয়ে ওই বাড়িতে যাই। তারা দাবি করে তাদের শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে। চিঠিটিও দেখায়। ঘটনাটি আমি ওসি স্যারকে জানাই। এবং বিভিন্ন দিকে খোঁজ খবর নিতে থাকি। পরে রাতে জানতে পারি তারা শিশুটিকে ফিরে পেয়েছে। তারা কোন অভিযোগ না করায় এবং পুলিশের সহযোগিতা না নেয়ায় এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।
এদিকে স্থানীয়রা এ অপহরণের মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।