বিআইডব্লিউটিএ এর নওয়াপাড়া নদী বন্দর এলাকার ১শ’ ৬০টি ঘাটের ৬০ টিই অবৈধ!

Uncategorized অপরাধ

সুমন হোসেন, (যশোর) ঃ
যশোরের জেলার অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া নৌবন্দরে ১শ’ ৬০ টি ঘাটের মধ্যে ৬০ টি ঘাটই অবৈধ। ভৈরব নদের প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে জেটি নির্মাণ করায় কোথাও কোথাও পলি জমে নাব্যতা কমে যাচ্ছে।
ফলে একদিকে যেমন নৌ-দুর্ঘটনা ঘটছে, অপরদিকে জাহাজ মালিক ও আমদানীকারক ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত থাকে। এসব অবৈধ ঘাটের কারণে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নওয়াপাড়া নৌ বন্দর কতৃপক্ষ এসব ঘাটের তালিকা ঘাট সংশ্লিষ্টদের উচ্ছেদের জন্য নোটিশ করেছে।
নওয়াপাড়া নদী বন্দর সূত্রে জানা গেছে, নওয়াপাড়া নদী বন্দরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ঘাটের কারণে দিনের পর দিন নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে।
যে কারনে ঘন ঘন জাহাজ ডুবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমদানীকারকেরা। সর্বশেষ গত ৪ মার্চ জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। মোংলা বন্দর থেকে আমদানি করা ১ হাজার ১শ’ ৬০ মেট্রিক টন কয়লাবাহী জাহাজ নওয়াপাড়ায় পৌছানোর পর ডুবে যায়।

নওয়াপাড়া নদী বন্দর সূত্রে জানা যায়, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার মজুত খাল থেকে যশোর সদর উপজেলা আফরা ঘাট পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার ভৈরব নদীর তীরবর্তী এলাকা নিয়ে গঠিত নওয়াপাড়া নদী বন্দর।
নদীর পশ্চিম তীরবর্তী বরাবর যশোর খুলনা মহাসড়ক হওয়ায় বেশিরভাগ ঘাট পশ্চিম তীরে গড়ে উঠেছে।
মোংলা বন্দর থেকে নদী পথে এই বন্দরে কার্গো, বাজ, বলগেট ও জাহাজ ইত্যাদি নৌযানের মাধ্যমে সার, কয়লা, সিমেন্ট ও খাদ্যশস্য সহ নানা ধরনের মালামাল আমদানি ও রফতানি হয়।

নওয়াপাড়া নৌ বন্দর সূত্রে আরও জানা গেছে, নওয়াপাড়া নদী বন্দর টিতে ছোট বড় মিলে মোট ১শ’ ৬০ টি ঘাট রয়েছে। তারমধ্যে ৬০টি ঘাট অবৈধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে নওয়াপাড়া নদী বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১কোটি ৭২ লাখ ৩৭ হাজার ৬শ’ ৯২ টাকা। ২০২১-২২ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬শ’ ৪৪ টাকা।

মহামারী করনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারনে নওয়াপাড়া নদী বন্দর এলাকা থেকে ২০২০-২১ অর্থ বছরের থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৬৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯শ’ ৫২ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

নওয়াপাড়া নদী বন্দর কতৃপক্ষের রাজস্ব আদায় করে তা নওয়াপাড়া জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়।
তবে বন্দর এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ ঘাট গুলো নিয়ম অনুযায়ী বৈধতার মাধ্যমে চলমান থাকলে সরকারের আরো বেশি রাজস্ব আয় হতো। এ কারনে অবৈধ ঘাট গুলোর বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো সময়ের দাবী হয়ে পড়েছে।

নওয়াপাড়া নদী বন্দরে অবস্থিত অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা ঘাট গুলো হলো, সরকার ট্রেডার্স, আলম ব্রাদার্স, আইয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মাহবুব টুলু, ফেরদৌস ফারাজী, মোস্তফা ঘাট, মিজান শেখ, তীস্তা সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, সীতার ঘাট, কাজি হামিমুল কাদির (বাবু মেম্বার), রবিন বিশ্বাস ঘাট, মো. হাসান ঘাট, সাহারা এন্টারপ্রাইজ ঘাট, দি গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ (রাজঘাট), নওয়াপাড়া ট্রেডিং (রাজঘাট), ব্রাইট ঘাট, লুৎফর রহমান ও অলিয়ার রহমান ঘাট, এস এল এন্টারপ্রাইজ ঘাট, মোল্যা ব্রাদার্স ঘাট, তালতলা স্টোন ঘাট, এস এ এন্টারপ্রাইজ ঘাট, মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড ঘাট, বিসমিল্লাহ ঘাট, তামিম এন্টারপ্রাইজ (চাপাতলা ঘাট), আফসার মোল্লা ও কাছের মোল্লা ঘাট, রেজোয়ান, লবন মিল ঘাট (মহাকাল), এস এ এন্টারপ্রাইজ (চেঙ্গুটিয়া ঘাট), শেখ ব্রাদার্স (চেঙ্গুটিয়া), বিদ্যুৎ ঘাট, দাদা ভাই ঘাট, দীপু ষ্টোন প্রাইভেট লিমিটেড, এ আর সিমেন্ট মিলস লিমিটেড, মক্কা সিমেন্ট ঘাট, বেগের ঘাট, রাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, মমতাজ নাসরিন (ডলার ঘাট), এ রহমান পরশ অটো রাইস মিল লিমিটেড, সরকার ট্রেডার্স (মশরহাটি), জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন, বিশ্বাস ঘাট (মালোপাড়া ঘাট), মুন ট্রেডার্স, ফজলু এন্টারপ্রাইজ, হাসিব ফারাজী, বাঘা সাহেবের ঘাট, ভৈরব ঘাট, কামরুল মোল্লা, হাসান ফারাজী ও হোসেন ফারাজী, রফিক গাজী, শহিদুল গাজী, গাজীর ঘাট, জিয়া গাজী, ইসলাম এন্ড সন্স, মাস্টার ট্রেডিং -৩, অধিকারী ট্রেডার্স, ফারাজী নাসির উদ্দিন, নুরুল আমিন, বিজয় কৃষ্ণ আশ্রাম ঘাট, চাকলাদার ষ্টোন হাউজ আলী আকবার বাবু।
জানতে চাইলে নওয়াপাড়া নদী বন্দরের উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ আজকের দেশ কে জানান, নওয়াপাড়া নদী বন্দরে অবস্থিত মোট ১শ’ ৬০ টি ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি ঘাটই অবৈধ।
আমরা অবৈধ ঘাটের তালিকা তৈরি করে তাদের উচ্ছেদের জন্য নোটিশ করেছি। অল্প সময়ের মধ্যে বন্দর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *